রাজারহাট-গোপালপুর

অস্থায়ী কর্মীদের বেতন বন্ধ, বিতর্কে পুরসভা

বাম আমলের দেনা শোধ করতে গিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন ধাক্কা খাচ্ছে বলে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভায় একই অভিযোগ না হলেও বাম-বোর্ডের অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের পদ্ধতির কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় হচ্ছিল বলে দাবি বর্তমান পুর-প্রশাসনের। খরচের সেই বাড়তি ‘মেদ’ ঝরাতে তাই ওই অস্থায়ী কর্মীদের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশকেই কার্যত ছেঁটে ফেললেন রাজারহাট-গোপালপুর প্রশাসনিক বোর্ড। তাঁদের সকলেরই বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে বেধেছে রাজনৈতিক বাদানুবাদ। মামলা হয়েছে উচ্চ আদালতেও।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৫ ০১:১৫
Share:

বাম আমলের দেনা শোধ করতে গিয়ে রাজ্যের উন্নয়ন ধাক্কা খাচ্ছে বলে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভায় একই অভিযোগ না হলেও বাম-বোর্ডের অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের পদ্ধতির কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় হচ্ছিল বলে দাবি বর্তমান পুর-প্রশাসনের। খরচের সেই বাড়তি ‘মেদ’ ঝরাতে তাই ওই অস্থায়ী কর্মীদের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশকেই কার্যত ছেঁটে ফেললেন রাজারহাট-গোপালপুর প্রশাসনিক বোর্ড। তাঁদের সকলেরই বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা ঘিরে বেধেছে রাজনৈতিক বাদানুবাদ। মামলা হয়েছে উচ্চ আদালতেও।

Advertisement

রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভায় সব মিলিয়ে অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল ২৪০০। তার মধ্যে ১১৩৫ জনের গত অগস্ট মাস থেকে এ পর্যন্ত বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকেরা। ওই অস্থায়ী কর্মীরা পাম্পহাউস, পরিবহণ, হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন চালানো, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিকাশির মতো বিভিন্ন বিভাগের কাজে যুক্ত ছিলেন। পুর-তহবিলে কর আদায়, মিউটেশন বিভিন্ন খাত থেকে আসা টাকায় ওই সব কর্মীদের বেতন দেওয়া হতো।

রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভাকে বিধাননগর কর্পোরেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে গত জুলাইয়ে পুরনো বোর্ড ভেঙে যাওয়ার পরে সেখানকার পুর-নির্বাচন ঝুলে রয়েছে। পুরসভা চলছে প্রশাসনিক বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে। বারাসতের মহকুমাশাসক পীযূষকান্তি দাসকে সেখানে প্রশাসক নিয়োগ করেছে সরকার। তাঁর সঙ্গে রাজারহাটের তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত— এই তিন জনকে নিয়ে গড়া হয়েছে প্রশাসনিক বোর্ড। পূর্ণেন্দুবাবু ও সব্যসাচীবাবু দু’জনেরই দাবি, ওই কর্মীদের নিয়োগ হয়েছিল বেআইনি ভাবে। বঙ্গীয় পুর-আইন অনুযায়ী অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাউকে নিয়োগ করতে হলে তাঁদের নাম ডিএলবি (ডিরেক্টর অব লোকাল বডিজ)-তে নথিভুক্ত থাকার কথা। দুই বিধায়কেরই দাবি, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভায় নিযুক্ত ওই ব্যক্তিদের নাম নিয়মমাফিক সেখানে নথিভুক্ত ছিল না।

Advertisement

যদিও রাজ্যের পুর দফতরের এক অফিসারের দাবি, এই ধরনের অস্থায়ী কর্মীদের ক্ষেত্রে ডিএলবি-তে নাম নথিভুক্তির প্রয়োজন হয় না। তাঁদের বেতনও সরকার দেয় না। সাধারণত অস্থায়ী কর্মীদের নাম ডিএলবি-তে নথিভুক্ত থাকা বাধ্যতামূলকও নয়।

রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা বরাবরই ছিল সিপিএমের দখলে। ওই অস্থায়ী কর্মীদের নিয়োগও হয়েছিল বাম আমলেই। যদিও শেষ পুর-বোর্ডে বিরোধীপক্ষে তৃণমূলই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ওই ১১৩৫ জন কর্মীর বেতন বন্ধের পিছনে তাই রাজনীতির রং দেখছে সিপিএম। প্রাক্তন সিপিএম পুরপ্রধান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যদি নিয়োগ বেআইনি হয়ে থাকে, তবে তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা সেই সময়ে কেন আপত্তি জানাননি?’’ তাঁর দাবি, রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভা তৃণমূল দখল করতে না পারায় সিপিএম সমর্থিত অস্থায়ী কর্মীদেরই এ ভাবে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভায় এর চেয়ে অনেক বেশি অস্থায়ী কর্মী কাজ করেন বলে তাপসবাবুর দাবি।

পীযূষবাবুর দাবি, ‘‘ওই কর্মীরা কাজ করতেন না। তাই বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই সব কর্মীর জন্য যে টাকা খরচ হত, তার পুরোটাই যেত পুর-তহবিল থেকে। সরকার কোনও টাকা দিত না।’’ পুরসভার প্রশাসনিক বোর্ড জানাচ্ছে, ওই কর্মীদের বেতন বাবদ বছরে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা খরচ হত। বোর্ডের এই সিদ্ধান্তে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ কমবে বলে জানান পীযূষবাবু।

এ ভাবে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুর-প্রশাসনিক বোর্ডের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে পুরসভার বাম সমর্থিত অস্থায়ী কর্মীদের সংগঠন। সংগঠনের তরফে সাহেব আলি বলেন, ‘‘কোনও নোটিস ছাড়াই বেছে বেছে লোকজনকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন