ট্যাংরা

‘আক্রোশ থেকেই আক্রমণ’

নিজের গোষ্ঠী, অর্থাৎ শম্ভুনাথ কাও-এর শিবির ছেড়ে অন্য গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ আসছিল ক্রমাগত। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আক্রোশ থেকেই গত শনিবার রাতে তাঁর উপর আক্রমণ হয়। মঙ্গলবার এনআরএস-এর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে শুয়ে সে কথাই জানালেন ট্যাংরায় দুষ্কৃতীদের হামলায় দু’টি পা কেটে যাওয়া তৃণমূলকর্মী রাহুল রায়।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:৪৭
Share:

নিজের গোষ্ঠী, অর্থাৎ শম্ভুনাথ কাও-এর শিবির ছেড়ে অন্য গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ আসছিল ক্রমাগত। কিন্তু তাতে আপত্তি জানিয়েছিলেন তিনি। সেই আক্রোশ থেকেই গত শনিবার রাতে তাঁর উপর আক্রমণ হয়। মঙ্গলবার এনআরএস-এর অর্থোপেডিক ওয়ার্ডের ২৪ নম্বর বেডে শুয়ে সে কথাই জানালেন ট্যাংরায় দুষ্কৃতীদের হামলায় দু’টি পা কেটে যাওয়া তৃণমূলকর্মী রাহুল রায়। জানালেন, তোলাবাজির জন্য ছেলে দরকার। দল ভারী করতে স্থানীয় তৃণমূল নেতা প্রদীপ গুহ বারবার তাঁকে নিজের গোষ্ঠীতে যোগ দিতে বলেছেন। রাহুলের পাড়ার ছেলেদেরও তাতে যোগ দেওয়ার কথা বলতেন। কিন্তু রাহুলের সাফ কথা, ‘‘শম্ভুনাথদা’র সঙ্গে গদ্দারি করতে পারবো না।’’

Advertisement

এ দিন রাহুলের কথায় উঠে আসে তোলাবাজির প্রসঙ্গ। তিনি জানান, ট্যাংরা ও তপসিয়া এলাকায় যত নতুন ফ্ল্যাট গড়ে উঠছে, সেখানে প্রোমোটারদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তোলেন প্রদীপ গুহ। শুধু নতুন নির্মাণই নয়, ওই অঞ্চলের যে সব বাড়িতে কল বসাতে হয়, বাড়ির সামনের রাস্তা ঠিক করতে হয়, সেখান থেকেও টাকা আদায় করেন স্থানীয় ওই তৃণমূল নেতা। রাহুল বলেন, ‘‘প্রদীপ আমাকে বলেছিল এই সব টাকা আদায়ের জন্য অনেক ছেলে দরকার। বলেছিল, তোর পাড়ায় তো অনেক বেকার ছেলে আছে। আমাকে জোগাড় করে দিস।’’

রাহুল তা করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার কাউন্সিলর ছিলেন শম্ভুনাথ কাও। আমরা ওঁর হয়েই কাজ করবো।’’ জানালেন, ধাপার মাঠের যে ঘটনার জন্য এখন শম্ভুনাথ কাও জেলে আছেন, সেদিন তিনিও ঘটনাস্থলে ছিলেন শম্ভুনাথের ছায়াসঙ্গী হয়ে। রাহুল বলেন, ‘‘সেদিন আমি ধাপার মাঠে ছিলাম। শম্ভুদা কিছুই করেননি। বিনা দোষে আটকে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। আমাদেরও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। সবই ওই প্রদীপ গুহ করিয়েছে।’’

Advertisement

রাহুলের দাবি, ‘‘প্রদীপের বড় গাড়ি-বাড়ি আছে। সবই তোলাবাজির টাকায়। প্রোমোটারদের থেকে টাকা নিয়েই সব করেছে। আমার তো যে দিন পা দু’টো কেটে নিল, সেদিন মাইনে পেয়েছিলাম। সেই ১২০০ টাকাও নিয়ে নিল ওরা।’’

এ দিন রাহুলের পরিজনেরা জানান, প্রদীপের তোলাবাজিতে সাহায্য করার জন্যই উত্তম রানা, টিঙ্কু রানা ওঁর কাছের লোক হয়ে উঠেছে। তাঁরা আরও জানান, প্রদীপের দল সব সময় পাড়ায় এসে হুমকি দিচ্ছে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুললে সকলের পা কেটে নেবে। এলাকার যে বাসিন্দারা রাহুলকে দেখতে হাসপাতালে আসছিলেন, তাঁদেরও এই হুমকি দেওয়া হয়। রাহুলের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘এ কথা শোনার পরে অনেকেই ভয়ে সামনে আসতে চাইচ্ছেন না। আমরা গোটা ব্যাপারটা ট্যাংরা
থানায় জানিয়েছি।’’

প্রদীপ গুহর সঙ্গে অবশ্য এ দিনও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয় বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা বলেন, ‘‘প্রদীপ আমাদের দলের কর্মী। যদি তদন্তে ওর কোনও দোষ প্রমাণিত হয়, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন