ক্যামেরায় বন্দি দুই শহরের গল্পেরা

কলকাতা বলতেই চোখের সামনে কী ভাসে? হাওড়া সেতু, গঙ্গা, প্রিন্সেপ ঘাট? নাকি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হলুদ ট্যাক্সি বা হাতে টানা রিকশা?

Advertisement

অন্বেষা দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৬
Share:

পরিচয়: প্রদর্শনীতে ঢাকার ছবি। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

কলকাতা বলতেই চোখের সামনে কী ভাসে? হাওড়া সেতু, গঙ্গা, প্রিন্সেপ ঘাট? নাকি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হলুদ ট্যাক্সি বা হাতে টানা রিকশা?

Advertisement

আর ঢাকা বলতে?

লালবাগ ফোর্ট, স্টার মসজিদ, লাল দেতলা বাস? নাকি গুলশন, ঢাকেশ্বরী মন্দির, শাহবাগ?

Advertisement

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগের মাসে দুই বাংলার এক দল তরুণ-তরুণীর লেন্সে ধরা পড়েছে এ-পার আর ও-পার বাংলার এই দুই শহরের অলিগলি। চেনা ঢাকা বা কলকাতার বাইরে যে শহরটা রয়েছে, তাঁরা খুঁজে দেখতে চেয়েছেন সেই চেহারাটাই।

কলকাতা এবং ঢাকার দু’টি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে সোমবার থেকে সল্টলেকের কলাঞ্জলিতে শুরু হয়েছে দু’দেশের মোট ৩০ জনের তোলা ছবির প্রদর্শনী। সঙ্গে থাকছে দুই শহরের হারিয়ে যাওয়া গান, কবিতা, খেলার পুতুল, খাবারদাবার— সবই। প্রদর্শনী সেজে উঠেছে ঢাকা-কলকাতার উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু স্থাপত্য ও চেনা জায়গার ছবি দিয়ে। রয়েছে টাঙ্গাইলের পুতুলও। প্রদর্শনী চলবে ১৭ তারিখ পর্যন্ত।

এক একটা ছবির মধ্যে লুকিয়ে আছে নানা গল্প। অলিগলির সে গল্পে যেমন রয়েছে অটো, ট্রাম, দোতলা বাস, রিকশা, তেমনই রয়েছে রাস্তাকে ঘিরে যাঁদের জীবন কাটে সেই কন্ডাকটর, মুটে, পুলিশের রোজনামচাও।

ঢাকা থেকে আসা তরুণ সুলেমান ইসলাম সবুজ বললেন, ‘‘আর দশ বছর পরে শহরটা কতটা পাল্টে যাবে, জানি না। ছোটবেলায় কত মাঠে খেলতাম। এখন ঢাকায় মাঠ কমে গিয়েছে। আমরা যেমন বাবা-কাকাদের থেকে গল্প শুনি, তেমনই এখনকার ছবি ধরে রাখলে পরের প্রজন্মকে দেখাতে পারব।’’

চোখ টানে ঢাকার তাজিব ইসলাম জামির তোলা তিন রঙা ডাকবাক্সের ছবি— ‘সম্পর্ক’। লাল বাক্সে বাংলাদেশ, নীল বাক্সে বিদেশ আর হলদে বাক্সটা ঢাকা শহরের জন্য। মিরপুর ২-এর ওই ছবিতে ডাকবাক্সের সামনে দুঃস্থ পথশিশু। রিকশা-শহর ঢাকার রিকশারা ছবিতে ফিরে ফিরে এসেছে। মিরপুরের বটের গুঁড়ির পাশে বাস-রিকশার ব্যস্ত মোড় যেন এ শহরের অ্যাকাডেমির বাইরেটা! রয়েছে ঢাকার মতিঝিলে গাবতলি বাস ডিপোর একলা লাল দোতলা বাস।

কলকাতার চিত্রশিল্পী অভিজিৎ মারজিত দেখিয়েছেন, মহাত্মা গাঁধী রোডে রাস্তা-ঘেঁষা নাপিত আর নিজস্বী-মগ্ন ময়লা চুলের কিশোরী। বাগবাজারে এক চিলতে গলির মধ্যে ছেলে-মেয়েদের ক্রিকেট খেলা উঠে এসেছে সুজিত দত্তের ক্যামেরায়।

প্রদর্শনীটির মূল উদ্যোক্তাদের এক জন, অম্লানকুসুম গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘শহরগুলো নানা রাস্তার মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে আছে। শহরগুলোকে জানতে হলে সেই কুণ্ডলীটা পরতে পরতে খুলে দেওয়া দরকার। তাই প্রদর্শনীর নাম ‘দ্য স্ট্রিট আনকয়েলড’।’’ তিনি বলেন, ‘‘শহরের কথা বলতে গেলেই আবর্জনা, ধুলো, খারাপ লাগা এ সব বলতে শুরু করি আমরা। শহরকে ভালবাসার চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন ওঁরা।’’

কলকাতার সংস্থাটির প্রতিনিধি মিলি রায় বললেন, ‘‘প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন সল্টলেকের এক জন রিকশাচালক, এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার আর রাস্তার পাশের এক খাবার বিক্রেতা।’’ এই সংস্থা চায়, পথের সঙ্গে জড়িত মানুষেরাও এই প্রদর্শনী থেকে শহরকে সুন্দর রাখার বার্তা পান। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এই আলোকচিত্রীদের অনেকের কাছেই ছবি তোলার ভাবনাও বিলাসিতার পর্যায়ে পড়ে। দেখার চোখ তৈরি করে দিয়ে তাঁদের মন থেকে সমাজের নেতির বোঝা কিছুটা কমাতে চেয়েছে এই সংস্থা।

ঢাকার তওসিফ রহমান খান বললেন, “নতুন নতুন ফ্লাইওভারে দুই শহরই পাল্টে যাচ্ছে। গতি আসছে, সুবিধা বাড়ছে। তাই শহর পাল্টালেই যে খারাপ, তা নয়। কিন্তু পুরনো শহরটাকেও মনে রাখতে চাই। তাই ক্যামেরা নিয়ে ছুটে বেড়াই।” গোলাম রব্বানি-সহ ওঁদের সবার কাছে কলকাতা অনেকটা পুরান ঢাকার মতো। আর সবে তারুণ্যে পা রাখা এ শহরের আবিদা-সুজিতেরা নিজেদের রোজকার পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে তুলে এনেছেন সেখানকার টুকরো ছবি। তাঁদেরই বন্ধু সেলিম জানিয়েছেন, বহু বছরের চেনা জায়গাতেও অনেক কিছু অচেনা পড়ে ছিল। প্রথমে তাঁরা ঘুরে দেখেছেন সে সব জায়গা। পরে তা ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। দুই শহর ছবিতে মিলে গেছে এ ভাবেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন