COVID-19

সাহায্য চেয়ে বার্তা পেলে রোজার মধ্যেই ছুটছেন মতিনরা

দিন পাঁচেক আগের সেই ঘটনায় এর পরে সারা রাত ঘুরে পরদিন সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বৃদ্ধাকে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়েছিলেন ওবাইদুল্লাহ।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২১ ০৫:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাত তখন দেড়টা। সবে ঘুমিয়েছেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা, পেশায় অপটোমেট্রিস্ট মহম্মদ ওবাইদুল্লাহ। রোজা রাখছেন, অতএব ভোরে সেহরি খেতে উঠতে হবে। কিন্তু তার অনেক আগেই মোবাইলের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। খবর এসেছিল, মুদিয়ালির বাসিন্দা এক বৃদ্ধা প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। ছুটলেন সেখানে। দিন পাঁচেক আগের সেই ঘটনায় এর পরে সারা রাত ঘুরে পরদিন সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই বৃদ্ধাকে ভর্তির ব্যবস্থা করিয়েছিলেন ওবাইদুল্লাহ। তিনি অবশ্য কোভিডে আক্রান্ত ছিলেন না।

Advertisement

কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি থাকা কোভিড আক্রান্ত মহিলার সাতটি রেমডেসিভিয়ার ইঞ্জেকশন দরকার। কয়েক দিন আগে ফেসবুক পেজে এই বার্তা দেখে আর বসে থাকেননি হুগলির হরিপালের বাসিন্দা, বি-টেক পড়ুয়া মহম্মদ রেজ়াউল ইসলাম। রোজা রেখেও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ওই বহুমূল্য ইঞ্জেকশন পৌঁছে দিয়েছিলেন রেজ়াউল। উপোস ভেঙে শনিবার রাতে মালদহের চাঁচল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে এক শিশুকে রক্ত দিয়ে আসেন পোস্ট অফিসে কর্মরত, মালদহের বাসিন্দা মহম্মদ মতিন।

রেজ়াউল, ওবাইদুল্লাহ বা মতিনরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়াই তাঁদের এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে। ফেসবুকের সেই পেজের নাম ‘বাপকে বলো’। বছরখানেক আগে শুরু হওয়া ওই পেজের এখন সক্রিয় সদস্য চল্লিশ জন। ফলোআপে রয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার। এই পেজের মূল ভাবনা যাঁর, তিনি জাপানে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গবেষণারত সাগির হোসেন।

Advertisement

যে ভাবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেমডেসিভিয়ার ইঞ্জেকশন হাতে পেয়ে গিয়েছিলেন, তাতে আপ্লুত কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মধুমিতা দাসের আত্মীয় পল্লব বৈদ্য। তাঁর কথায়, “আমার এক বন্ধু ওঁদের ফেসবুক পেজে ইঞ্জেকশনের জন্য লিখেছিলেন। রেজ়াউলকে আমি চিনি না। কিন্তু আপন ভেবে বার বার ফোন করে রেমডেসিভিয়ার ইঞ্জেকশন হাসপাতালে পৌঁছিয়ে দেওয়ার যে ব্যবস্থা করেছেন, ওঁর সেই সাহায্য জীবনেও ভুলব না।”

আর মহম্মদ ওবাইদুল্লাহর কথায়, “সেই রাতটা জেগে মুদিয়ালির ওই অসুস্থ বৃদ্ধাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে পেরে খুব শান্তি পেয়েছিলাম। অতিমারির এই বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই তো রমজান পালনের আসল সার্থকতা।” চাঁচলের গুরুতর অসুস্থ সেই শিশুকে রক্ত দিয়ে মহম্মদ মতিন আবার বলছেন, “রক্ত দিয়েও পরদিন রবিবার ফের রোজা রেখেছি। কোনও কষ্ট হয়নি। এ রকম কাজ আরও করতে চাই।”

জাপান থেকে ফোনে সাগির বলছেন, “এই পেজের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে মুসলমানই বেশি। ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি এবং জেনারেল কোর্সের পড়ুয়া ছাড়া চাকরিজীবীরাও রয়েছেন। কোভিড যে হারে দেশে ছড়িয়েছে, তাতে সমস্ত মানুষকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের ফেসবুক পেজে আমিও নিয়মিত নজর রাখছি। সক্রিয় সদস্যদের সঙ্গে ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখছি। কী ভাবে আক্রান্তদের পাশে থাকা যায়, সেটাও সদস্যদের বোঝাচ্ছি। রোজার উপবাসের জন্য এ কাজে কোনও ছেদ পড়তেই পারে না। কারণ, মানুষের সেবার মধ্যে দিয়েই রমজান পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন