Coronavirus

রিপোর্ট না আসায় বাতিল অস্ত্রোপচার, বাড়ছে বিল

জরুরি ভিত্তিতে নয়, এমন অস্ত্রোপচারের (ইলেক্টিভ) ক্ষেত্রে কোভিডের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে এমনই অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের বড় অংশের।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি

অস্ত্রোপচারের দিন-ক্ষণ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। স্থির করা হয়েছিল অস্ত্রোপচারের সময়ও। চিকিৎসক, রোগী এবং তাঁর পরিবার মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিলেন। তবু অস্ত্রোপচার করা গেল না। কারণ, কোভিড পরীক্ষার ফলই যে আসেনি! অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ল্যাবরেটরি যে সময়ে রিপোর্ট দেবে বলেছিল, তারা তা দেয়নি। ফলে সব প্রস্তুতি সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নয়, এমন অস্ত্রোপচারের (ইলেক্টিভ) ক্ষেত্রে কোভিডের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে এমনই অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের বড় অংশের।

Advertisement

তাঁদের বক্তব্য, সচরাচর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া যাওয়ার কথা। কিন্তু কখনও কখনও তা পেতে তিন-চার দিন, এমনকি সাত দিনও পেরিয়ে যাচ্ছে। তত দিন রোগীকে হাসপাতালেই ভর্তি থাকতে হচ্ছে। তাতে যেমন রোগীর মানসিক চাপ বাড়ছে, তেমনই হাসপাতালে থাকার খরচও বেড়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে, সংশ্লিষ্ট রোগী যদি কোভিড পজ়িটিভ হন, তা হলে তাঁর থেকে অন্য রোগী এবং চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণের আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। জরুরি অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষা না করা হলেও ইলেক্টিভ অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে সমস্ত হাসপাতাল। তাতে এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে বলে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন।

শল্য চিকিৎসক সুমিত চৌধুরী জানাচ্ছেন, অনেক ল্যাবরেটরি কোভিড নমুনার রিপোর্ট দিতে ইচ্ছে মতো সময় নিচ্ছে। কত দিনের মধ্যে কোভিড রিপোর্ট দিতে হবে, এর কোনও নির্দেশিকা নেই। ফলে ল্যাবরেটরিগুলির রিপোর্ট দেওয়ার সময়ের মধ্যেও সাযুজ্য থাকছে না। এমনও হয়েছে, সাত দিন পরে রিপোর্ট দেওয়া হবে বলেও তা দেওয়া হয়নি। তার ফলে গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা বহু গুণ বেড়ে যাচ্ছে। সুমিতবাবুর কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচারের জন্য রোগী ও তাঁর পরিবারের মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়। অথচ শেষ মুহূর্তে কোভিডের রিপোর্ট ন‌া পাওয়ায় অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হচ্ছে। যাঁরা শহরের বাইরে থাকেন, তাঁদের পরিজনেরা হয়তো গাড়ি ভাড়া করে এসেছেন, ফলে অস্ত্রোপচার বাতিল করায় তাঁদেরও সমস্যা হচ্ছে।’’

Advertisement

কোভিড রিপোর্ট পাওয়ার এই অনিশ্চয়তা থেকে আরও একটি আশঙ্কা বাড়ছে, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তা হল, সংশ্লিষ্ট রোগী থেকে অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা। রোগীর কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ হলে ঠিক আছে, কিন্তু তা যদি পজ়িটিভ হয় এবং তা জানতে দেরি হলে বেশি সংখ্যক মানুষের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। অস্থি-শল্য চিকিৎসক জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় চৌধুরী জানাচ্ছেন, যত ক্ষণ ন‌া জানা যাচ্ছে কোভিড নেগেটিভ, তত ক্ষণ পিপিই পরা-সহ সমস্ত সুরক্ষা নিয়ে অনেক সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জানতে যত দেরি হবে, ততই রোগীর থেকে সংক্রমণের আশঙ্কাও থেকে যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ায় হাড় ভাঙা রোগীর কষ্ট আরও বাড়ছে। ভাঙা হাত-পা নিয়েই শুয়ে থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের শয্যায়।

উদ্বেগের পাশাপাশি চিকিৎসার খরচও বাড়ছে।’’ অ্যানাস্থেটিস্ট চিরঞ্জীব সরকার আবার জানাচ্ছেন, এমনও ঘটনা ঘটছে যে রোজ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে অস্ত্রোপচারের, কিন্তু কোভিডের রিপোর্ট না পাওয়ায় করা যাচ্ছে না। ফলে যে সময় ওই অস্ত্রোপচার করার জন্য ওটি নেওয়া হয়েছিল, সেই সময়ে অন্য কোনও রোগীর অস্ত্রোপচারও করা গেল না। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের রিপোর্ট কবে হাতে আসবে, তা নিয়ে একটা সার্বিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’’

কেন এমন অবস্থা হচ্ছে? শহরের এক বেসরকারি ল্যাবের কর্মীর দাবি, ‘‘অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন আগে বলা থাকলে সেই মতোই রিপোর্ট দেওয়া হয়। শেষ মুহূর্তে বললে তখন রিপোর্ট দিতে দেরি হয়। না হলে রিপোর্ট দিতে গড়ে তিন দিন সময় লাগে।’’ অন্য এক ল্যাব কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘যে রিপোর্টগুলি নিয়ে সংশয় থাকে, শুধু সেই সমস্ত রিপোর্ট দিতেই দেরি হয়। না হলে যে দিন রিপোর্ট দেওয়ার কথা, সে দিনই দেওয়া হয়।’’

আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্ক? সকাল থেকে বেহালার রাস্তায় পড়ে রইলেন বৃদ্ধ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন