সেতু ভেঙেছিল কেন, উত্তর জানা নেই এখনও 

ঠিক কী কারণে মাঝেরহাট সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল, এক বছর পরেও তা জানা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share:

সেতুভঙ্গ: ভেঙে পড়েছে মাঝেরহাট সেতু। ফাইল চিত্র

কথা ছিল, এক বছরের মধ্যেই নতুন করে গড়ে তোলা হবে মাঝেরহাট সেতু। ক্যালেন্ডারের পাতায় বছর ঘুরলেও সেই কাজ কবে শেষ হবে, তার উত্তর এখনও অজানা। এরই মধ্যে সেতুর মূল নকশা নতুন করে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে দু’বার যাচাই করানোর প্রস্তাব দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রাজ্যকে তা মানতেও হবে।

Advertisement

ঠিক কী কারণে মাঝেরহাট সেতু হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল, এক বছর পরেও তা জানা যায়নি। রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি না কি কোনও দুর্ঘটনা— ওই বিপর্যয়ের জন্য কে দায়ী, তা জানতে তদন্তকারীরা এখনও তাকিয়ে ‘ন্যাশনাল টেস্ট হাউস’-এর রিপোর্টের দিকে।

লালবাজারের দাবি, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। কী কারণে সেতুটি ভেঙেছিল, ‘ন্যাশনাল টেস্ট হাউস’-এর রিপোর্ট হাতে পেলেই তা বোঝা যাবে। এর আগে রাজ্য ফরেন্সিক বিভাগের তরফে জমা দেওয়া একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সেতুর দুই প্রান্তের বাঁধন আলগা হয়েই মাঝ বরাবর সেটি ভেঙে পড়েছিল। তবে কেন তা হয়েছিল, তা একমাত্র ‘ন্যাশনাল টেস্ট হাউস’-এর রিপোর্টই বলতে পারবে। ওই রিপোর্ট তৈরির জন্য ঘটনাস্থল থেকে ভেঙে পড়া সেতুর চাঙড়, লোহার রড, সিমেন্ট-সহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন ‘ন্যাশনাল টেস্ট হাউস’-এর বিশেষজ্ঞেরা। লালবাজারের এক কর্তা জানান, চলতি মাসেই ওই রিপোর্ট হাতে আসার কথা তাঁদের।

Advertisement

গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে আচমকাই ভেঙে পড়েছিল মাঝেরহাট সেতু। ওই ঘটনায় তিন জন মারা যান। জখম হন ২৭ জন। সে সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিপর্যয়ের জন্য জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর নির্মাণকাজের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। এর পরেই লালবাজারের তরফে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হয় এ ব্যাপারে তদন্ত করতে।

পুলিশ সূত্রের খবর, সিটের সদস্যেরা তদন্তে নেমে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গোয়েন্দাদের সামনে ডাক পড়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে যুক্ত ঠিকাদারদেরও। তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রোর সঙ্গে যুক্ত অফিসার ও কর্মীদেরও। মোট ৯০ জন প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিট।

তদন্তকারীরা জানান, ঠিকাদার ও পূর্ত দফতরের প্রায় ১৪ জন ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ওই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ কী ভাবে করা হত। সেই কাজে কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তারও খোঁজ নেওয়া হয়।

প্রাথমিক ভাবে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার ও অফিসারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে সিট জানতে পারে, ২০১৬ সালে সেতুটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেই সময়েই জানা যায়, ক্ষমতার অতিরিক্ত ভার বহন করতে হচ্ছে সেতুটিকে। সেতুটির সংস্কারের জন্য ২০১৭ সালে প্রথম দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু তাতে কেউ অংশ নেয়নি। ফের দরপত্র ডাকা হলেও সেই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি ভেঙে পড়ে। অফিসারদের এই বয়ান খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সিট সূত্রের খবর।

এ দিকে, পিলার-সহ কাঠামো তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে চললেও রাজ্যকে সেতুর উপরিভাগের মূল নকশা ফের যাচাই করার প্রস্তাব দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, নির্মাণকারী সংস্থা প্রথমে যে নকশা তৈরি করেছিল, তা যাচাই করে ছাড়পত্র দেয় পূর্ত দফতর। এখন সেই নকশা আইআইটি ও অন্য কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে পৃথক ভাবে ফের যাচাই করাতে বলা হয়েছে। এক কর্তার কথায়, ‘‘যে হেতু ওই সেতুর ভেঙে পড়ার ইতিহাস রয়েছে ও সেটিতে গাড়ির চাপ বেশি, তাই পৃথক ভাবে নকশা যাচাই করিয়ে তার সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে রেল। নির্মাণকাজের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে এই প্রক্রিয়া চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন