আগে তেষ্টার জল, পরে তো সাঁতার!

কলকাতা, বিধানননগর-সহ সব পুরসভা ও পুরনিগমকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুর এলাকাগুলি থেকে সুইমিং পুল তৈরির আবেদনে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা হচ্ছে।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০১
Share:

পুর এলাকায় পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত না থাকায় ক্ষুব্ধ শহরের বাসিন্দারা। ছবি: সংগৃহীত।

আগে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক। সাঁতারের জলের ব্যবস্থা পরে দেখা যাবে।

Advertisement

কলকাতা, বিধানননগর-সহ সব পুরসভা ও পুরনিগমকে এই মর্মে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। নগরোন্নয়ন দফতরের কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পুর এলাকাগুলি থেকে সুইমিং পুল তৈরির আবেদনে রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা হচ্ছে। বহু জায়গায় ঝাঁ চকচকে সুইমিং পুল তৈরি হচ্ছে, অথচ দেখা যাচ্ছে, সেই সব পুর এলাকায় পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত না থাকায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। বেহালায় সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, জনসাধারণের ব্যবহার্য জলাশয়কেই সুইমিং পুল করার চেষ্টা হয়েছে। এমন সব পরিস্থিতি সামলাতেই এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর।

নগরোন্নয়ন দফতরের কাছে উন্নয়নমূলক কোনও প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, তা-ও নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পানীয় জল, রাস্তা, আলোর ব্যবস্থা, জঞ্জাল অপসারণ, জলাশয় সংরক্ষণ, সবুজ এলাকার সৌন্দর্যায়ন এবং শ্মশান ও কবরস্থানের উন্নয়ন— এই সাতটি বিভাগের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। সুইমিং পুল, কমিউনিটি হল তৈরির প্রস্তাবের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার বলে জানানো হয়েছে। যদি দেখা যায়, সুইমিং পুল বা কমিউনিটি হলের প্রয়োজন নেই, তবে প্রস্তাব বাতিল করা হবে। শুধু নতুন প্রস্তাবের ক্ষেত্রেই নয়, যে সব প্রকল্পের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে, সেগুলিও আতসকাচের তলায় আছে বলে দফতর সূত্রের খবর। নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাতটি বিভাগকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ, আমরা দেখেছি, প্রয়োজনীয় পুর পরিষেবার থেকে অনেক ক্ষেত্রেই কমিউনিটি হল বা সুইমিং পুল তৈরিতে বেশি উৎসাহ দেখা যাচ্ছে।’’

Advertisement

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সেই নির্দেশ। —নিজস্ব চিত্র।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতা পুরসভাও একটি নির্দেশিকা জারি করে কাউন্সিলরদের পার্ক-বিলাসে রাশ টেনেছে। কেন্দ্রীয় পুর ভবনের অনুমতি ছাড়া সংযুক্ত এলাকায় আর পার্ক তৈরি করা যাবে না বলেই নির্দেশ কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের। যেখানে-সেখানে পার্ক তৈরি নিয়ে কাউন্সিলরদের একাংশের মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহ দেখেই ওই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কলকাতার পুর আধিকারিকদের একাংশ এও জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর কাউন্সিলরদের তরফে সুইমিং পুল ও কমিউনিটি হলের প্রস্তাব জমা পড়ে। পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘সুইমিং পুলের প্রস্তাব প্রায়ই আসে। সব সময়ে সেটা পাশ করা সম্ভব হয় না। এই নির্দেশের পরে আরও কড়াকড়ি হবে বিষয়টি নিয়ে।’’

তবে শুধু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানোই নয়, কোন প্রকল্প কবে শুরু হয়েছে, কবে শেষ হচ্ছে, তার খরচ কত— এই সব তথ্য সম্বলিত একটি বোর্ড প্রকল্পস্থানে টাঙয়ে দেওয়ার জন্য পুরসভাগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে নগরোন্নয়ন দফতর। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, অনেক সময়েই কোন প্রকল্প কোন পুরসভা করছে, তার খরচ কত, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকেরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকেন। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আনতে চাইছে সরকার। নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রকল্পের খরচ নিয়ে একটা প্রশ্ন ওঠে মাঝেমধ্যেই। সে ব্যাপারে যাতে কোনও ধোঁয়াশা না থাকে, তাই এই নির্দেশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন