দু’চোখে স্বপ্ন ছিল আমলা হওয়ার। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়েই ভাগ্যের মোড় ঘুরল। বর্তমানে সেই মেয়ে এয়ারপোর্ট অথরিটির দমকল বিভাগে প্রথম মহিলা কর্মী। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তাঁরই চর্চা। কে এই মেয়ে? কেমনই বা ছিল তাঁর জার্নি? জানতে চোখ রাখুন গ্যালারির পাতায়।
সাফল্যের নতুন নজির তৈরি করেছেন যিনি, তাঁর নাম তানিয়া সান্যাল। বয়স বছর ছাব্বিশ।
দমদম-সিঁথি এলাকার বাসিন্দা তানিয়া ছোট থেকেই মেধাবী। পড়াশোনা সিঁথির একটি স্কুলে। বাবা কিশোর কুমার সান্যাল সিইএসসির অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক। মা রুমা সান্যাল গৃহবধূ।
তানিয়া বাড়ির ছোট মেয়ে। তাঁর দিদি তনিমা বিবাহিত। বর্তমানে টালা পার্কে থাকেন। বোনের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত দিদিও তাঁকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাচ্ছেন।
স্কুলের পাঠ শেষ করে তানিয়া রামমোহন কলেজ থেকে বটানি নিয়ে স্নাতক হন। স্নাতকোত্তর পাঠ বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ থেকে।
স্নাতকোত্তরের পরই সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দেন তানিয়া। তাঁর স্বপ্ন ছিল একজন আমলা হওয়ার। জোর কদমেই চলছিল প্রস্তুতি।
গত বছরের মাঝামাঝি একদিন হঠাৎ করেই কাগজের একটি বিজ্ঞাপনে চোখ আটকে যায় তানিয়ার। এয়ারপোর্ট অথরিটি অগ্নিনির্বাপণ ও সুরক্ষা দফতরে প্রথমবারের জন্য মহিলা কর্মী নিয়োগ করা হবে, এটাই ছিল বিজ্ঞাপন।
বিজ্ঞাপনে শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল উচ্চমাধ্যমিক পাশ। সেটা দেখেই আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন তানিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘একটা অন্যরকম কাজ। থ্রিলিং, অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানি। আর ভাবিনি দু’বার।”
লিখিত পরীক্ষায় ভাল ভাবে পাশও করে যান তিনি। তার পরেই দিল্লিতে প্রশিক্ষণের জন্য তাঁর ডাক পড়ে। মোট ৫৫ জনের প্রশিক্ষণ হয়। তার মধ্যে তানিয়াই একমাত্র মহিলা।
‘‘প্রশিক্ষণের সময় কখনও নিজেকে আলাদা মনে হয়নি। কারণ শিক্ষক এবং সতীর্থরা কখনও আলাদা করে দেখেননি। সব সময়ে উৎসাহ দিয়েছেন। শারীরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে ছেলেরা যে স্বাভাবিক অ্যাডভান্টেজ পায়, সেটা কাটিয়ে পুরুষদের সমকক্ষ হওয়ার জন্য সবাই উৎসাহিত করেছেন’’— এমনটাই জানিয়েছেন তানিয়া।
বাড়ি থেকেও সমান উৎসাহ পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তানিয়া। তিনি বলেছেন, “বিপদের ঝুঁকি আছে জেনেও মা প্রেরণা জুগিয়েছেন। সাপোর্ট করেছে দিদিও।”
প্রশিক্ষণ শেষে বর্তমানে জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দিয়েছেন তানিয়া। সামনে আরও বড় পরীক্ষা। তানিয়ার কথায়, ‘‘মানুষের জীবন বাঁচানোর এই কাজ, এটা চ্যালেঞ্জিং। এটা অন্য কিছু থেকে পাওয়া যায় না।’’