রবীন্দ্র সরোবরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু গাছ। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
গাছ বাঁচাতে গাছ দত্তক দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল প্রশাসন। বছর দেড়েক আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ‘তরুমিত্র’ নামে এই প্রকল্পের উদ্ধোধনও করেছিলেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত করা গেল না। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্পের জন্য যে কমিটি তৈরি করা প্রয়োজন, সেখানে জটিলতা তৈরি হওয়ার কারণেই প্রকল্পের এই হাল। আধিকারিকদের একাংশের অভিযোগ, প্রকল্প রূপায়ণে ইতিমধ্যে আপত্তি তুলেছেন কিছু নাগরিক। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘গাছ বাঁচানোর পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতেও এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু বেশ কিছু নাগরিক বাধা দিয়েছেন। ফলে প্রকল্পটি এখনও বাস্তবায়িত করা যায়নি। এই প্রকল্প নিয়ে শীঘ্রই আলোচনায় বসব।’’
কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানান, এই প্রকল্পের অন্যতম শর্ত ছিল, বৃক্ষপ্রেমীরা গাছ দত্তক নিতে চাইলে কেএমডিএ-কে তা জানাবেন। কোন গাছ দত্তক দেওয়া হবে, তা কর্তৃপক্ষ ঠিক করবেন। দত্তক নেওয়ার শর্ত, গাছ প্রতি বছরে ১০০০ টাকা দিতে হবে। তা দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ হবে গাছের। একটি গাছ এক জনই দত্তক নিতে পারবেন। শর্তানুযায়ী, যে ব্যক্তি গাছ দত্তক নেবেন, তিনিই গাছের উপরে নজর রাখবেন। দত্তক নেওয়া গাছের সামনে কাঠের ফলক তৈরি করে গাছের নাম এবং নিজের নাম লিখে রাখা যাবে। ওই গাছ বরাবর একটি সীমানাও চিহ্নিত করতে পারবেন তিনি। গাছটির বড় ধরনের কোনও সমস্যা হলে তিনি কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। দত্তক নেওয়ার জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে গাছটি যদি পড়ে যায়, তবে পরিবর্তে আরও একটি গাছ দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, রবীন্দ্র সরোবরে প্রায় ১৫,০০০টি গাছ রয়েছে। কয়েকটি শিরিষ গাছ নষ্ট হলেও বেশ কিছু গাছ বাঁচানো হয়েছে। দত্তক নেওয়ার ব্যবস্থা হলে আরও বেশি নজর রাখা যাবে। ফলে সমস্যা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থাও নেওয়া যেতে পারে। এই প্রকল্প উদ্বোধনের পরেই কর্তৃপক্ষের কাছে ১৫টি আবেদন জমা পড়েছিল। মূলত সরোবরের ভিতরের বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যেরাই এই প্রকল্পে সাড়া দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায়, তা এখনও কার্যকর হয়নি বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের।
সমস্যা কোথায়? গাছ দত্তক নেওয়ার ব্যাপারে কেএমডিএ উদ্যোগী হলেও এই ধরনের নজরদারির জন্য প্রয়োজন একটি কমিটির। যাঁরা গাছ দত্তক নিচ্ছেন, তাঁরা ছাড়াও কয়েক জন পরিবেশবিদ এবং কেএমডিএ-র কয়েক জন আধিকারিক এই কমিটিতে থাকার কথা। কাকে কোন গাছ দেওয়া হবে, স্থির করবেন তাঁরাই। কোন গাছের অবস্থা কী রকম, তা-ও জানাবেন তাঁরাই। কিন্তু এই কমিটি তৈরির জন্য আবেদন করা হলেও অনেকেই আসেননি। এমনকি, পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় প্রাতর্ভ্রমণকারীর একাংশ এই কমিটি তৈরির প্রতিবাদ করেন বলেও কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। রবীন্দ্র সরোবরের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হাইকোর্ট মনোনীত সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অর্থের মাধ্যমে গাছের দত্তক নেওয়ার বিষয়টির আমরা বিরোধী। অর্থের মাধ্যমে সংস্থার লাভ হতে পারে, কিন্তু গাছের কোনও লাভ হবে না। বর্তমানে সরোবরে বেশির ভাগ গাছই অযত্নে রয়েছে। সেগুলি যখন-তখন ভেঙে পড়তে পারে। বৃক্ষপ্রেমীরা অর্থ দিয়ে সেই গাছ দত্তক নেবেন কেন?’’ তাঁর দাবি, কেএমডিএ নিজেরাই নজরদারি করতে পারেন। অর্থের বিনিময়ে দত্তক নেওয়ার প্রয়োজন কোথায়, প্রশ্ন তাঁর।