পুলিশ মোড়া ব্লকের ভোট কি বিধানসভার মহড়া

চার দিকে থিকথিক করছে রাজ্য পুলিশ। এবং তাঁরা সক্রিয়। যেন মাছি গলার উপায় নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৬ ০০:৩৪
Share:

খাকি-উর্দিতে ছয়লাপ। রবিবার, সল্টলেকের এ ই ব্লকের ভোটে। — নিজস্ব চিত্র

চার দিকে থিকথিক করছে রাজ্য পুলিশ। এবং তাঁরা সক্রিয়। যেন মাছি গলার উপায় নেই।

Advertisement

বিস্মিত এ ই ব্লকের বাসিন্দারা। কারণ, এর আগে সল্টলেকে বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে বাসিন্দাদের ভোট দিতে না পারা এবং পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। বিশেষত ছ’মাস আগে বিধাননগর পুর-নিগমের নির্বাচনে সেই অভিযোগ ছিল স্পষ্ট।

অথচ রবিবার একটি ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচন ঘিরে পুলিশের এই সক্রিয়তা কি আদতে বিধানসভা নির্বাচনের মিনি মহড়া? কারণ, খোদ পুলিশকর্তাদেরই দাবি, নির্বাচনী বিধি জারি হয়ে গিয়েছে। এই সময়ে কোনও ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

Advertisement

এ দিন সল্টলেকের এ ই (পার্ট টু) ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি নির্বাচন ছিল। ভোটার সর্বসাকুল্যে শ’চারেক। অথচ সকাল থেকেই দেখা যায়, পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ গোটা ব্লক। দফায় দফায় চলছে টহলদারি। ঘটনাচক্রে এ দিনই কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ-সহ বাসিন্দাদের একটি অংশ সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আবেদন রেখেছেন, বিধানসভা ভোটে বহিরাগত বাউন্সারদের বদলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোটদান সুনিশ্চিত করা হোক।

যদিও এ দিনের পুলিশি সক্রিয়তা নিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যেই শুরু হয়েছে চাপান-উতোর। সেই সূত্রেই ভোট ঘিরে ব্লকে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ই (পার্ট টু) ব্লকের ভোটে দু’টি প্যানেলের প্রতিনিধিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এক পক্ষের অভিযোগ, এই নির্বাচন ব্লকে বাসিন্দাদের নিজেদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের ভোট। সেখানে কোনও গোলমাল হয় না। অথচ পুরনো কমিটি অশান্তির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে পুলিশকে। ব্লক অ্যাসোসিয়েশনের বিদায়ী কমিটির কর্মকর্তা তাপস সেনগুপ্তের পাল্টা দাবি, ‘‘পুলিশ নিজে থেকে ফোন করে ব্লকের ভোট সম্পর্কে জেনেছে। আমরা কারও বিরুদ্ধে পুলিশে কোনও অভিযোগ করিনি।’’

কিন্তু অশান্তির আশঙ্কা কেন ছিল? পুরনো কমিটির একাংশের অভিযোগ, এক তৃণমূল নেতার নাম করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট প্যানেলের প্রতিনিধিদের ভোট না দিলে পরে পরিস্থিতি প্রতিকূল হবে বলে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনাচক্রে ওই ব্লক বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্তের ওয়ার্ডের(৩০ নম্বর) মধ্যে পড়ে। ওই ব্লকেরই বাসিন্দা মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘বিদায়ী কমিটি অশান্তির আশঙ্কা করে পুলিশকে জানিয়েছেন। এর মধ্যে আমাদের দলকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই এই পুলিশি ব্যবস্থা। আবাসিকেরা বিষয়টি ভাল
ভাবে নেননি।’’

পুলিশ যদিও বাসিন্দাদের যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, ভোটের জন্য খুব বেশি হলে বিভিন্ন শিফ্‌টে গড়ে ৪০-৫০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু বিধানসভা ভোটের জন্য রুটমার্চও ছিল। তাই আপাতদৃষ্টিতে বিশাল বাহিনী বলে মনে হয়েছে।

কিন্তু ব্লকের ভোটে পুলিশ কেন? নাকি এটা বিধানসভা ভোটের আগে মহড়া? বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ব্লকের ভোট নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। এবং এটা কোনও মহড়াও নয়। তবে নির্বাচনী বিধি জারি হয়েছে। এই সময়ে কোনও রকমের ঝুঁকি নেওয়া যাবে না। তাই দিনভর নজরদারি রাখা হয়েছে।’’

স্থানীয়দের কথায়, আগেও নির্বাচন কমিশন অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে এ বার মনে হচ্ছে, কিছু পদক্ষেপ করা হবে। এ দিন এ ই ব্লকে পুলিশের সক্রিয়তা তাঁর একটা মহড়া মাত্র বলেই দেখছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন