ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেব বলছে, ফি বছরই দেশে সাইবার অপরাধ বাড়ছে। কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়। পুলিশ সূত্রে খবর, এ বছর সাইবার অপরাধের প্রায় ১৫০টি মামলা রুজু হয়েছে। যা আগের বারের তুলনায় বেশ কিছুটা বেশি।
এই পরিস্থিতে রাজ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা বাড়াতে সাইবার থানাকে ঢেলে সাজছে লালবাজার। সাইবার শাখাকে ডিভিশনের পর্যায়ে উন্নীত করা হচ্ছে। বাড়ানো হবে পুলিশ কর্মীর সংখ্যাও।
লালবাজার সূত্রের খবর, বর্তমানে এক জন ওসি-সহ মোট আটটি ইনস্পেক্টরের পদ রয়েছে সাইবার শাখায়। কিন্তু নতুন পরিকাঠামোয় ইনস্পেক্টরের সংখ্যা হবে ১৫ জন। তার মধ্যে পাঁচ জন মহিলা ইনস্পেক্টর থাকবেন। তাঁদের উপরে তিন জন সহকারী কমিশনার ও শীর্ষে ডেপুটি কমিশনার থাকবেন। ডিসি সরাসরি গোয়েন্দাপ্রধান বা কমিশনারকে রিপোর্ট করবেন। গোয়েন্দা বিভাগের ধাঁচে সাইবার অপরাধ বিভাগেও বিভিন্ন শাখা তৈরি হবে।
শুক্রবার শহরে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের দুই অতিরিক্ত কমিশনার বিনীত গোয়েল এবং হরিকিশোর কুসুমাকর। সেখানে তাঁরা জানান, সাইবার শাখায় সম্প্রতি ৮৫টি অতিরিক্ত পদ তৈরি করা হয়েছে। দ্রুত সেই পদে নিয়োগ হবে। এস আই স্তরেও মহিলা কর্মীর সংখ্যা বাড়বে।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, শুধু পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ালে লাভ হবে কি? সাইবার অপরাধ সামলাতে এবং তদন্ত করতে সাধারণ আইনি পাঠের পাশাপাশি প্রযুক্তির পাঠও কি জরুরি নয়? এই যুক্তি মেনে নিয়েছেন লালবাজারের কর্তারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগেই লালবাজারে সাইবার ল্যাবরেটরি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। ঢেলে সাজার সময় সাইবার শাখার অফিসারদের জন্য প্রশিক্ষণের বিশেষ পাঠ তৈরি করা হয়েছে। অতিরিক্ত কমিশনারের পদে আসার আগে হরিকিশোর কুসুমাকর জাতীয় পুলিশ অ্যাকাডেমিতে সাইবার সংক্রান্ত পাঠের দায়িত্বেই ছিলেন। তিনিই লালবাজারের জন্য এ বার উন্নত মানের বিশেষ পাঠ্যক্রম তৈরি করেছেন। নিয়মিত সময় অন্তর সাইবার শাখার অফিসারদের নতুন প্রযুক্তির প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর প্রাক্তন অধিকর্তা শ্যামল দত্তও মনে করেন, ‘‘সাইবার অপরাধ প্রতিনিয়তই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে আনছে।’’ একই মত তথ্যপ্রযুক্তি-সচিব দফতরের কর্তাদেরও। তাঁরা জানান, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ইঞ্জিনিয়ারিং, অঙ্ক ও রাশিতত্ত্বের পড়ুয়ারা সেখানে সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি আইএসআই ও আইআইটির শিক্ষকদের সেখানে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘এই গবেষণার ক্ষেত্রেও পুলিশ অফিসারেরা সুযোগ পাবেন।’’