দলে থেকেও পড়ুয়া যেন একা হয়ে না-পড়ে, বলছে কর্মশালা

যত দিন যাচ্ছে তা সার্বিক সমস্যার হচ্ছে। যার মোকাবিলায় স্কুল-শিক্ষক-অভিভাবক, সকলের দায়িত্ব পালনের কথা বলল সভাগৃহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:২৮
Share:

আলোচনা: মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ওই কর্মশালায়। নিজস্ব চিত্র

শ্রেণিকক্ষে মানসিক স্বাস্থ্যের বদল চেয়ে শহরে এক কর্মশালা হয়ে গেল। শনিবার পার্ক স্ট্রিটের সেই কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন শহর ও শহরতলির স্কুলের প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানালেন, বিভিন্ন সময়ে অস্থির করে তোলা খবর কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

Advertisement

যত দিন যাচ্ছে তা সার্বিক সমস্যার হচ্ছে। যার মোকাবিলায় স্কুল-শিক্ষক-অভিভাবক, সকলের দায়িত্ব পালনের কথা বলল সভাগৃহ।

এ দিন আনন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আয়োজিত ওই কর্মশালায় লা মার্টিনিয়র, কারমেল হাইস্কুল, রামমোহন মিশন হাইস্কুল, ন্যাশনাল জেমস, সেন্ট থমাস গার্লস-সহ বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল, শিক্ষক-প্রতিনিধিরা যোগ দেন। তাঁদের উপস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের নানা দিক এবং করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন বেসরকারি হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচার

Advertisement

কর্মসূচির প্রধান সমীর পারেখ। সেই সূত্রে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানান, স্কুলের প্রতিনিধিরা। একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল জানান, সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর সঙ্গে অন্য ছাত্রীর বচসা হয়। এর পরে সকলের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয় ওই ছাত্রী। পরে সে ধারালো কিছু দিয়ে নিজের হাত কেটেছে বলে খবর পান স্কুল কর্তৃপক্ষ। নিজেকে আঘাত করার প্রবণতা বাকি পড়ুয়াদের মধ্যেও বাড়ছে বলে মত দেন অন্য স্কুলের প্রতিনিধিরা।

ব্যারাকপুরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের প্রিন্সিপাল সোনিয়া গিদলা উদ্বেগ প্রকাশ করেন পড়ুয়াদের ভাষা নিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘কথার মাঝে খারাপ কথা বলার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ওদের। ছাত্রদের ধারণা, খারাপ কথা বলা মেধাবী পড়ুয়ার পরিচয়!’’ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, মোবাইলের ব্যবহার পড়ুয়াদের বিপন্ন করছে বলে মত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘গ্রুপে থেকেও ওরা বড্ড একা।’’

এ প্রসঙ্গে শিক্ষক এবং অভিভাবক, দু’পক্ষেরই ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক স্কুলের প্রিন্সিপাল। কারমেল হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল সিস্টার মারিয়া নিথিকা বলেন, ‘‘ছোট পরিবারে বাবা-মা দু’জনেই ব্যস্ত। অনেক সময়ে বাবা-মায়েরাও হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে ব্যস্ত থাকেন। ফলে কথা বলার লোক নেই, খেলার লোক নেই।’’ রামকৃষ্ণ মিশন হাইস্কুলের প্রিন্সিপাল সুজয় বিশ্বাসের কথায়, ‘‘এগুলো যে সমস্যা তা উপলব্ধি করে মানসিক অস্থিরতা নিয়ে আরও কথা বলতে হবে।’’

খানিক আত্মসমালোচনার সুর ন্যাশনাল জেমস হাইস্কুলের অধ্যক্ষা কেয়া সিংহের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মনোভাবেও সমস্যা রয়েছে। ছাত্রকে বকুনি দেওয়ার অর্থ, তাকে অনুৎসাহিত করা নয়। অনেক সময়ই শুনি, ছোট ছেলে ক্লাসে কাঁদছে তাই তাকে অন্য স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর প্রভাব ওই বাচ্চার উপরেও পড়ে।’’

এ দিন কর্মশালায় চিকিৎসক সমীর বলেন, ‘‘এক ছাদের নীচে এতগুলি স্কুলের প্রিন্সিপাল এ সব নিয়ে আলোচনা করছেন, এটা খুব ভাল দিক। স্কুল, শিক্ষক, অভিভাবক, কেউ আলাদা নন। সামাজিক এই সমস্যার সমাধানে সকলকে একজোট হতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন