থ্যালাসেমিয়ার রিপোর্টে দেরি আর জি করে

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আর জি করের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে এসেছিলেন নিউ টাউনের বাসিন্দা সালেহ আহমেদ।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৯ ০৩:০১
Share:

—ফাইল চিত্র।

চিকিৎসকেদের পরামর্শে প্রসূতি মায়েরা সচেতন হতে চাইছেন। থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের পরীক্ষা করাতে এগিয়ে আসছেন তাঁদের স্বামীরাও। সরকারি হাসপাতালের বাইরে সচেতনতা শিবিরে যোগ দিয়ে থ্যালাসেমিয়া-মুক্ত সমাজ গড়ার লড়াইয়ে শরিক হচ্ছেন কলেজপড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেই বৃত্ত আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। কারণ কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, সেটা যে পরীক্ষায় বোঝা যায়, সেই এইচপিএলসি (হাই পারফর্ম্যান্স লিকুইড ক্রোমোটোগ্রাফি) পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে হয়রানি।

Advertisement

সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগের তিনতলায় থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে এসেছিলেন বসিরহাটের বাসিন্দা রোজিনা বিবি। গর্ভবতী মায়ের অভিযোগ, “চিকিৎসক ১ এপ্রিল সন্তান প্রসবের দিন দিয়েছেন। আর ২৭ মে রিপোর্ট দেবে বলছে!” সে কথা শুনে হাতিয়াড়ার সুলংগুড়ির বধূ শিপ্রা কর্মকার নাথ বলেন, “৩১ জানুয়ারি আমি ও আমার স্বামী রক্ত পরীক্ষা করিয়েছিলাম। সেই রিপোর্ট এখন‌ও পাইনি। রিপোর্ট নেওয়ার ধকল সহ্য করে হাসপাতাল পর্যন্ত এসেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।“ এক‌ই অভিজ্ঞতা মিনাখাঁর তুহিনা বিবি, দেগঙ্গার সর্বাণী খাতুনদের। সকলেরই বক্তব্য, “আমাদের হয়রানি দেখে গ্রামের অন্য মহিলারা এই পরীক্ষা করানোয় আগ্রহ হারাচ্ছেন।”

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আর জি করের থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটে এসেছিলেন নিউ টাউনের বাসিন্দা সালেহ আহমেদ। তিনি বলেন, “২২ এপ্রিল স্ত্রীর সন্তান প্রসব হ‌ওয়ার কথা। অথচ রিপোর্ট দেবে বলছে ২৭ এপ্রিল। সেই রিপোর্ট নিয়ে লাভ কী?” এমন পরিস্থিতিতে থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের কর্মীরা বাইরে থেকে ওই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। লেক টাউনের এস কে দেব রোডের বাসিন্দা রীতা ভাদুড়ী বলেন, “ইউনিটের এক কর্মী আমাকে বললেন, রিপোর্ট পেতে পেতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাই বাইরে থেকে যেন ওই পরীক্ষা করিয়ে নিই। কিন্তু সেখানে তো অনেক খরচ।“ থ্যালাসেমিয়া বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, যাঁদের সেই আর্থিক ক্ষমতা নেই তাঁরা পরীক্ষা না-ও করাতে পারেন। যা কখন‌ওই কাম্য নয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

থ্যালাসেমিয়া নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালে রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে যে টালবাহানা চলছে তাতে থ্যালাসেমিয়ার সচেতনতা প্রচারের মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা আরও বলছেন, থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ের শিবিরে যাঁরা রক্ত পরীক্ষা করিয়েছেন, তাঁরাও রিপোর্ট পাননি। প্রতিনিধিদের কথায়, “আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কাউন্সেলিং করিয়ে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর জন্য রাজি করাই। থ্যালাসেমিয়া রোধে বিয়ের আগে এই পরীক্ষা করানো জরুরি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পড়ুয়ারা সহজে পরীক্ষা করাতে রাজি হন না। এর পরে যদি সময়ে রিপোর্টও না পাওয়া যায়, তা হলে আগ্রহ হারাতে কত ক্ষণ?”

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘এক দিকে রোগীর প্রচণ্ড চাপ। তার উপরে রিপোর্ট তৈরির বিষয়টি সময়সাপেক্ষ। চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরির আগে অনেক কিছু তথ্য নথিবদ্ধ করার পরে তাতে সই করেন মেডিক্যাল অফিসার। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর না থাকায় একটা সমস্যা হয়েছিল।’’ তিনি জানান, স্বাস্থ্য ভবন থেকে ওই পদে কর্মী পাঠানোর কথা। আপাতত সমস্যা সমাধানে তাঁরা নিজেরাই এক জন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের ব্যবস্থা করেছেন। অধ্যক্ষের আশা, দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন