ফাইল চিত্র।
আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের শক্তি হ্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বিজেপি নেতৃত্ব। এর মধ্যে রাজস্থান, হরিয়ানা, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্রে বাড়তি এক জন প্রার্থী দিয়ে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলার কৌশল নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের লক্ষ্যই হল, রাজ্যসভায় প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে আগামী দিনে আরও দুর্বল করা।
নির্বাচনের দশ দিন আগে থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগে সরব হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, হরিয়ানার কংগ্রেস বিধায়কদের মধ্যে ভাঙনের আশঙ্কায় তাঁদের কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান ও ছত্তীসগঢ়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এ যাত্রায় হরিয়ানায় দু’টি আসনে ভোট হবে। ওই রাজ্য থেকে অজয় মাকেনকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বিধায়ক সংখ্যার হিসেবে মাকেনের জেতা নিশ্চিত হলেও গত কাল তাঁর বাড়া ভাতে ছাই দেওয়ার উদ্দেশ্যে ওই রাজ্যে প্রথমে কিষণলাল পানওয়ার পরে কার্তিকেয় শর্মাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিজেপি। একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের মালিক কার্তিকেয় শর্মা হলেন প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা বিনোদ শর্মার ছেলে ও জেসিকা লাল হত্যাকাণ্ডে অপরাধী মনু শর্মার ভাই।
পরিসংখ্যানের বিচারে ওই রাজ্যে বিজেপির প্রথম প্রার্থী কিষণলালের জয় নিশ্চিত। কিন্তু ওই রাজ্যে কংগ্রেসের ভূপেন্দ্র হুডা শিবিরের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে কুলদীপ বিষ্ণোই শিবিরের।
সূত্রের মতে, বিষ্ণোই শিবিরের কংগ্রেস বিধায়ক ও নির্দলদের দিয়ে মাকেনকে রোখার ছক কষেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কারণ যদি মাকেন ও কার্তিকেয়ের প্রথম পছন্দের ভোট সমসংখ্যক হয় সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে হার নিশ্চিত মাকেনের। তাই বিধায়কদের ধরে রাখতে আগামী দশ দিন তাঁদের কংগ্রেসশাসিত রাজ্যে পাঠানোর কথা ভাবছে দল।
রাজস্থানেও শেষ মুহূর্তে আর এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের মালিক সুভাষ চন্দ্রকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। ওই রাজ্যের চারটি আসনের মধ্যে বিজেপির একটি আসনে জয় নিশ্চিত। বাকি তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থী রণদীপ সুরজেওয়ালা, মুকুল ওয়াসনিক ও প্রমোদ তিওয়ারির জয় নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু ঘনশ্যাম তিওয়ারির পরে গত কাল সুভাষ চন্দ্রের নাম ঘোষণা করে ওই রাজ্যের নির্বাচনে বাড়তি উত্তেজনার সৃষ্টি করেছেন অমিত শাহেরা। সূত্রের মতে, ওই রাজ্যে দলের দ্বিতীয় প্রার্থী সুভাষকে জেতাতে নির্দল, ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি, রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টির সঙ্গে তলে তলে আলোচনা শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের পাশে পাওয়ার বিজেপির চেষ্টা দেখে আজ রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বলেন, ‘‘বিজেপি ঘোড়া কেনা-বেচা শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আমরাও আমাদের তিন প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার প্রশ্নে নিশ্চিত।’’ এর আগেও সুভাষ চন্দ্রের নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।
কর্নাটকেও চারটি আসনের মধ্যে দু’টি আসনে বিজেপির জয় নিশ্চিত। তা সত্ত্বেও ওই রাজ্য থেকে গত কাল লহর সিংহ সোরিয়াকে দাঁড় করিয়ে কংগ্রেস ও জেডিএসের মধ্যে বিভেদকে আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপি। ওই রাজ্যের চারটি আসনে বিজেপির তিন জন, কংগ্রেসের দু’জন ও জেডিএস এক জনকে প্রার্থী করেছে। সংখ্যার হিসেবে বিজেপির দুই ও কংগ্রেসের প্রথম পছন্দের প্রার্থী জয়রাম রমেশের জেতা নিশ্চিত।
লড়াই মূলত চতুর্থ আসনটিকে নিয়ে। বিধায়ক সংখ্যার হিসেবে কারও পক্ষে সরাসরি চতুর্থ আসনটি জেতা সম্ভব নয়। তাই এ যাত্রায় জেডিএসকে বিপাকে ফেলতে ওই রাজ্যে সংখ্যালঘু নেতা মনসুর আলি খানকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বিজেপি নেতৃত্ব আশাবাদী, কংগ্রেসের দ্বিতীয় প্রার্থীর জয় রুখতে বিজেপিকে সমর্থন করবে জেডিএস। অন্য দিকে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, সংখ্যালঘু মনসুরকে ছেড়ে জেডিএস যদি বিজেপিকে জেতায় তাহলে ওই রাজ্যে জেডিএসের সংখ্যালঘু-বিরোধী চেহারা স্পষ্ট হয়ে যাবে।
মহারাষ্ট্রেও বিজেপির দু’টি আসনে জয় নিশ্চিত। তা সত্ত্বেও ওই রাজ্যে এক জন বাড়তি প্রার্থী দিয়েছে দল। সংখ্যার হিসেবে ওই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিজেপির পীযূষ গয়াল ও অনিল বোন্ডের জয় নিশ্চিত। একটি করে আসন জেতা নিশ্চিত শিবসেনা, এনসিপি ও কংগ্রেসের। ষষ্ঠ প্রার্থীর ক্ষেত্রে বিজেপি ও তাদের শরিক দলের হাতে শিবসেনা-এনসিপি ও কংগ্রেস জোটের থেকে বেশি ভোট থাকায় নির্দলদের সমর্থন পাওয়ার প্রশ্নে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বিজেপির বিরুদ্ধে বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ তুলেছেন।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।