Behala

Behala: ‘প্রভাবশালী যোগের’ জোরেই কি পুলিশকে এড়াতে সক্ষম সোমনাথ

মঙ্গলবার রাতে বেহালার চড়কতলা এলাকায় সিন্ডিকেটের তাণ্ডবের ঘটনার পর থেকে বার বার সামনে এসেছে তৃণমূল নেতা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪০
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রভাবশালী-যোগেই কি এখনও অধরা বেহালা-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ওরফে বাপান? ঘটনার চার দিন পরেও তিনি গ্রেফতার না-হওয়ায় এই প্রশ্নই উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতে বেহালার চড়কতলা এলাকায় সিন্ডিকেটের তাণ্ডবের ঘটনার পর থেকে বার বার সামনে এসেছে তৃণমূল নেতা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তাঁর নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। একটি মেলাকে কেন্দ্র করে গোলমালের সূত্রপাত হলেও আদতে যে এর পিছনে রয়েছে সিন্ডিকেট যোগ, তা এখন অনেকটাই পরিষ্কার। ঘটনার পরেই মূল অভিযুক্ত সোমনাথকে দল থেকে বহিষ্কার করার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূল। ‘‘ও যেন আত্মসমর্পণ করে’’— ঘটনার পরের দিন এলাকার বিধায়ক রত্না চট্টোপাধ্যায় এমন কথা বললেও গ্রেফতারি তো দূর, অভিযুক্তের খোঁজই পায়নি পুলিশ। আর তাঁর গ্রেফতার না-হওয়ার পিছনে অভিযুক্তের প্রভাবশালী-যোগকেই দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পুরভোটের অনেক আগে থেকেই এলাকায় ‘দাপট’ বেড়েছিল সোমনাথের। একাধিক নেতার সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল। এমনকি, ঘনিষ্ঠতার রেশ গিয়ে পৌঁছেছিল প্রশাসনের অন্দরেও। মাস তিনেক আগে পুরভোটের সময়ে বিরোধী প্রার্থীদের এলাকায় প্রচার করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ থেকে শুরু করে বিরোধী কর্মীদের ভয় দেখানো, তোলাবাজির একাধিক অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কার্যত একা হাতেই দাপুটে সোমনাথ ভোট ‘নিয়ন্ত্রণ’ করেছিলেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনায় নাম জড়ালেও গ্রেফতার করা যায়নি সোমনাথকে।
চড়কতলায় তাণ্ডবের পরে নানা মহল থেকে প্রশ্ন ওঠার পরেও সোমনাথ গ্রেফতার না হওয়ায় তাঁর এই ‘প্রভাবশালী-যোগ’ আরও স্পষ্ট হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, প্রভাবশালী একাধিক নেতার সঙ্গে সখ্য থাকার কারণেই কি গ্রেফতার করা হচ্ছে না সোমনাথকে? স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এলাকায় ওঁর দাপট তো নতুন নয়। ওঁর হাত যে বহু দূর লম্বা, তা আমরা আন্দাজ করতে পারতাম। অনেক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বহু ক্ষেত্রেই নেতারা ওঁর নাম নিতেন। ফলে এলাকাবাসী সমীহ করে চলতেন সোমনাথকে। আর এই ঘটনার এত দিন পরেও পুলিশ ওঁকে খুঁজে না পাওয়ায় কার্যক্ষেত্রে অভিযুক্তের যোগাযোগের জোর টের পাওয়া যাচ্ছে।’’

মঙ্গলবার রাতে সিন্ডিকেটের দখল নেওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বেহালার চড়কতলা এলাকা। বাঁশ, লাঠি, রড নিয়ে চলে তাণ্ডব। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলেছিল বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। একটি আবাসনে ঢুকেও মারধর করা হয় একাধিক জনকে। স্থানীয়দের দাবি, ঘটনার সময়ে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বুধবার দু’পক্ষই বেহালা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। গ্রেফতার করা হয় ১৬ জনকে। কিন্তু এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত এখনও অধরাই। শনিবার আলিপুরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’’

Advertisement

ঘটনার পরেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চললেও কেন পর্যাপ্ত বাহিনী পৌঁছতে পারেনি, সেই প্রশ্ন জোরালো হয়। এর পরেই লালবাজারের তরফে প্রতিটি ডিভিশনকে এমন গন্ডগোলের ক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই খবর। এমনকি, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রয়োজনীয় বাহিনীর জন্য ডিসি ও লালবাজারকে যাতে জানানো হয়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন