Suvendu Adhikari

শুভেন্দু-রুদ্রনীল বৈঠক থেকে রাজীবের বিদ্রোহ, ‘কমন ম্যান’ এক তরুণ টেলি অভিনেতা

তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও তিনি কখনও প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি সোহেল। এখন ‘অভিনেতা’ থেকে ‘নেতা’ হতে চাইছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ১৮:২৫
Share:

৬ ডিসেম্বর, ২০২০। কলকাতার হরিদেবপুরে একটি অরাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে প্রথমবার দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছিলেন ডোমজুরের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তিনি রাজ্যের বনমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘‘স্তাবকতা করতে পারলে নম্বর বেশি। ভালকে খারাপ, খারাপকে ভাল বলতে পারি না তাই আমার নম্বর কম। অন্যদের বেশি।’’ সেই সঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘নেতাদের কেন এত ক্ষোভ-বিক্ষোভ তা নিয়ে অনুসন্ধান করাটা জরুরি।’’

Advertisement

২০ জানুয়ারি, ২০২১। কলকাতার হরিদেবপুরে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। রুদ্রনীল যে বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন তা নিয়ে জল্পনা সে দিন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যায়। যদিও রুদ্রনীল পরে বলেছিলেন, ‘‘এক অভিনেতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানেই শুভেন্দুদার সঙ্গে দেখা হয় এবং কথাবার্তাও হয়।’’

এই দুই ঘটনার মধ্যে একটি মিল রয়েছে। আড়ালে আছেন টেলিভিশনের এক তরুণ অভিনেতা। সোহেল দত্ত। বছর ২১-এর সোহেল এখন অভিনয় করছেন ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকে রোহিত সেনের ভাগ্নে সর্বজিৎ চরিত্রে। এর পাশাপাশি রাজনীতিতেও ছোট থেকে আগ্রহ তাঁর। সেই সুবাদে যোগাযোগ নেতাদের সঙ্গে। আর তাঁর আমন্ত্রণেই হরিদেবপুরে ‘নবীন সঙ্ঘ’ ক্লাবের বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রাজীব। জন্মদিনে গিয়েছিলেন শুভেন্দু, রুদ্রনীল। যদিও সোহেলের দাবি, অতীতে তাঁর ক্লাবের অনুষ্ঠানে অনেক তৃণমূল নেতা এসেছেন। গত বছরের জন্মদিনেও হাজির ছিলেন শুভেন্দু।

Advertisement

গত ২০ জানুয়ারি সোহেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসেছিলেন রুদ্রনীল ঘোষ ও শুভেন্দু অধিকারী।

কে এই সোহেল? নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি জানান, শিশু অভিনেতা হিসেবে ‘মোহনা’ ধারাবাহিক দিয়ে হাতেখড়ি। ওই ধারাবাহিকে ‘তোতা’ নামে এক শিশুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এর পরে ‘বউ কথা কও’, ‘তারে আমি চোখে দেখিনি’, ‘অদ্বিতীয়া’, ‘আঁচল’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন। রাজীব কুমার পরিচালিত ‘ক্লাসরুম’ নামে একটি ছবিতেও অভিনয় করেছেন সোহেল। এর পাশাপাশি রাজনীতিতেও তাঁর আগে থাকতেই যোগাযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সোহেল।

সোহেলের দাবি, শুধু শুভেন্দু বা রাজীব নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ সম্পর্ক। তিনি বলেন, ‘‘মোহনা ধারাবাহিক দেখতেন মমতাদি। একটি অনুষ্ঠানে তিনিই আমায় ডেকে নেন। সেটা ২০০৮ সাল। আমার বয়স ৯।’’ সেই সময়ে রাজনীতি না বুঝলেও পরে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগটা রাজীবের মাধ্যমেই শুরু হয় বলে জানিয়েছেন সোহেল। তিনি বলেন, ‘‘২০১৩ সালে রাজীবদার সঙ্গে পরিচয় হয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে। সেই বছর রাজীবদার আমন্ত্রণে ডোমজুড় উৎসবেও গিয়েছিলাম। আর শুভেন্দুদার সঙ্গে আলাপ হয় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে। উলুবেড়িয়ায় একসঙ্গে প্রয়াত সুলতান আহমেদের হয়ে প্রচারে গিয়েছিলাম। পরে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।’’

সোহেল জানিয়েছেন, শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা অনেক দিন থেকেই।

তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও কখনও প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি সোহেল। এখন তিনি ‘অভিনেতা’ থেকে ‘নেতা’ হতে চাইছেন। নিজেই বললেন সে কথা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে ঠিক করেছিলাম অভিনেতাই থাকব। এখন নেতা হওয়ার কথা ভাবি। আসলে অভিনেতা হিসেবে খুব কম মানুষের জন্য কাজ করতে পারব। কিন্তু রাজনৈতিক মঞ্চ অনেক বড় পরিসর দেবে।’’ তবে কি তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে চলেছেন? জবাবে সোহেল বলেন, ‘‘রাজীবদাকে আমি নিজের বড় দাদা হিসেবে দেখি। উনি যবে, যা করবেন আমিও তাই করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন