শহরের রূপ ঢাকছে তারের জট

বিজ্ঞাপনে শহরের মুখ ঢাকা নতুন কিছু নয়। এ বার শহর জুড়ে থাকা বাতিস্তম্ভে তারের জট ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কপালে। এর কোনওটা কেব্‌ল অপারেটরের তার, কোনওটা টিভি-টেলিফোনের তার, কোনওটা আবার বৈদ্যুতিক তার।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায় ও কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৩১
Share:

বিবাদী বাগ

বিজ্ঞাপনে শহরের মুখ ঢাকা নতুন কিছু নয়। এ বার শহর জুড়ে থাকা বাতিস্তম্ভে তারের জট ভাঁজ ফেলেছে প্রশাসনের কপালে। এর কোনওটা কেব্‌ল অপারেটরের তার, কোনওটা টিভি-টেলিফোনের তার, কোনওটা আবার বৈদ্যুতিক তার।

Advertisement

ধর্মতলায় বৈদ্যুতিক স্তম্ভের নীচে অনেক জায়গাতেই রয়ে গিয়েছে তারের জট। খোদ ডালহৌসি এলাকার গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট)-এ রাস্তার পাশে ডাঁই করে রাখা রয়েছে তার। কাউন্সিল হাউস স্ট্রিটে রাস্তার উপরে এপার থেকে ওপারে চলে গিয়েছে তারের কুণ্ডলী। কোথাও বা বৈদ্যুতিক স্তম্ভের মাথা থেকে মাটি পর্যন্ত ঝুলছে তার।

কলকাতা জুড়ে প্রায় মাকড়সার জালের মতো বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই তার। তাতে শুধু শহরের সৌন্দর্যই নষ্ট হচ্ছে না, বাড়ছে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাও। এই তারের ভারেই অনেক সময়ে বাতিস্তম্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুরকর্তারাও। বিশেষ করে ধর্মতলা, বিবাদী বাগ, হেয়ার স্ট্রিট, মহাত্মা গাঁধী রোডের মতো ব্যস্ততম ঘন বসতি এলাকায় সব সময়ে আগুন লাগার আশঙ্কায় ভুগছেন এলাকাবাসীরা।

Advertisement

এক পুর-আধিকারিক জানান, বৈদ্যুতিক স্তম্ভে তার জড়ানো নিষেধ। কিন্তু তা মানছেন না অনেকেই। পুর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কেব্‌ল অপারেটরদের তারের জটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বৈদ্যুতিক স্তম্ভ। শহরের দৃশ্য-দূষণ রোধেও এই ধরনের তার অনেক ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন বৈদ্যুতিক স্তম্ভে তার লাগিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি পুর-আধিকারিকেরা।


ক্যানিং স্ট্রিট

পুরসভার আলো দফতরের মেয়র পারিষদ মনজর ইকবাল বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। এ বার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাতিস্তম্ভে তার জড়ান শহরের কেব্‌ল অপারেটরেরা। কোনও কোনও স্তম্ভের হাল খুবই খারাপ। যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়তে পারে তারের ভারে। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা এ সব করছেন, তাঁদের সতর্ক করা হবে।’’ এই কথা মানা না হলে সব তার সরিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ। মনজর জানান, পরিবর্তে রাস্তার ধারে নতুন খুঁটি করে সেখানে তার ঝোলাতে পারেন কেব্‌ল অপারেটরেরা।

নিয়মানুযায়ী, পুরসভার বৈদ্যুতিক স্তম্ভে কোনও কেব্‌ল সংস্থা তার লাগালে পুরসভাকে কর দিতে হবে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা পালন করা হয় না বলেও পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। পুর হিসেব অনুযায়ী, শহরে বর্তমানে বৈদ্যুতিক স্তম্ভের সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। এগুলির মধ্যে পুরসভা ছাড়াও কেএমডিএ এবং সিইএসসি-রও বাতিস্তম্ভ আছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির উপরে কুণ্ডলী পাকানো তারের জন্য তাঁদের কোনও সমস্যা হয় না বলেই জানিয়েছেন সিইএসসি-র এক পদস্থ আধিকারিক। তাঁর কথায়, ‘‘যখন রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করি, সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে বললে ওরা তার সরিয়ে দেয়।’’

এ দিকে পুরসভার এক আমলা জানান, ভয়ঙ্কর ভাবে তার জড়ানো থাকে, সরাতে গিয়ে একাধিক বার আক্রান্ত হয়েছেন কর্মীরা। মারধরও করা হয়েছে। তাই নিষিদ্ধ থাকলেও কেউ সাহস করে সরাতে যান না। যদিও পুরসভা সূত্রে খবর, এ বার থেকে তার সরানোর ব্যাপারে পুলিশের সাহায্য নেবে পুরসভা। তার বাদ দিয়ে ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে কেব্‌ল পরিষেবা দেওয়ার বিষয়েও পুর-প্রশাসন অপারেটরদের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এক কেব্‌ল সংস্থার ডিরেক্টর সুরেশ শেটিয়া বলেন, ‘‘বৈদ্যুতিক স্তম্ভে তারের জটলা শহর সুন্দর রাখার অন্যতম বাধা, এটা ঠিকই। প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা হলেও এখনও পর্যন্ত কোনও বিকল্প তৈরি হয়নি। ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল লাইন তো খুবই খরচ সাপেক্ষ।’’ পূর্ব ভারতের মাল্টি সিস্টেম অপারেটরের অন্যতম সদস্য সুদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মানছি এতে শহরের সৌন্দর্য ব্যাহত হচ্ছে। তবে যে সমস্ত প্রস্তাব এসেছে, তা বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। নতুন কিছু করা দরকার। যাতে আমরাও ব্যবসা করতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন