Durga Puja 2022

বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি ‘ট্যাকল’ করেই পুজো ময়দানে ভিড়ের গোল

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে স্থলভাগের দিকে জলীয় বাষ্প ঢুকে বৃষ্টি হওয়াতে পারে। আশঙ্কা সত্যি করে অষ্টমীর সকাল থেকে সন্ধ্যা বৃষ্টি হল ।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৭
Share:

শিশু কোলে দক্ষিণ কলকাতার রাস্তায়। নিজস্ব চিত্র

দিনের কয়েক ঘণ্টা যদি হয় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির, বাকি দিনটা অবশ্যই পুজোমুখী জনতার। বৃষ্টির কড়া ‘ট্যাকল’ সামলে পুজো দেখার উন্মাদনাই গোল দিল দিনের শেষে। এমনকি, বৃষ্টির মধ্যেও ছেদ পড়েনি ঠাকুর দেখায়। কেউ ছাতা হাতে, কেউ বা সঙ্গে থাকা প্লাস্টিকে মাথা ঢেকেই লাইন ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করলেন। অনেকেই হুড়মুড়িয়ে মণ্ডপে ঢুকে মাথা বাঁচালেন। কেউ কেউ আবার বললেন, ‘‘বৃষ্টির এই সময়গুলোতেই খাওয়া সেরে নিতে হয়। তা হলে ঠাকুর দেখার সময় নষ্ট হয় না।’’ তার পরে বৃষ্টি ধরতেই যে কে সে-ই! করোনা-পর্ব কাটিয়ে অষ্টমীতে ফের হাজির পুজোর আনন্দ চেটেপুটে নেওয়ার কলকাতা।

Advertisement

আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হলে স্থলভাগের দিকে জলীয় বাষ্প ঢুকে বৃষ্টি হওয়াতে পারে। আশঙ্কা সত্যি করে অষ্টমীর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হল বেশ কিছু জায়গায়। তবে ষষ্ঠীর মতো কোথাও জল জমেনি। বড়সড় ছেদ পড়েনি ঠাকুর দেখায়। এ দিনও সপ্তমীর মতোই হাতে হাতে ঘুরেছে ছাতা। বৃষ্টির মধ্যেই টালা পার্ক প্রত্যয়ে ছাতা হাতে প্রতিমা দর্শনে আসা এক দর্শনার্থী বললেন, ‘‘রাত-দিন এক করে এ বার ঠাকুর দেখব ঠিক করেছি। বৃষ্টি যাতে বাধা হতে না পারে, তার জন্য সঙ্গে ছাতা রেখেছি।’’

হাতিবাগান সর্বজনীনে আবার ছাতা হাতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য ঘোষণা হচ্ছিল, ‘‘এই বৃষ্টি টিকবে না। এখনই থেমে যাবে। সে রকম হলে একটু দাঁড়িয়ে প্রতিমা দর্শনে যান।’’ এমন ঘোষণার কারণ কী? ঘোষক বললেন, ‘‘ছাতার খোঁচায় মণ্ডপের ক্ষতি হতে পারে। যা ভিড় হচ্ছে, তাতে এমনিতেই মণ্ডপ নিয়ে ভয়ে আছি।’’

Advertisement

এমন ভিড়ের আশঙ্কা থেকেই সপ্তমীর রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো-দর্শন। অষ্টমীতে এমন কোনও খবর না থাকলেও রাত যত বেড়েছে, ততই জনজোয়ার আছড়ে পড়েছে শহরের রাজপথে। এক সময়ে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বহু রাস্তা। বিকল্প পথে যান নিয়ন্ত্রণ করতে নেমে কালঘাম ছুটেছে পুলিশের। প্রায় তিল ধারণেরও জায়গা ছিল না গড়িয়াহাট, গ্রে স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণির মতো এলাকায়। গাড়ির লম্বা লাইন চোখে পড়েছে নবনির্মিত টালা সেতুতেও। একই রকম ভিড় ছিল মেট্রোয়। রাত পর্যন্ত চলা ট্রেনে করে আসা গ্রামের দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো। মণ্ডপে মণ্ডপে যে লাইন চোখে পড়েছে, তাতে নামী এক-একটি প্রতিমা দর্শনে গড়ে ঘণ্টা দেড়েক করে লেগেছে বলে অনেকের দাবি। ত্রিধারা সম্মিলনীর প্রতিমা দর্শন সেরে বেরোনো, বসিরহাটের সুমন ঘড়াই নামে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ভোরে শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে ঠাকুর দেখতে দেখতে দক্ষিণ কলকাতায় চলে এসেছি। দুপুরে যেখানে এক-একটি ঠাকুর দেখতে ৩০-৪০ মিনিট করে লাগছিল, সেটাই সন্ধ্যা আটটার পর থেকে ঘণ্টা দেড়েক করে লাগছে।’’ এর পরে বললেন, ‘‘লাইন ঠেলে ত্রিধারা দেখা শেষ হল আড়াই ঘণ্টায়।’’

অষ্টমীর জনজোয়ারের নিরিখে এ দিন গড়িয়াহাট, কসবা চত্বরের পুজোকেও যেন ছাপিয়ে গিয়েছে বেহালা ও খিদিরপুরের বেশ কয়েকটি পুজো। টক্কর দিয়েছে উত্তর এবং উত্তর-পূর্বের বেশ কয়েকটি মণ্ডপও। বেলেঘাটার ৩৩ পল্লি থেকে প্রতিমা দর্শন সেরে বেরোনো এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘যা ভিড়, তাতে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি। অনেকেই এই পুজোগুলো মিস করে যান। কাগজে থিম পড়ে চলে এসেছি।’’ খিদিরপুরের একটি মহিলা-পরিচালিত পুজোর সামনে তমসা ঘোষ নামে এক মহিলা আবার বললেন, ‘‘এখন আর নামী, অনামী বলে কিছু হয় না। থিমের খবর রটে গেলেই ভিড় হয়ে যায়।’’ হঠাৎ ভিড় সামলাতে নাজেহাল ওই পুজোর কর্তারা বললেন, ‘‘করোনার জন্য গত দু’বছরে আমাদের ভিড় দেখার অভ্যাস চলে গিয়েছে বলেই কি না জানি না, যা দেখছি, অদ্ভুত লাগছে। এক মুহূর্তও নষ্ট না করার তাগিদে পিলপিল করে লোক আসছেন।’’

ভিড়ের এই চিত্র কি দেখা যাবে নবমীতেও? না কি বৃষ্টি ভাসাবে পুজোর ময়দান? উত্তর মিলবে আজই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন