Narendra Modi

প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি, বিশ্বাসই হচ্ছে না ওঁদের

সমীরণ জানান, তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, আধ ঘণ্টার মধ্যে ধোয়া ও শুকোনোর কাজ করে ফেলতে হবে।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ১১:৩০
Share:

কাজে ব্যস্ত সমীরণ দাস (বাঁ দিকে) এবং বিষ্ণুদেব রাম। নিজস্ব চিত্র

‘‘আধ ঘণ্টায় জামাকাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে দিতে পারবেন?’’

Advertisement

‘‘প্রধানমন্ত্রীর ডিউটি করতে হবে।’’

পরিচিতের প্রথম প্রশ্নে এক বাক্যে ‘হ্যাঁ’ বললেও পরের কথায় হকচকিয়ে গিয়েছিলেন বছর ঊনচল্লিশের যুবক। ভেবেছিলেন, কথাটা নিছকই রসিকতা। তবে পরে জানতে পারেন, তাঁকে এক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর জামাকাপড় ধোয়া এবং ইস্ত্রির কাজ করতে হবে। শনিবার সকালে এমন কাজের কথা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না বেলুড় বাজারের লন্ড্রির দোকানি সমীরণ দাস। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই সালকিয়ার বাড়ি থেকে তিনি চলে এসেছিলেন বেলুড় মঠে। আধার কার্ড দেখে তবে তাঁকে কাজের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। যা নিয়ে ওই যুবক পৌঁছে যান অতিথি নিবাসে।

Advertisement

সমীরণ জানান, তাঁকে বলে দেওয়া হয়েছিল, আধ ঘণ্টার মধ্যে ধোয়া ও শুকোনোর কাজ করে ফেলতে হবে। তিনি লন্ড্রিতে যাওয়ার সময়ে তাঁর সঙ্গে দু’জন পুলিশকর্মীও যাবেন। সোমবার দোকানে জামা-প্যান্ট ভাঁজ করার ফাঁকে সমীরণ বললেন, ‘‘কোনও কাজ করতে হয়নি ঠিকই। তবে টেনশন হচ্ছিল। আর প্রধানমন্ত্রীকে একেবারে সামনে থেকে দেখব, একসঙ্গে ছবি তুলব, কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে তাঁর প্রায় গা ঘেঁষে গিয়েছেন, এখনও যেন তা বিশ্বাস হচ্ছে না বছর ষাটের বিষ্ণুদেব রামের। সপ্তাহে তিন দিন মঠে যান জুতো সেলাই ও পালিশের কাজ করতে। এ দিন রাস্তার ধারে জুতো সেলাইয়ের মাঝেই জানালেন, শনিবার সকালে মঠের এক কর্মীর ফোন পেয়ে লুঙ্গি, জামা আর গলায় গামছা ঝুলিয়ে সরঞ্জাম-সহ সেখানে হাজির হয়েছিলেন তিনি। বিষ্ণুদেব বললেন, ‘‘সবাই বললেন, জামা-প্যান্ট পরে আসতে। তখনও জানতাম না, কাজটা কী। দুপুরে গিয়ে শুনি, প্রধানমন্ত্রীর ডিউটি। ভাবছিলাম, এটা কি সত্যি!’’

আরও পড়ুন: ভিক্টোরিয়ার নাম বদলের দাবি নিয়ে শুরু জল্পনা

মোদী যে অতিথি নিবাসে ছিলেন, তারই একতলায় সিঁড়ি লাগোয়া ঘরে রাত কেটেছে সমীরণ ও বিষ্ণুদেবের। সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষায় থেকে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ভেজানো দরজা ফাঁক করে দেখেছিলেন, দোতলায় উঠছেন প্রধানমন্ত্রী। বিষ্ণুদেব বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর কাজ করতে হয়নি। তবে এক অফিসারের টাইয়ের পিনটা সারিয়ে দিয়েছিলাম।’’ রাতে খাওয়াদাওয়া সেরে দু’জনেই বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন, মোদীকে কাছ থেকে দেখার সেই অভিজ্ঞতার কথা। রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে সমীরণ ও বিষ্ণুদেব জানতে পারেন, মন্দিরে যাওয়ার জন্য তৈরি মোদী। তখনই অতিথি নিবাসের কর্মীদের সঙ্গে তাঁরা সন্ন্যাসীদের কাছে আবদার করেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলার। মোদী রাজি হতেই তাঁরা সকলে মিলে অতিথি নিবাসের উঠোনে লাইন দিয়ে দাঁড়ান। ৮টা নাগাদ নীচে নেমে মোদীও তাঁদের মাঝে গিয়ে দাঁড়ান। সমীরণ বলেন, ‘‘উনি নেমে বললেন, এত লোক। তাড়াতাড়ি করো।’’ এর পরেই উঠল ছবি।

কখনও স্বপ্নে না ভাবলেও সমীরণ ও বিষ্ণুদেব এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ফ্রেমে। ছবি হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় দু’জন। বিষ্ণুদেব বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর পাশে আমি, কেউ বিশ্বাসই করছে না!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement