প্রতীকী ছবি।
বিধি বলছে, মানুষ বহনকারী চলমান যে কোনও যন্ত্রের ক্ষেত্রে ‘সুরক্ষা অডিট’ আবশ্যিক। সে গাড়ি হোক বা উড়োজাহাজ, টয়ট্রেন হোক বা এসক্যালেটর। অথচ বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, কলকাতায় মেট্রো রেলের ক্ষেত্রে চলমান সিঁড়ির সুরক্ষা অডিট চলার জেরে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।
শহর জুড়ে বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনে একের পর এক মেরামতির কাজ চলছে চলমান সিঁড়িগুলির। ফলে অকেজো অবস্থায় রয়েছে সেগুলি। কিন্তু যে সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা, প্রায় কোথাওই তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। কোথাও এই দেরির মেয়াদ এক মাস, কোথাও বা দু’মাসেরও বেশি। আর এই সময়টা হাজার হাজার যাত্রীকে বাধ্য হয়ে ভাঙতে হচ্ছে একাধিক সিঁড়ি। মাঝপথে থেমে যাচ্ছেন বয়স্করা। বাড়ছে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি। অন্তঃসত্ত্বারা হাঁফিয়ে তো যাচ্ছেনই, সিঁড়ির ভিড়ে অসুরক্ষিতও বোধ করছেন।
চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের কথাই ধরা যাক। প্রায় মাসখানেক ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার পর সোমবার বিকেলে চালু হয়েছে সেটি। যত দিন বন্ধ ছিল, যাত্রীদের বেরোনোর জন্য ৮৯টা করে সিঁড়ি ভাঙতে হয়েছে। এই ভাবে ওঠা নামা করতে গিয়ে বহু বয়স্ক যাত্রীই সিঁড়ির মাঝপথে অসুস্থ বোধ করছেন। ফলে থেমে থেমে উপরে উঠছেন তাঁরা। আর তাতেই বিপত্তি। অফিসের ব্যস্ত সময়ে পিছনের যাত্রীরা আটকে পড়ছেন, শুরু হচ্ছে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি।
এর মধ্যে যদি কখনও দু’দিকের মেট্রো একসঙ্গে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে যায়, তা হলে তো আর কথাই নেই। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, সারা দেশে এখন অনেক মেট্রো চলছে। কোথাও এই ধরনের যাত্রী হয়রানি হয় না। লাগাতার অভিযোগের পর মেট্রো কর্তারা শেষমেশ চালু করতে পেরেছেন সেই সিঁড়ি।
শ্যামবাজার বা মহাত্মা গাঁধী রোডের অবস্থা এখনও একই। আড়াই মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের চলমান সিঁড়ি। বেশ কিছু দিন হয়ে গেল মহাত্মা গাঁধী রোডের সিঁড়িরও একই হাল। মেট্রো কর্তৃপক্ষকে প্রশ্ন করলেই বারবার মিলছে একই উত্তর— ‘‘সুরক্ষা অডিট যত দিন না শেষ হচ্ছে তত দিন কিছু করার নেই।’’ মেট্রোর বক্তব্য শুনে যাত্রীরা বলছেন: যে প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে, যে বিধি সুরক্ষা বাড়ায়, সেই প্রযুক্তি-বিধিই যদি যন্ত্রণার কারণ হয়, তবে তাতে অবিলম্বে বদল আনা প্রয়োজন।