প্রতীকী ছবি।
বাড়িতে একা ছিলেন প্রৌঢ়া গৃহকর্ত্রী। হঠাৎই হাজির দুই যুবক। গৃহকর্ত্রীকে তারা জানাল, সস্তায় বাড়িতে বসেই পুরনো গয়না, বাসনপত্র পালিশ করে তারা। কথার ছলে ভুলে ওই মহিলাও সোনার গয়না, বাসন বার করে দিলেন। সেই পালিশের ফাঁকেই কয়েক লক্ষ টাকার গয়না নিয়ে উধাও হয়ে গেল দুই যুবক।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে গিরিশ পার্ক থানা এলাকার প্রতাপ বসু লেনে। রুপালি সাধু নামে ওই প্রৌঢ়ার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। শুধু এই ঘটনাটিই নয়। সোমবার দুপুরে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার রমানাথ বিশ্বাস লেনেও একই ভাবে এক বৃদ্ধার থেকে গয়না হাতিয়ে পালিয়েছে দুই যুবক। পুলিশের সন্দেহ, দু’টি ঘটনাতেই অভিযুক্তেরা একই ব্যক্তি।
বস্তুত, কেপমারি শহরে নতুন নয়। কখনও গয়না পালিশের নামে, কখনও পুলিশ সেজে, আবার কখনও রাস্তায় বা ট্রামে-বাসে আলাপ জমিয়ে কাজ হাসিল করে দুষ্কৃতীরা। শুধু শহরতলি বা জেলা নয়, ভিন্ রাজ্য থেকেও শহরে আনাগোনা লেগে থাকে কেপমারদের। পুলিশি ধরপাকড় শুরু হলে তাদের উপদ্রব কিছুটা কমে। আবার সময় গ়ড়ালে ফিরে আসে দুষ্কৃতীরা।
গিরিশ পার্ক ও আমহার্স্ট স্ট্রিটের ঘটনার পরে খবর গিয়েছে গোয়েন্দা বিভাগেও। সম্প্রতি কোন কোন কেপমার জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে, শুরু হয়েছে তার খোঁজ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘দু’টি ঘটনারই তদন্ত শুরু হয়েছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কিছু সূত্রও মিলেছে।’’
কী ভাবে কাজ সারে এই দুষ্কৃতীরা?
পুলিশ সূত্রের খবর, গরমে দুপুরের দিকেই হানা দেয় এই কেপমারেরা। নিশানায় থাকেন মূলত বাড়িতে একা থাকা প্রৌঢ়া বা বৃদ্ধারা। আগে থেকে এলাকায় ঘুরে, খোঁজখবর নিয়ে তবেই হানা দেয় এরা। বয়স্ক মহিলাদের কথার ফাঁদে ভুলিয়ে কখনও গয়না পালিশ, কখনও পুরনো গয়নার বদলে নতুন গয়না দেওয়ার টোপ দেখায়। তার পরে কাজের ছুতোয় গয়না হাতসাফাই করে পালায় বা ঝকঝকে ঝুটো গয়না গছিয়ে চম্পট দেয়।
প্রায় দু’দশক আগে অবসরের পরে কলকাতা বিমানবন্দর এলাকায় দোকান খুলেছিলেন এক পুলিশকর্মী। দুই অপরিচিত ব্যক্তি সস্তায় হার বিক্রির টোপ দিয়ে তাঁকে ঝুটো পিতলের গয়না গছিয়ে চলে গিয়েছিল। সে দিনের পর থেকে প্রায়ই ঘনিষ্ঠ মহলে কপাল চাপড়ে তিনি বলতেন, ‘‘এত বছর পুলিশে চাকরি করেও এমন ভাবে ঠকে গেলাম!’’
তবে শুধু ঠকে যাওয়ার বিপদই নয়। পুলিশের একাংশ বলছে, এই ধরনের পরিচয় দিয়ে নির্জন দুপুরে হানা দিতে পারে লুটেরারাও। লুঠে বাধা পেয়ে বা বিপদ এড়াতে খুনের ঘটনাও বিরল নয়। বছরখানেক আগে ভোরবেলা ঘরে ঢোকা চোরেদের হাতেই খুন হয়েছিলেন পাইকপাড়ার বৃদ্ধা ফুলরেণু চৌধুরী। তারও আগে উল্টোডাঙার এক আবাসনে ভরদুপুরে লুটেরাদের হাতে খুন হয়েছিলেন এক বৃদ্ধা।
এই পরিস্থিতিতে পুলিশের পরামর্শ, বা়ড়িতে একা থাকলে অপরিচিতকে ঢুকতে দেবেন না। গয়না বা বাসন পালিশ করাতে হলে পরিবারের লোককে নিয়ে চেনা দোকানে যান। স্থানীয় থানার নম্বর কাছে রাখুন। প্রয়োজনে থানার পাশাপাশি ১০০ ডায়ালে ফোন করে পুলিশের সাহায্য চান।