খরচ কমাতে নৌকায় এ বার সৌরবাতি

তাঁদের কাছে গিয়ে কেউ কখনও বলেননি বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহারের কথা। এই সৌরশক্তির ব্যবহার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথাও জানেন না তাঁরা। শুধু পঞ্চায়েত মারফত কয়েক বার শুনেছেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করলে খরচ কমে, ক্ষতি হয় না পরিবেশেরও। কেরোসিনের ক্রমবর্ধমান খরচ ঠেকাতে তাই এখন তাঁরা ব্যবহার করছেন সৌরবাতি।

Advertisement

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৬
Share:

সৌর শক্তির ব্যবহারে জ্বলছে আলো। প্রিন্সেপ ঘাটে ছবিটি তুলেছেন স্বাতী চক্রবর্তী।

তাঁদের কাছে গিয়ে কেউ কখনও বলেননি বিকল্প হিসেবে সৌরশক্তি ব্যবহারের কথা। এই সৌরশক্তির ব্যবহার নিয়ে সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথাও জানেন না তাঁরা। শুধু পঞ্চায়েত মারফত কয়েক বার শুনেছেন, সৌরশক্তি ব্যবহার করলে খরচ কমে, ক্ষতি হয় না পরিবেশেরও। কেরোসিনের ক্রমবর্ধমান খরচ ঠেকাতে তাই এখন তাঁরা ব্যবহার করছেন সৌরবাতি।

Advertisement

এঁরা হলেন নদিয়ার চাকদহের বীরেন হালদার, ডায়মন্ড হারবারের মইনুল আলি, হুগলি চণ্ডীতলার পলাশ মণ্ডলের মতো আরও অনেকে। সকলেই পেশায় মাঝি। কলকাতার প্রিন্সেপ ঘাট এবং
পানি ঘাটে নৌকা চালান তাঁরা। এত দিন নৌকাগুলিতে জ্বলত
কেরোসিনের লম্ফ বা হ্যারিকেন। কেউ আবার বাল্ব জ্বালাতেন ব্যাটারির সাহায্যে। তাঁরাই এখন খরচ কমানোর জন্যব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছেন সৌরশক্তি।

নদিয়ার বীরেনবাবুর কথায়, ‘‘শহরের ঘাটে নৌকা চালালেও দু’-তিন মাস অন্তর গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানেই পঞ্চায়েতের লোকজনের কাছে শুনেছি সৌরশক্তি ব্যবহারের কথা। তাঁরাই বলেছেন খরচ কম, পরিবেশের ক্ষতি হয় না। এ দিকে কেরোসিনের দামও দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পরেই আমরা কয়েক জন নৌকায় সৌরবাতি জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিই। চাঁদনি মার্কেট থেকে সৌরবাতি কিনে এনে লাগিয়েছি। এক
বার লাগালে অন্তত বছর পাঁচেকের জন্য নিশ্চিত।’’

Advertisement

বীরেনবাবুর সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল প্রিন্সেপ ঘাট এবং পানি ঘাট মিলিয়ে নৌকা চলে খান সত্তর। প্রতি বিকেলে যাঁরা গঙ্গার ধারে ঘুরতে আসেন, তাঁদের নৌকা করে ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এই মাঝিরা। এঁদের মধ্যে জনা পঁচিশেক মাঝি নৌকায় সৌরবাতি লাগিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

মুকুন্দপুরের অপ্রচলিত শক্তি কলেজ সূত্রে খবর, নৌকার মতো জলযানে ডিজেল ইঞ্জিন বা ব্যাটারি ব্যবহার করে আলো জ্বালালে রোজ প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের খরচ পড়ে ২৬ টাকা। কেরোসিনের কুপি, হ্যারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাল্বে সেই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ টাকা। সে ক্ষেত্রে নৌকার মতো জলযানে এক ইউনিট সৌরশক্তিতে খরচ হয় মাত্র ১৬ টাকা। স্বল্প খরচের বিষয়টিই শহরের ঘাটের মাঝিদের উৎসাহ জুগিয়েছে।

ওই কলেজের চেয়ারম্যান এবং অধ্যাপক শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, ‘‘চাঁদনি চকের বাজারে এখন ছ’শো থেকে সাতশো টাকা দরে সৌর আলোর সরঞ্জাম মেলে। যা এক বার লাগালে দু’বছরের মধ্যে ব্যয় পুষিয়ে যায়। তবে মাঝিরা যদি আরও উন্নত মানের সৌরশক্তির সরঞ্জাম ব্যবহার করেন, তবে তা টিকবে ছ’-সাত বছর। খরচও হবে আরও অনেক কম।’’

শান্তিপদবাবু জানান, ‘‘চলমান যানে সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। যার আওতায় স্টেট ব্যাঙ্ক, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, নাবার্ড এখনও ভর্তুকি এবং ঋণ দেয়। তবে ব্যক্তিগত ভাবে নয়। এই সুবিধা পেতে আবেদন করতে হয় কোনও সংস্থার তরফে বা একাধিক ব্যক্তি সম্মিলিত হয়ে।’’

সৌরশক্তির সুফল বিষয়ে অবশ্য এখনও অনেকেই জানেন না। যেমন ডায়মন্ড হারবারের মইনুল বা হুগলির পলাশ জানালেন, গ্রামে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন পঞ্চায়েত অনেক রাস্তায় সৌরবাতি লাগিয়েছে। পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের কাছে জেনেছেন কম খরচে এতে ভাল আলো হয়। তার পরে তাঁরাও চাঁদনি মার্কেট সৌরবাতি কিনে এনে নৌকায় লাগিয়েছেন।

শহরের বুকে প্রিন্সেপ ঘাট এবং পানি ঘাটের মাঝিরা ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগী হয়ে নৌকায় সৌর বাতি ব্যবহার করছেন তা জানা ছিল
না রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘খুবই ভাল কাজ করেছেন মাঝিরা। আরও অন্য কোনও উপায়ে তাঁদের সাহায্য করা যায় কি না, তা নিয়ে পর্ষদের বৈঠকে আলোচনা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন