মায়ের কোলে ঐত্রী। — ফাইল চিত্র।
একটা নয়, দুটো নয়, তিন তিনটে মৃত্যু শহরের তিন নামী বেসরকারি হাসপাতালে। প্রতি ক্ষেত্রেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। যার জেরে ধুন্ধুমার কাণ্ড শহরের তিন প্রান্তে।
মুকুন্দপুর আমরি, অ্যাপোলো এবং উডল্যান্ডস। ভুল চিকিত্সার অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মৃতদের পরিবারগুলি। যদিও গাফিলতি মানতে নারাজ হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষ।
কাঠগড়ায় মুকুন্দপুর আমরি
জ্বর নিয়ে গত সোমবার কামালগাজির বাসিন্দা আড়াই বছরের ঐত্রী দে-কে মুকুন্দপুরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরিবারের দাবি,শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল। অভিযোগ, বুধবার সকালে তাকে দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এর পরই আচমকা আড়াই বছরের ঐত্রীর মৃত্যু হয় বলে দাবি আত্মীয়দের। কী ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল জানতে চাইলে, জবাব দিতে রাজি হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিক্ষুব্ধ পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। পরে যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে মৃতের পরিবার।
কাঠগড়ায় উডল্যান্ডস
গত ১৫ জানুয়ারি মা উড়ালপুলে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বছর ৩৪-এর গৌতম পাল। প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছিল লিলুয়ার বাসিন্দা গৌতমকে। পরে স্থানান্তরিত করা হয় উডল্যান্ডসে। পরিবারের দাবি, ভর্তির সময়ই পঞ্চাশ হাজার টাকা নেওয়া হয়। চিকিত্সাও শুরু হয়। মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ বাড়িতে ফোন করে হাসপাতাল জানায়, গৌতমের অবস্থার অবনতি হয়েছে। রাত সাড়ে দশটায় মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর কারণ জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।চিকিত্সায় গাফিলতির অভিযোগে, মৃতের পরিবার আলিপুর ও বেনিয়াপুকুর থানায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করেছে।
আরও পড়ুন, হাসপাতাল ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতার ২
সন্তানকে কোলে নিয়ে গৌতম পাল। — ফাইল চিত্র।
অভিযুক্ত অ্যাপোলো
অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধেও ফের চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর দেড় ঘণ্টা ফেলে রাখা হয় রোগীকে। সে কারণেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি আত্মীয়দের। কসবার বাসিন্দা বছর ৫৪-র ওই ব্যক্তির নাম অলোক দাস। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের কর্মী ওই ব্যক্তি শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। পরিবার ফুলবাগান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, প্রথমেই পরিবারকে জানানো হয়েছিল হাসপাতালে কোনও বেড ফাঁকা নেই। চিকিৎসকেরা যথা শীঘ্রই রোগীকে পরীক্ষাও করেন। তখনই রোগীর পালস মেলেনি বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।
অ্যাপোলোতে মৃত্যু হয় অলোক দাসের। — নিজস্ব চিত্র।
ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল কলকাতা। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপোলোর সেই কাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও।অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে শুধু চিকিত্সায় গাফিলতি নয়, জালিয়াতির অভিযোগও তুলেছিল মৃতের পরিবার।
আরও পড়ুন, জরুরি রোগীর পরিবারকে বুঝিয়ে বলাও
ঘটনার জেরে হাসপাতালের সিইও পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল রূপালি বসুকে। মুখ্যমন্ত্রীও শহরের সব বেসরকারি হাসপাতালের সিইওদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। হাসপাতালগুলিতে মানবিক হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন।
কিন্তু, ফের বুধবার শহরে নতুন করে তিন হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতিরঅভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালগুলির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়াও মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে ফের এক বার প্রশ্ন উঠছে বেসরকারি হাসপাতালগুলির পরিষেবা নিয়ে।