Tangra Case

বিয়ের রাতে অঘটন, মেসোর মৃত্যু মানতেই পারছেন না নবদম্পতি

বুধবার দুপুরে পটারি রোডে ঢুকতেই বিয়েবাড়িটা চিনিয়ে দিলেন স্থানীয় লোকজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৩০
Share:

অকুস্থল: এই জায়গাতেই বধূকে অপহরণের চেষ্টার পরে অ্যাম্বুল্যান্স পিষে দেয় তাঁর শ্বশুরকে। বুধবার, গোবিন্দ খটিক রোডে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

বাড়ির গেট জুড়ে বিশাল কাপড়ের তোরণ। তার উপরে থার্মোকল দিয়ে লেখা নবদম্পতির নাম— রাহুল এবং মৌমিতা। গেটের আশপাশ থেকে ঝুলছে আগের দিন লাগানো শুকিয়ে যাওয়া ফুল। কন্যা বিদায়ের তখনও ঢের বাকি। তবু কোথাও তাল কেটে গিয়েছে গোটা অনুষ্ঠানে।

Advertisement

বুধবার দুপুরে পটারি রোডে ঢুকতেই বিয়েবাড়িটা চিনিয়ে দিলেন স্থানীয় লোকজন। জটলার মধ্যে থেকে এক জন বললেন, ‘‘ও বুঝেছি, যে মেয়েটার মেসোকে অ্যাম্বুল্যান্স পিষে মারল তাঁদের বাড়ি তো!’’ আর এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘ভাবুন, অ্যাম্বুল্যান্স পিষে দিল! অথচ মানুষটাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া গেল না। নিয়ে যেতে হল অটোয়।’’

মঙ্গলবার রাতে বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডের বাসিন্দা বছর ষাটেকের এক প্রৌঢ়কে পিষে মারার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের কাছে তাঁর বাড়ির লোক দাবি করেছেন, বিয়ে বাড়ি থেকে ফেরার পথে পাঁচ
বছরের মেয়েকে নিয়ে কিছুটা আগে হাঁটছিলেন প্রৌঢ়ের পুত্রবধূ। সেই সময়ে তপসিয়ার দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুল্যান্স গোবিন্দ খটিক রোডের উপরে ওই বধূর পথ আটকায় এবং অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা দু’জন তাঁকে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে ওই প্রৌঢ়কে পিষে দিয়ে চলে যায় ওই অ্যাম্বুল্যান্স। নীলরতন
সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় প্রৌঢ়কে।

Advertisement

ওই ঘটনার শোকে মুহ্যমান গোটা বিয়েবাড়ি। যে ঘরে নবদম্পতিকে বসানো হয়েছে সেখানেও কোনও হাসিঠাট্টা নেই। সকলেই মৃত্যু ঘিরে আলোচনায় ব্যস্ত। এক তরুণী বলছিলেন, ‘‘বিয়ে না হলে এখন আমরা হয়তো মেসোর জন্য হাসপাতালে থাকতাম।’’ নিজের বিয়ের রাতে এমন ঘটনা যেন এ দিন দুপুরেও মেনে নিতে পারছেন না মৌমিতা। তিনি বললেন, ‘‘আমার বিয়েতে মেসোর সঙ্গে এমন ঘটনা
ঘটে গেল, এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। রাত তখন ১২টা বেজে গিয়েছে। শেষের ক’জন খাওয়াদাওয়া করছেন। হঠাৎ শুনি বাইরে খুব চিৎকার। তখন কেউ কিছুই বলেনি আমাকে। সামান্য ঝামেলা বলে এড়িয়ে গিয়েছিল। আজ সকালে শুনলাম, মেসো আর নেই।’’ পাশে বসা সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে রাহুল বললেন, ‘‘ভাবতে খুব অবাক লাগছে। এ শহরের নিরাপত্তা তা হলে কোথায়? বিয়েবাড়ি থেকে তো ওই মেসোর বাড়ি কাছেই। তার মধ্যে এমন ঘটনা ঘটতে পারে!’’

রাহুল আর মৌমিতা দু’জনেই দু’টি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। পাত্র-পাত্রী বিজ্ঞাপনী ওয়েবসাইট দেখে তাঁদের পরিচয়। এর পরেই দুই পরিবার বসে বিয়ের তারিখ ঠিক করে। মৌমিতাদের বাড়ি থেকে আগাগোড়া বিয়ের দায়িত্বে ছিলেন ওই প্রৌঢ়ের ছেলে। কেনাকাটা, বাড়ি সাজানো থেকে পাত্রকে আশীর্বাদ করে
আনতে যাওয়া— গত কয়েক দিন সবেতেই থেকেছেন মৌমিতার মেসো। তাঁর ইচ্ছেতেই ভাড়া নেওয়া হয়েছিল স্কুলবাড়িটি। সেখানে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার আগে নবদম্পতিকে নিয়ে তিনি ছবিও তুলেছেন দেদার। সেই ছবি দেখিয়েই মৌমিতা বললেন, ‘‘মেসো হইহই করতেন, ছবি তুলতে ভালবাসতেন। আজ রাহুলদের বাড়ি যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে ছবি তুলবেন বলে রেখেছিলেন। আর কেউ এমন করে ছবি তুলতে চাইবেন না। এই মুহূর্তে আর কিছু ভাবতে পারছি না। দোষীদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা হোক, এটাই চাই।’’

এত কিছুর মধ্যেও যেন মৌমিতার মায়ের চিন্তা যাচ্ছে না। তাঁর কথায়, ‘‘মৌমিতার ওই মেসোরাই এই বিয়ের সব ছিলেন। এত বড় অঘটনে সব গোলমাল হয়ে গেল। কিন্তু এ বার মেয়ে-জামাইকে তো ঠিকঠাক বিদায় দিতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন