TMC Councilor

TMC Councillor beaten: বাঁশ-লাঠি দিয়ে ‘মার’ তৃণমূল কাউন্সিলরকে

তৃণমূলের কাউন্সিলরকে মারধরের অভিযোগ উঠল এক নির্দল কাউন্সিলরের স্বামীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৩৪
Share:

হাতাহাতি: গন্ডগোলের সেই দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র।

বেহালার চড়কতলায় সিন্ডিকেটের রেষারেষিকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের রেশ এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই ফের তৃণমূলের কাউন্সিলরকে মারধরের অভিযোগ উঠল এক নির্দল কাউন্সিলরের স্বামীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল, বৌবাজার থানা এলাকার কলুটোলা স্ট্রিট ও হরিণবাড়ি লেনের মোড়। শুক্রবার বিকেলের ওই ঘটনায় রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত গাড়ি চলাচল সংক্রান্ত বচসাকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেলে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ জসিমুদ্দিনের ভাই রাজ স্কুটারে চেপে যাচ্ছিলেন। সেই সময়ে এলাকার এক চটি ব্যবসায়ী মিরাজ গাড়িতে করে মাকে ডায়ালিসিস করাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যানজটের মধ্যে মিরাজের গাড়ির জন্য রাজের স্কুটার আটকে যায় বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বচসা ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়। যা গড়ায় মারামারিতে। রাজের মার খাওয়ার খবর পেয়ে ভাইকে বাঁচাতে অনুগামীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন জসিমুদ্দিন। অভিযোগ, সেই সময়ে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর আয়েশা কানিজের স্বামী ইরফান আলি তাজের অনুগামীরা জসিমুদ্দিনের উপরে হামলা চালায়। বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে। ইরফান আলি তাজের পাল্টা অভিযোগ, হামলা চালিয়েছে জসিমুদ্দিনের অনুগামীরাই। স্বামীর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়েশা কানিজও। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে সে দিন এলাকা কার্যত রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চলছে তদন্ত।

ঘটনাচক্রে, স্ত্রী আয়েশা কানিজ ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর হলেও তিনি নিজে তৃণমূল নেতা বলে দাবি করেছেন ইরফান আলি তাজ। তিনি বলেন, ‘‘মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল আয়েশাকে টিকিট না দেওয়ায় ও নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে জিতেছে। কিন্তু আমি তৃণমূলে ছিলাম, তৃণমূলেই আছি। আমার বুকে তৃণমূল আছে।’’ ফলে
শুক্রবারের ওই সংঘর্ষকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, নির্দল হয়ে জেতার পরেই ইরফান আলি তাজের স্ত্রী আয়েশা কানিজও তৃণমূলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশ্য এখনও সেই যোগদান-পর্ব সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু এলাকায় তাঁরা তৃণমূলের হয়েই সাংগঠিক কাজকর্ম করে থাকেন।

Advertisement

জসিমুদ্দিন এ দিন জানান, শুক্রবার বিকেলে তাঁর ভাই রাজ কাঁদতে কাঁদতে তাঁকে ফোন করে বলেন, কয়েক জন লোক তাঁকে ঘিরে ধরে বেধড়ক মারছে। স্থানীয় কয়েক জন তাঁকে বাঁচাতে একটি মসজিদে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। ওই মসজিদ থেকেই ভাই তাঁকে ফোন করেন। জসিমুদ্দিন বলেন, ‘‘বৌবাজার থানায় ফোন করে আমি বিষয়টি জানাই। তার পরে ঘটনাস্থলে যাই।’’ তৃণমূল কাউন্সিলরের অভিযোগ, তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই প্রায় ১০০-১৫০ জন তাঁর উপরে হামলা চালায়। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর আয়েশা কানিজের স্বামী ইরফান আলি তাজের নেতৃত্বেই সেই হামলা চলে। বাঁশ, লাঠি, রড, হকি স্টিক দিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁর দিকে একটি দোকানের টেবিল-বেঞ্চ ছুড়ে মারা হয়েছে বলেও অভিযোগ। যদিও সমস্ত
অভিযোগই অস্বীকার করেছেন ইরফান আলি তাজ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বাঁশ-লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়েছে জসিমুদ্দিনের অনুগামীরাই। আমি তো ঝামেলা করতে অন্য ওয়ার্ডে যাইনি। জসিমুদ্দিনই ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে এসেছিলেন ঝামেলা করতে। আমি বরং থামাতে গিয়েছিলাম।’’ জসিমুদ্দিনের দাবি, মিরাজও নির্দল কাউন্সিলরের অনুগামী। তাঁর অভিযোগ, রাজকে
প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কেন? জসিমুদ্দিন বলেন, ‘‘জানুয়ারি মাসে রাজের সঙ্গে মিরাজের ঝামেলা হয়েছিল। তখনই মিরাজ রাজকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাই
আমার সন্দেহ, রাজকে ওখানে দেখতে পেয়ে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। না হলে আমার ভাইয়ের উপরে হামলা হবে কেন?’’ এ দিন অবশ্য মিরাজকে একাধিক বার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ ছিল। মেসেজ করেও উত্তর পাওয়া যায়নি। ওই সংঘর্ষ সম্পর্কে এলাকার ব্যবসায়ী কমিটির সেক্রেটারি ইসরার আহমেদ বলেন,‘‘যা হয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন