অভিযোগ, সরবরাহকারী সংস্থাকে টাকা মেটাচ্ছে না স্বাস্থ্য দফতর। আর তারই জেরে পেসমেকারের জোগান বন্ধ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে।
উচ্চ রক্তচাপে বেশ কিছু দিন ভুগছিলেন গৌরমোহন ঘোষ। হঠাৎ বুকের বাঁ দিকে চিনচিনে ব্যথা। এসএসকেএমের কার্ডিওভাস্কুলার বিভাগের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে পরামর্শ দিলেন, দ্রুত অস্ত্রোপচার করে পেসমেকার বসাতে হবে। জুনের শেষ সপ্তাহে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহেও অস্ত্রোপচার হয়নি। চিকিৎসকেরা পরিবারকে জানিয়েছেন, পেসমেকার জোগান হলে অস্ত্রোপচার হবে।
মুর্শিদাবাদের সফিকুল ইসলাম হার্টের সমস্যা নিয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ভর্তি হয়েছিলেন এনআরএস হাসপাতালে। দ্রুত অস্ত্রোপচার জরুরি হলেও পেসমেকার না থাকায় আটকে রয়েছে অস্ত্রোপচার।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌরমোহনবাবু কিংবা সফিকুল সাহেব ব্যতিক্রম নন। যে বহুজাতিক পেসমেকার প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে স্বাস্থ্য দফতর পেসমেকার কেনে, ঠিক সময়ে টাকা না মেটানোয় ওই সংস্থা জোগান কমিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা জানান, রাজ্যের পেসমেকার বসানোর সব চেয়ে বেশি অস্ত্রোপচার হয় এসএসকেএমে। সেখানে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। এনআরএস হাসপাতালে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ। টাকার অঙ্কের পরিমাণ কম হলেও একই ছবি আরজিকর এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পেসমেকারের জোগান পর্যাপ্ত না হওয়ার জেরে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। সরকারি হৃদরোগ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই মেনে নিয়েছেন, এ ভাবে পেসমেকার না বসিয়ে ফেলে রেখে বহু রোগীরই শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
এসএসকেএমের হৃদরোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডল বলেন, ‘‘রোগীর চাপ এখানে সব চেয়ে বেশি। প্রতিদিন গড়ে সাত জন রোগী পেসমেকার বসানোর জন্য ভর্তি হন। চাহিদা অনুপাতে জোগানের অভাব রয়েছে।’’ হৃদরোগ চিকিৎসক ভুবন মাঝি বলেন, ‘‘কেন পেসমেকারের জোগান দেরিতে হচ্ছে বলতে পারব না। তবে, রোগীর চাহিদার অনুপাতে পর্যাপ্ত জোগান নেই।’’
সরকারি হাসপাতালে পেসমেকার সরবরাহকারী ওই বেসরকারি সংস্থার তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা জোগান দিতে পারছেন না। সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘পেসমেকারের আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জোগান দিতে হয়। কিন্তু যন্ত্র পাঠিয়ে দেওয়ার পরে টাকা কবে পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে কিছু জানা যায় না। ফলে সমস্যা তৈরি হয়। ঋণ বা়ড়তে থাকার কথা বারবার সরকারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনও উদ্যোগী না হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে।’’ ওই কর্তার বক্তব্য, স্টেট ইলনেস অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড থেকে টাকা কবে পাওয়া যাবে, প্রশাসনের তরফ থেকে সে বিষয়েও কিছু জানানো হচ্ছে না। বহুজাতিক সংস্থা হওয়ায় যে কোনও গ্রাহকের ঋণে বেড়ে যাওয়ায় ‘গ্লোবাল লক’ হয়ে যায়। যার জেরে সরকারি হাসপাতালে পেসমেকার জোগান দেওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে।
কিন্তু পেসমেকারের মতো জীবনদায়ী চিকিৎসা সরঞ্জাম কি এ ভাবে আচমকা বন্ধ করে দিতে পারে কোনও সংস্থা? ওই কর্তা বলেন, ‘‘পেসমেকার কতটা দ্রুত সরবরাহ জরুরি, সেটা আমরা বুঝতে পারি। যদি অর্থের জোগান ঠিক মতো থাকে তাহলে ধারাবাহিক পরিষেবা দিতে সুবিধা হয়। এত টাকা বকেয়া থাকলে ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়।’’
কেন স্বাস্থ্য দফতর টাকা মেটাচ্ছে না, তার কোনও জবাব স্বাস্থ্যকর্তারা দেননি। এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে একটি শব্দও তিনি বলবেন না।