অসুস্থ সেই বাঘ। — নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনের জঙ্গলে ঢোকার আগে মনে-মনে তাঁর পায়ে মাথা ঠেকান জেলে, মউলেরা। আর সেই পায়েই কি না ছুরি-কাঁচি চালালেন শহরের ডাক্তারবাবুরা!
বাদাবনের জঙ্গল হলে এক থাবাতেই নির্ঘাত এই ‘বেয়াদবি’র সাজা দিতেন দক্ষিণরায়। কিন্তু এ যাত্রা হাঁটুর ব্যথায় কাবু হয়ে ‘তিনি’ যে আলিপুর চিড়িয়াখানার হাসপাতালে বন্দি! তার উপরে ডাক্তারবাবুদের ইঞ্জেকশনে, দু’চোখ ভরে ঘুম।
চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, গত বছরের শেষ দিকে কুলতলি থেকে ওই পূর্ণবয়স্ক বাঘটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ঝড়খালিতে বন দফতরের উদ্ধার-কেন্দ্রে তার ঠাঁই হয়। পরে বন দফতরের কর্মীরা খেয়াল করেন, কেমন যেন খুঁড়িয়ে হাঁটছে সে। সমস্যাটা জরিপ করে সারিয়ে তুলতে বনের বাঘকে অতঃপর শহর কলকাতায় পাঠানো হয়।
ওয়েস্টবেঙ্গল জু অথরিটির সদস্য-সচিব বিনোদকুমার যাদব জানান, বাঘটির সামনের হাঁটুতে জল জমছিল বলেই হাঁটতে অসুবিধা হচ্ছিল। আলিপুরের হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, বাঘটির পায়ে কোনও পরজীবীর সংক্রমণ নেই। তবে ডান পায়ের পেশীর ‘টিস্যু’গুলো ছিঁড়ে গিয়ে ‘টিউমারে’র মতো দলা পাকিয়েছে, যাকে ‘ফাইব্রয়েড’ বলা হয়। তা থেকেই পুঁজ জমছিল পায়ে।
মঙ্গলবার অস্ত্রোপচারে সেই ‘ফাইব্রয়েড’ বাদ গিয়েছে। অস্ত্রোপচার সফল ও বাঘটির অবস্থা স্থিতিশীল বলে এ দিন জানান চি়ড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা রুদ্রদেব মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের টিম গড়া হয়েছিল। বাকি দু’জন— সুব্রত সাঁকি ও গোপাল সমন্ত। সকলেই বন্য জন্তুর শল্যচিকিৎসায় চৌখস। এ ছাড়া, চিড়িয়াখানায় যাঁদের জিম্মায় বাঘটির চিকিৎসা চলছিল, সেই শিবানী ভট্টাচার্য, পঙ্কজ কুমার, অর্ণব মাজিরাও ওটি-তে ছিলেন। বেলা ১২টায় ঘুমপাড়ানি ইঞ্জেকশন দিয়ে ওটি-পর্ব চলে বেলা ১২টা ৫০ মিনিট থেকে ১টা ৫০ মিনিট অবধি। বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ রোগীর হুঁশ ফিরেছে। তবে রাত পর্যন্ত অস্ত্রোপচারের ধকলে সে
খানিক কাহিল।
চিকিৎসকদের এক জন বলেন, ‘‘সেরে ওঠার পর্বটাও গুরুত্বপূর্ণ। বনের বাঘের মন ভাল রাখতে বেশি মানুষের সংস্রব ভাল নয়। সুতরাং কেউই তাকে খামোখা বিরক্ত করবে না।’’ ঠিক হয়েছে, শুধু খেতে দেওয়ার সময়ে ডাক্তারবাবুরা দেখে আসবেন। তবে সিসিটিভি-তে নজরদারি চলবে তার উপরে। বিশ্রাম ও গরু-মোষের মাংসের স্বাভাবিক ‘ডায়েটে’ মাস কয়েকেই সে দ্রুত সেরে উঠবে বলে ডাক্তারবাবুদের আশা। শহুরে খাঁচার ঘেরাটোপ থেকে সোঁদরবনের রাজা এর পরেই বন্য জীবনের মূল স্রোতে ফিরবে বলে মনে করছেন তাঁরা।