East-West Metro Route

গঙ্গার নীচে মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরিতে সাবমেরিনের চেহারা নিয়েছিল টিবিএম

বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়ার কথাইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত অংশের। সেখানেই দশতলা বাড়ির সমান গভীরতায় গঙ্গার নীচেসুড়ঙ্গপথে ছুটবে মেট্রো।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৬
Share:

গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গের ছবি। —ফাইল চিত্র।

গঙ্গার নীচে সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য বেছে নেওয়া টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ‘রচনা’ এবং‘প্রেরণা’-কে খননের সময়ে কার্যত সাবমেরিনের চেহারা দিতে হয়েছিল। যাতে যে কোনও বিপত্তির সময়ে জল ঢুকে পড়ার আশঙ্কারোখা যায়। কারণ, সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ এক বার শুরু হয়ে গেলে তা যে কিছুতেই থামিয়ে রাখাযাবে না, তা বিলক্ষণ জানতেন প্রযুক্তিবিদেরা।

Advertisement

বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন হওয়ার কথাইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এসপ্লানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত অংশের। সেখানেই দশতলা বাড়ির সমান গভীরতায় গঙ্গার নীচেসুড়ঙ্গপথে ছুটবে মেট্রো। সারা দেশে এই প্রথম কোনও নদীর নীচ দিয়ে যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রো।তাই এর সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত রেল এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রকল্প নির্মাণের শুরুতে সুড়ঙ্গ তৈরির পরিকল্পনা এবং তার প্রয়োগ যে মোটেই সহজ ছিল না, সে কথা জানাচ্ছেন ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিবিদদের একাংশ।

গঙ্গার নীচে প্রায় ৫২০ মিটার লম্বা দু’টি সুড়ঙ্গের কাজ শেষহয়েছিল ২০১৭ সালের ২৩ মে এবং ২১ জুন। সাত বছর আগে তৈরি হওয়া ওই জোড়া সুড়ঙ্গে মেট্রোছুটবে, এই খবরে খুশির হাওয়া সেটির নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মী-আধিকারিকদের মধ্যে। তাঁরা জানাচ্ছেন, নদীখাতের নীচে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ সহজ ছিল নামোটেই। নদীখাতের নীচে স্থিতিশীল মাটির স্তর খুঁজে বার করতে মেট্রোর সুড়ঙ্গ বেশ খানিকটা নীচেনামিয়ে আনতে হয়। সেই জন্যই ওই সুড়ঙ্গের উপরের তল নদীরজলস্তর থেকে প্রায় ১০০ ফুট নীচে রয়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, নদীর পলিমাটির চরিত্র আগামবোঝা যেমন শক্ত কাজ ছিল, তেমনই নদীখাতের পলিমাটিতে ডুবে থাকা জাহাজের ভাঙা অংশ বা লোহার নোঙরের অবশেষেরমুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও ছিল পুরোমাত্রায়।

Advertisement

টিবিএমের টাংস্টেন কার্বাইডের কাটার হেড (টিবিএমের সামনের দিকের খনন করার যন্ত্র)যথেষ্ট শক্ত হলেও তা মূলত মাটি কাটার উপযোগী। ফলে, বিশেষ পরিস্থিতির মোকাবিলা করার কথাও মাথায় রাখতেহয়েছিল প্রযুক্তিবিদদের। নদীর নীচে সুড়ঙ্গ খননের সময়ে কোনও ভাবে টিবিএম বিকল হলে তা যে আর কোনও ভাবেই উদ্ধার করাযাবে না, তা জেনেই কাজে নেমেছিলেন তাঁরা। কাজ থমকে গেলে ওই পরিস্থিতি আরও বিপত্তি ডেকে আনতে পারে, সেই আশঙ্কাওছিল। সে জন্য যন্ত্রকে বিশ্রাম দেওয়ার সাময়িক বিরতিটুকু বাদ দিয়ে টানা দিনরাত কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন নির্মাণ সংস্থার আধিকারিক এবং প্রযুক্তিবিদেরা। সে ভাবেই যাবতীয় প্রয়োজনীয় উপকরণের জোগান নিশ্চিত করতে হয়।পাশাপাশি, টিবিএম যে হেতু সুড়ঙ্গ খনন এবং নির্মাণকাজ একই সঙ্গে পর্যায়ক্রমে করে চলে, তাই কোনও অবস্থাতেই ভূগর্ভস্থ জলস্তরের জল যাতে সুড়ঙ্গ প্লাবিত না করে, তা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। সুড়ঙ্গ প্লাবিত হলে সেখানে ধসের আশঙ্কা বাড়ে। সেই আশঙ্কা রুখতেই টানেল বোরিং মেশিন দু’টিকে সাবমেরিনের চেহারা দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন