Bidhannagar

Bidhannagar Municipal Election: বাজি আর বক্সের জোড়া ‘তাণ্ডবে’ জয় পালন বিধাননগরে

কোথাও বক্স বাজিয়ে শব্দ-তাণ্ডব চলল দুপুর গড়িয়ে রাত পর্যন্ত। কোথাও আবার শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে পিলে চমকে দেওয়ার মতো দেদার ফাটল শব্দবাজি।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস, চন্দন বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৭
Share:

বিধিভঙ্গ: সবুজ আবিরে ঢেকে ফাটানো হচ্ছে শব্দবাজি। সোমবার, বিধাননগর কলেজের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

মাঝরাস্তায় শব্দবাজি বসিয়ে প্রথমে আবির দিয়ে ঢেকে দেওয়া হল। তার পরে সলতে টেনে বার করে তাতে ধরানো হল আগুন। কিছু ক্ষণ সব চুপচাপ। এর পরে বিকট শব্দে আশপাশ কেঁপে ওঠার কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই শুরু হল চিৎকার ‘খেলা হবে’!

Advertisement

সোমবার, পুর নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিন বিধাননগর জুড়ে দফায় দফায় দেখা গেল বিধিভঙ্গের এমনই নানা চিত্র। কোথাও বক্স বাজিয়ে শব্দ-তাণ্ডব চলল দুপুর গড়িয়ে রাত পর্যন্ত। কোথাও আবার শান্ত পরিবেশ অশান্ত করে পিলে চমকে দেওয়ার মতো দেদার ফাটল শব্দবাজি। করোনা-বিধি মানার বালাই তো ছিলই না, ভোট জয়ের আনন্দে পথে নামা অধিকাংশেরই মুখ ছিল মাস্কহীন। পাড়ায় পাড়ায় বেরিয়ে পড়া মোটরবাইক বাহিনীর দাপটও ছিল চোখে পড়ার মতো। কারও মাথাতেই দেখা যায়নি হেলমেট। যা নিয়ে প্রশ্ন করায় মোটরবাইকে সওয়ার এক যুবকের মন্তব্য, ‘‘আজ শুধু খানা-পিনা আর মজা। নিয়মকানুন সব কাল থেকে মানব।’’

নিয়ম ভাঙার এই চিত্র অবশ্য সকাল থেকেই স্পষ্ট হতে শুরু করেছিল রাজারহাট, বাগুইআটি-সহ বিধাননগর পুর এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। ভোট গণনা কেন্দ্র বিধাননগর কলেজের সামনের একমুখী রাস্তায় প্যান্ডেল করে এ দিন তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। আর রাস্তার বাকি অংশ বন্ধ হয়ে যায় উল্লাসে মত্ত জনতার ভিড়ে। ভোটের ফল কোন দিকে যাচ্ছে, সকাল দশটার পর থেকে তা স্পষ্ট হতে শুরু করতেই ওই জায়গায় ভিড় বাড়তে শুরু করে বড় বড় সাউন্ড বক্স লাগানো লরির। এক সময়ে সব ক’টি সাউন্ড বক্স একসঙ্গে বাজতে শুরু করায় তাঁদের ঘুম উড়ে যায় বলে অভিযোগ করছেন সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। সেই প্রবল আওয়াজের মধ্যে দেখা যায়, কেউ রাস্তায় শুয়ে গড়াগড়ি খাচ্ছেন, কেউ নাচতে নাচতে মাটিতে পড়ে থাকা আবির তুলে সঙ্গীকে মাখাচ্ছেন। এক সময়ে পিচ রাস্তার রং হয়ে যায় সবুজ।

Advertisement

বেলা একটু গড়াতে বক্স লাগানো ওই সব লরি সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকে ঘুরতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সেই সব লরি থেকে ঘোষণা করা হতে থাকে, ‘‘বহু দিনের খাটুনির পরে এই জয় এসেছে। আজ রাত পর্যন্ত শুধু আনন্দ হবে।’’ বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সাউন্ড বক্সের সঙ্গে নাচ চলেছে রাত পর্যন্ত। সব দেখেও দেখেনি পুলিশ। আরও অভিযোগ, একই ভাবে দেখেও দেখা হয়নি বিধাননগরের বিভিন্ন রাস্তায় উৎসবের নামে ট্র্যাফিক বিধিভঙ্গের বিষয়টিও। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে এক সময়ে প্রবল যানজট তৈরি হয় সল্টলেকে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তাগুলিতে।

বিদ্যাসাগর আইল্যান্ডে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মীকে এ বিষয়ে বলতে শোনা যায়, ‘‘বড়বাবুরা যেমন নির্দেশ দিয়েছেন, সেই মতো ডিউটি করছি। তেমন কোনও অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হত!’’ বিধাননগরের বাসিন্দা এক প্রবীণ দম্পতি যদিও বললেন, ‘‘আমাদের এলাকায় প্রচুর বয়স্ক মানুষ থাকেন। এখানকার লোকজন এত আওয়াজের সঙ্গে অভ্যস্ত নন। সকাল থেকে টিকতে না পেরে বহু বার থানায় ফোন করেছি। কোনও সুরাহা হয়নি। উল্টে বলা হয়েছে, এক দিনের তো ব্যাপার!’’ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের কোনও কর্তাই।

তবে বিপুল ব্যবধানে জয়ের খবর পেয়ে বিদ্যাসাগর আইল্যান্ডে পৌঁছনো তৃণমূল নেতা তথা বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু বললেন, ‘‘সারা বছর তো কিছু হয় না। এক দিন মানুষ একটু আনন্দ করছেন। দ্রুত সব মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’ বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্তের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘আজ প্রেমদিবস। এ দিন এমনিতেই আবেগ একটু বেশি থাকে। তার উপরে প্রিয় দল জিতেছে! যতই বলি, আবেগ কি বাঁধ মানে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন