সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়

শিক্ষক-নিগ্রহে ক্লাস বন্ধ, ফের নিশানায় টিএমসিপি

শাসক দলের ছাত্র সংগঠন আবার কাঠগড়ায়। দাবি আদায়ের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর খিদিরপুর কলেজের ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভে নেমেছিল ছাত্র সংসদ। তার সাত দিনের মাথায়, বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদের এক দল সদস্যের হাতে হেনস্থার অভিযোগে ক্লাস নিলেন না বাঘা যতীনের সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দু’টি কলেজেই ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র দখলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৪৭
Share:

সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ের বন্ধ দরজা।—নিজস্ব চিত্র।

শাসক দলের ছাত্র সংগঠন আবার কাঠগড়ায়।

Advertisement

দাবি আদায়ের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর খিদিরপুর কলেজের ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভে নেমেছিল ছাত্র সংসদ। তার সাত দিনের মাথায়, বৃহস্পতিবার ছাত্র সংসদের এক দল সদস্যের হাতে হেনস্থার অভিযোগে ক্লাস নিলেন না বাঘা যতীনের সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দু’টি কলেজেই ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র দখলে।

ছাত্র সংগঠনের জঙ্গিপনায় লাগাম দিতে যিনি ইদানীং বারবার কড়া হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন, সেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, তিনি বিভাগীয় সচিবকে শিক্ষক-নিগ্রহের অভিযোগের তদন্ত করে দেখতে বলেছেন। দোষ প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আর টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার দাবি, শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ক্লাস নিলেন না, খতিয়ে দেখতে হবে।

Advertisement

খিদিরপুর কলেজের মতো সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়েও ছাত্রছাত্রীরা এ দিন ক্যাম্পাসে ঢুকে গোলমালের আঁচ পান। এক ছাত্রীর কথায়, “ক্লাস করব বলেই তো এসেছিলাম। এখন দেখছি, ক্লাস হবে না। বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।” ক্লাস নেওয়া হল না কেন?

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের অভিযোগ, ছাত্র সংসদের দাদাগিরির প্রতিবাদ করায় বুধবার ইতিহাসের এক শিক্ষিকাকে হেনস্থা করে সংসদের এক দল সদস্য। বৃহস্পতিবার ফের শিক্ষকদের ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ করা হয়। প্রতিবাদে ক্লাস না-করার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

কলেজ সূত্রের খবর, ভর্তিকে ঘিরে গোলমালের সূত্রপাত মঙ্গলবার। ওই দিন তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। ছাত্র সংসদের পক্ষ থেকে লাইন ভেঙে দু’টি ছাত্রীকে আগে দাঁড় করানোর চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় এক বহিরাগতও জড়িত বলে জানান অভিযোগকারীরা। তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বলেন, “লাইন ভাঙার প্রতিবাদ জানায় আমাদের এক সহপাঠী। তখন তার উপরে চড়াও হয় ছাত্র সংসদের সদস্যেরা।” অভিযোগ, প্রতিবাদী ছাত্রীকে সকলের সামনে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। বিষয়টি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানান ছাত্রছাত্রীরা। এ দিনও ছাত্র সংসদের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে যান কিছু পড়ুয়া। তখন ছাত্র সংসদের অনেক সদস্য ধাক্কাধাক্কি-গালিগালাজ শুরু করেন বলে অভিযোগ।

দুপুরে কলেজে পৌঁছে দেখা যায়, মূল ফটক বন্ধ। পাশের ছোট একটি দরজা দিয়ে কলেজে ঢোকা-বেরোনো চলছে। ক্যাম্পাসে, কলেজের সামনে জটলা। অধ্যক্ষ শান্তিগোপাল পালচৌধুরীর ঘরে বেশ কয়েক জন ছাত্র হাজির। সংবাদমাধ্যমকে দেখে অধ্যক্ষ বলেন, “আমি তো আপনাদের ডাকিনি। তাই কিছু বলব না।”

কলেজে ছাত্র সংসদের হাতে হেনস্থার অভিযোগ জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ক্লাসও বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে অধ্যক্ষের বক্তব্য কী?

হাত জোড় করে অধ্যক্ষের জবাব, “দয়া করে আপনারা বেরিয়ে যান। আমরা বিষয়টা দেখছি। সংবাদমাধ্যমের কাছে কোনও কথা বলব না।” অধ্যক্ষের ঘরের বাইরে একসঙ্গে বসে এক দল শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরাও মুখ খুলতে নারাজ। এক শিক্ষাকর্মী সংবাদমাধ্যমকে কলেজ থেকে বার করে দিয়ে ছাত্র সংসদকে আড়াল করতে ব্যস্ত।

তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বললেন, “ছাত্র সংসদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। ক্লাস চলাকালীন তারা হঠাৎ হঠাৎ ঘরে ঢুকে পঠনপাঠন বন্ধ করে দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক প্রচার কর্মসূচিতে সামিল করতে চায়। আর আমরা চাই রাজনীতিমুক্ত সুস্থ পরিবেশে পড়াশোনা করতে।”

এমন অবস্থা কেন?

শিক্ষকদের অভিযোগ, কলেজ-কর্তৃপক্ষ কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ। অধ্যক্ষ কখনওই কোনও কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান না। আগেও ওই কলেজে ছাত্র সংসদের হাতে শিক্ষক-নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে। এ-সব ক্ষেত্রে তাঁরা অধ্যক্ষকে পাশে পাবেন বলে আশা করেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু অধ্যক্ষ কখনওই তাঁদের হয়ে এগিয়ে আসেন না। এর ফলে কলেজে ছাত্র সংসদের দাপাদাপি অব্যাহত।

তাদের বিরুদ্ধে যে-অভিযোগ উঠেছে, তার জবাবে ছাত্র সংসদের তরফে কেউ কিছুই বলতে চাননি। তবে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব বলেন, “শিক্ষকদের হেনস্থার ঘটনায় কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন ক্লাস নিলেন না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন