সেই সার্জেন্ট সুকান্ত মুহুরি।
এ বার খাস কলকাতাতেই আক্রান্ত হল পুলিশ। এক দিনের ব্যবধানে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে শহরে দু’বার আক্রমণের মুখে পড়তে হল তাদের। মঙ্গলবার দুপুরে যাদবপুরের সন্তোষপুরে এবং রবিবার রাতে লেক এলাকার গোবিন্দপুর কলোনিতে এই দু’টি ঘটনায় মোট চার জন পুলিশকর্মী জখম হন। সন্তোষপুরের ঘটনায় পুলিশের উপরে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক তৃণমূলের কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কর্তব্যরত এক সার্জেন্টের সঙ্গে বচসার জেরে তাঁর উপর চড়াও হন তিনি।
সন্তোষপুরের লেকপল্লিতে ঘটনার সূত্রপাত এক ট্যাক্সিচালককে ‘কেস’ দেওয়াকে কেন্দ্র করে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর একটা নাগাদ এক ট্যাক্সিচালক সন্তোষপুরের রাস্তায় নো-পার্কিং জোনে ট্যাক্সি দাঁড় করালে কর্তব্যরত সার্জেন্ট মানবেন্দ্র বিশ্বাস তাঁকে ‘কেস’ দিতে যান। ট্যাক্সিচালক তখন ওই সার্জেন্টকে কোনও ‘কেস’ না দিয়ে ‘স্পট ফাইন’ করার অনুরোধ করেন। অনুরোধ মেনে তাঁকে জরিমানা করেন সার্জেন্ট।
পুলিশের একাংশের অভিযোগ, ওই সময়ে ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সঞ্জয় দাস। ট্যাক্সিচালককে কেস দেওয়া নিয়ে মানবেন্দ্রবাবুর সঙ্গে বচসা বাধে তাঁর। মানবেন্দ্রবাবুর সঙ্গী আর এক সার্জেন্ট সুকান্ত মুহুরি সেই সময়ে মোবাইলে ওই বচসার ছবি তুলতে গেলে সঞ্জয়বাবু ও তাঁর সহযোগীরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। তখনই ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান সুকান্তবাবু। পুলিশ সূত্রে খবর, সুকান্তবাবুকে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর বুকে এবং মাথায় চোট লেগেছে বলে চিকিৎসকেরা পুলিশকে জানিয়েছেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে ওই দুই সার্জেন্টের কেউই সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে সার্ভে পার্ক থানায় ওই কাউন্সিলর এবং তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন মানবেন্দ্রবাবু। তার ভিত্তিতে সরকারি কর্মীর কাজে বাধাদান, তাঁর উপরে হামলা চালানো, হুমকি দেওয়া এবং ভয় দেখানোর মামলা রুজু করেছে পুলিশ। রাতে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “ওই সার্জেন্টের অভিযোগের ভিত্তিতে কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তও শুরু হয়েছে।” তবে পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনার কথা প্রথমে চেপে যাওয়া হয়েছিল। ঘটনার ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় পরে এ নিয়ে এফআইআর দায়ের করা হয়।
তবে বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলর সঞ্জয়বাবুর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল বেজে যায়। এসএমএসেরও জবাব মেলেনি।
অন্য দিকে, রবিবার রাতে কালীপ্রতিমা বিসর্জনের সময়ে বাজি ফাটানো নিয়ে দুই ক্লাবের সংঘর্ষ হয়। তা আটকাতে গিয়ে মার খায় পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ, তাদের লক্ষ করে ইট, পাথর, বাজি ছোড়া হয়। এতে জখম হন তিন পুলিশকর্মী। ঘটনাটি ঘটেছে লেক থানার গোবিন্দপুর লেনে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে বিসর্জন সেরে এলাকায় ফিরছিলেন স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যেরা। মাঝরাস্তায় যোধপুর পার্কের একটি ক্লাবের শোভাযাত্রার মুখোমুখি হন তাঁরা। পুলিশ জানায়, যোধপুর পার্কের ওই ক্লাবটির সদস্যেরা অন্য ক্লাবটির সদস্যদের লক্ষ করে বাজি ছোড়ে। এর জেরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় লেক থানার চার পুলিশকর্মীর একটি দল। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ করেও ইট, পাথর, বাজি ছোড়া হয়। ঘটনায় তিন পুলিশকর্মী জখম হন। এই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি বলে জানায় পুলিশ।