Surrogate mother

বিধবার সন্তান হলে সমাজে একঘরে হবেন, আশঙ্কায় বেপাত্তা হয়েছিলেন গর্ভদাত্রী!

তদন্তে নেমে প্রথমে পুলিশও কোনও ভাবে কাশ্মীরার হদিশ পেতে ব্যর্থ হয়। প্রায় ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করার পর, কাশ্মীরার একটি মোবাইলের সূত্র ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে তাঁর হদিশ পায় পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:৩২
Share:

নিউ আলিপুরের সেই গর্ভদাত্রী কাশ্মীরা মোল্লা।

প্রতারণা নয়, দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়েছিল ভ্রুণ। নিউ আলিপুরের গর্ভদাত্রী (সারোগেট মাদার) মায়ের অন্তর্ধান নিয়ে তদন্তে উঠে এল নয়া তথ্য। জানা গিয়েছে বিধবা হয়ে ফের সন্তান হলে সমাজে সমস্যায় পড়বেন। এই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন ওই গর্ভদাত্রী।

Advertisement

এক দম্পতি নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন যে, মথুরাপুরের বাসিন্দা কাশ্মীরা মোল্লার সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হয়েছিল। তিনি রাজি হয়েছিলেন ওই দম্পতির সন্তান বহন করতে। পরিবর্তে তাঁকে ৮ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়েছিল। ওই দম্পতির অভিযোগ, ৮ লাখের মধ্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছিল কাশ্মীরাকে। প্রায় ২৫ সপ্তাহ তাঁদের সন্তান বহন করার পর কলকাতায় তাঁর থাকার নির্দিষ্ট জায়গা থেকে হঠাৎই বেপাত্তা হয়ে যান তিনি। কোনও জায়গায় তাঁর খোঁজ না পেয়ে পুলিশে অভিযোগ জানান ওই দম্পতি।

তদন্তে নেমে প্রথমে পুলিশও কোনও ভাবে কাশ্মীরার হদিশ পেতে ব্যর্থ হয়। প্রায় ১৫ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করার পর, কাশ্মীরার একটি মোবাইলের সূত্র ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে তাঁর হদিশ পায় পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতার করা হলেও কোনও ভাবে পুলিশ রহস্যের কিনারা করতে পারছিল না, কেন ২৫ সপ্তাহ ধরে সন্তান বহন করার পর পালিয়ে গেলেন কাশ্মীরা?

Advertisement

এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘আমাদের প্রশ্নের জবাবে কাশ্মীরা বার বার বলেছিলেন যে, তাঁর গর্ভপাত হয়ে গিয়েছিল। তিনি ভ্রূণটিকে নদীতে ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু কী ভাবে কোথায় তা নিয়ে মুখ বন্ধ রেখেছিলেন কাশ্মীরা।” তদন্তকারীরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ২৬ সপ্তাহের ভ্রূণ কারও সাহায্য ছাড়া শরীর থেকে বার করা অসম্ভব। অর্থাৎ কাশ্মীরা মিথ্যা বলছেন! ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা দু’টি তথ্য জানতে পারেন। ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত ভ্রূণ সুস্থ ছিল।

আরও পড়ুন:গলা থেকে পেট পর্যন্ত সেলাই করা, বাগবাজারে গঙ্গার পাড়ে উদ্ধার দেহ ঘিরে রহস্য
আরও পড়ুন:খুনের আগে রাতভর রিয়া-রমাকে নিয়ে মদ্যপান করেছিলেন সাদ্দাম

অন্য দিকে, ২০২০-র ২১ জানুয়ারি থেকে প্রায় ১ সপ্তাহ কাশ্মীরা সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করেন। এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, ওই সময়ের মধ্যে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটেছে। সেই অনুযায়ী কাশ্মীরার মোবাইল টাওয়ার লোকেশন থেকে পুলিশ জানতে পারে, ১৭ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত কাশ্মীরা ডায়মন্ড হারবারে ছিলেন। সেখানে সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ করেও কাশ্মীরা নামে কোনও রোগীর চিকিৎসার তথ্য পাননি তদন্তকারীরা।

ইতিমধ্যে কাশ্মীরার মা আম্বিয়া বিবির বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালের একটি ডিসচার্জ সার্টিফিকেট পান তদন্তকারীরা। সেখানে রোগীর নাম লেখা ছিল মীনা হালদার। কিন্তু রোগীর স্বামীর নাম লেখা ছিল এনায়েতুল্লা মোল্লা। এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘কাশ্মীরার মৃত স্বামীর নামও এনায়েতুল্লা মোল্লা। আম্বিয়াকে চেপে ধরতেই তিনি স্বীকার করেন যে, মেয়েকে অন্য নামে ভর্তি করে গর্ভপাত করান আম্বিয়া।’’ পুলিশ ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, কাশ্মীরা যখন হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন তখন আল্ট্রা সোনোগ্রাফিতে ধরা পড়েছিল গর্ভের শিশু মৃত।

এর পর ফের তদন্তকারীরা কাশ্মীরাকে জেরা করা শুরু করেন। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘জেরায় এ বার কাশ্মীরা স্বীকার করেন, ভয়েই পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ কাশ্মীরা বিধবা। তাঁর ওই সামাজিক অবস্থানে আবার সন্তান হলে সমাজে সমস্যার মুখে পড়বেন। এই ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।” তবে তদন্তকারীদের দাবি, পালিয়ে গেলেও, গর্ভের সন্তান ইচ্ছাকৃত ভাবে নষ্ট করতে চাননি তিনি। দুর্ঘটনাবশত ঘটনাটি ঘটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন