সরেজমিন আনন্দবাজার

বিমানবন্দরে রমরম করে ট্যাক্সির দুর্নীতি, দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশ

একেবারে দিনেদুপুরে ডাকাতি। তা-ও আবার পুলিশের নাম করে! বিমানবন্দর থেকে ব্যারাকপুরের ট্যাক্সিভাড়া ৩০০ টাকার কাছাকাছি। টার্মিনালের ভিতরে ‘প্রি-পেড’ বুথ থেকে ট্যাক্সি নিলে তা পড়ে ৩৪৫ টাকা। অথচ, টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হেঁটে এলে বাইরের বুথে ওই রুটের ভাড়াই ৬৯০ টাকা! তা-ও, এসি ট্যাক্সি নয়। সাধারণ অ্যাম্বাসাডর। রং সাদা। একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি চালাচ্ছে সেই বুথ।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০০:০১
Share:

সেই প্রি-পেড বুথ। —নিজস্ব চিত্র।

একেবারে দিনেদুপুরে ডাকাতি। তা-ও আবার পুলিশের নাম করে!

Advertisement

বিমানবন্দর থেকে ব্যারাকপুরের ট্যাক্সিভাড়া ৩০০ টাকার কাছাকাছি। টার্মিনালের ভিতরে ‘প্রি-পেড’ বুথ থেকে ট্যাক্সি নিলে তা পড়ে ৩৪৫ টাকা। অথচ, টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হেঁটে এলে বাইরের বুথে ওই রুটের ভাড়াই ৬৯০ টাকা! তা-ও, এসি ট্যাক্সি নয়। সাধারণ অ্যাম্বাসাডর। রং সাদা। একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটি চালাচ্ছে সেই বুথ।

কেন এই দ্বিগুণ ভাড়া?

Advertisement

বুথে বসে থাকা যুবকের উত্তর, ‘‘বিধাননগর সিটি পুলিশ এই ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে!’’ শুধু তা-ই নয়, যে স্লিপ কেটে এই দিনে-ডাকাতি চলছে, সেই স্লিপেও লেখা রয়েছে বিধাননগর সিটি পুলিশের হেল্পলাইন নম্বর। যে বুথে বসে এই অস্বাভাবিক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, তার গায়েও জ্বলজ্বল করছে বিধাননগর কমিশনারেটের নাম। তিন দিন আগে কানপুর থেকে নিজের শহরে নেমে টার্মিনালের বাইরে বেরিয়ে ওই বুথে গিয়ে ব্যারাকপুরে যেতে চান আত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৬৯০ টাকার স্লিপ। গনগনে রোদে সকালে আত্রেয়ীদেবী এসি ট্যাক্সি-র প্রত্যাশায় সেই টাকা দিয়ে গাড়িতে চড়ে দেখেন এসি-র বালাই নেই। কথা না বাড়িয়ে তিনি ব্যারাকপুর চলে যান।

প্রাথমিক ভাবে তাঁর মনে হয়, সম্ভবত এসি-র ভাড়া নিয়ে ভুল করে নন-এসি গাড়ি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। কিন্তু পরে খবর নিয়ে জানা যায়, ওই বুথ থেকে গাড়ি নিলে ওটাই নন-এসি গাড়ির ভাড়া। সেখানে এসি ট্যাক্সিও পাওয়া যায়। তার ভাড়া ৭৮০ টাকা। বিমানবন্দর থেকে সল্টলেকের তিন নম্বর সেক্টরে সাধারণ ট্যাক্সির গড় ভাড়া প্রায় ২০০ টাকা। কিন্তু, ওই বুথ থেকে গাড়ি নিলে নন-এসির ভাড়া পড়ছে ৪০০ টাকা! এসি ৫২০ টাকা!

এখন টার্মিনালের ভিতরে তিনটি ‘প্রি-পেড’ বুথ। একটি হলুদ ট্যাক্সি, একটি ‘মেগা’র এসি ট্যাক্সি এবং একটি ‘ওয়েনজ’ গাড়ির। হলুদ ট্যাক্সির বুথটিও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্‌স ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও থাকেন। ভাড়া ঠিক করে দেয় রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতর। তাই, ভাড়া নিয়ে বিতর্ক নেই। দ্বিতীয় বুথটি মেগা ক্যাব-এর। তাদের সব এসি লাক্সারি গাড়ি। ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২১ টাকা। তা ছাড়াও আলাদা করে ৮০ টাকা এবং ভাড়ার উপরে পাঁচ শতাংশ পরিষেবা কর। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে ব্যারাকপুরের দূরত্ব যদি ২৪ কিলোমিটার হয়, তা হলে সব মিলিয়ে এসি গাড়ির ভাড়া হয় ৬১০ টাকা। যা বাইরের বুথের নন-এসি গাড়ির থেকে কম। আবার, ওয়েনজ থেকে গাড়ি ভাড়া নিলে কম করে আট ঘণ্টা বা ৮০ কিলোমিটারের জন্য নিতে হয়। ফলে, তার ভাড়া অনেক বেশি।

টার্মিনালের বাইরের ওই ট্যাক্সি বুথ নিয়ে বিমানবন্দরের তৃণমূল কর্মী ইউনিয়নের নেতা প্রদীপ সিকদারের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘বেআইনি ভাবে চলছে। পুলিশ মদত দিচ্ছে।’’ যে সমবায়ের নাম করে ওই বুথটি চালানো হচ্ছে, তার নেতা বিশ্বজিৎ মিত্রের যুক্তি, সল্টলেক হোক বা ব্যারাকপুর, যাত্রীকে নামিয়ে ফেরার পথে সওয়ারি তোলা হয় না। তাই, যাওয়া-আসার ভাড়া একবারে নিয়ে নেওয়া হয়! বিশ্বজিৎবাবু আরও বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ২০০৮ সালে আইন করে আমাদের অনুমোদন দিয়েছে। সেই আইন মোতাবেক বিমানবন্দর থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে গিয়ে ফিরে আসার পুরো ভাড়া নেওয়া হয়।’’ তা হলে যাত্রীকে স্লিপ দেওয়ার আগে ওই কথা জানানো হয় না কেন? ওই নেতার কথায়, ‘‘যাত্রী জানতে চাইলে তবেই বলা হয়।’’

পুলিশেরও যুক্তি, রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনেই ওই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা হিসেবে ভাড়া নেওয়ার কথা। সেই ভাড়া নেওয়ার কথা যাতায়াতের জন্যই। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে গন্তব্য পৌঁছনোর জন্য গাড়ি নিলে সে একবারে যাতায়াতের ভাড়া নিচ্ছে, এমনটা এর আগে শোনা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন