দলের বিধায়ক এবং কাউন্সিলরদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। শহরের বেশ কিছু এলাকায় (বিশেষত উত্তর কলকাতা) বিধায়কদের সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলরদের বিবাদ নিয়ে চিন্তিত দলীয় নেতৃত্ব। এমনকী, সম্প্রতি এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন খোদ দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এ বার ‘গেট টুগেদার’-এর অনুষ্ঠানে ডেকে কাউন্সিলরদের কার্যত রাজনৈতিক বার্তাই দিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী, দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়।
পুরভোটের পরেই কলকাতা পুরসভার বিজয়ী কাউন্সিলরদের ‘গেট টুগেদার’-এর নোটিস দিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল টাউন হলে। কিন্তু মঙ্গলবারের সেই বৈঠক পুরোপুরি রাজনৈতিক কর্মশালায় পরিণত হল। ২০১৬-র নির্বাচনকে মাথায় রেখেই বিধায়কদের সঙ্গে কাউন্সিলরদের সমন্বয় রেখে চলার নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পাড়ায় পাড়ায় যাতে এই দলীয় বিবাদ কোনও ভাবে মাথাচাড়া না দেয়, তা নিয়ে তাঁদের সতর্কও করে দেন শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্য আমি। তাই কিছু বলতে চাই না। তবে এটা ঠিক যে, উত্তর কলকাতার সব কিছুই নজরে রয়েছে।’’
যেমন, পুরভোটের আগে এবং পরে উত্তর কলকাতার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানীয় বিধায়ক এবং কাউন্সিলরের বিবাদ বিব্রত করেছিল তৃণমূল নেতৃত্বকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের কোন্দল এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, তৃণমূলের দলীয় প্রার্থীকে হারতে হয়েছে বিজেপি-র কাছে। তৃণমূলের দুই মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং সাধন পাণ্ডের বিবাদ এমন চরম পর্যায়ে পৌঁছয় যে, মুখ্যমন্ত্রীও দলের বৈঠকে তা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। এ সব মাথায় রেখেই এ দিনের বৈঠকে দলীয় কাউন্সিলরদের সমঝে চলার নির্দেশ দেন শীর্ষ নেতারা।
পার্থবাবু এ দিন কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কাজের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ হয় আপনাদের। আপনারাই জনসংযোগের সোপান।’’ ভোটের লক্ষ্যে এখন থেকেই জনসংযোগ বাড়িয়ে যান। একই সঙ্গে দলের সদস্য পদ বাড়াতে কাউন্সিলরদের তৎপর হতে বলেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা।
নভেম্বরেই ভোটের দামামা বাজতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী। মঙ্গলবার টাউন হলে দলীয় কাউন্সিলরদের ওই বৈঠকে তেমন সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন তৃণমূলের একাধিক নেতাও। সে জন্য এখন থেকেই ঝগড়াঝাঁটি ভুলে মিলে মিশে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তৃণমূল কাউন্সিলরদের।
রাজনীতিতে অভিজ্ঞ নেতা-মন্ত্রীদের কাছে পুর-পরিষেবার কাজের ধরন জানতে হাজির ছিলেন কিছু নবাগত কাউন্সিলরও। দক্ষিণ কলকাতার ৭৪ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেবলীনা বিশ্বাস, উত্তর কলকাতার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইলোরা সাহা এবং বেলেঘাটার ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অলকানন্দা দাস বৈঠক শুরুর আগেই চলে এসেছিলেন টাউন হলে। তাঁদের কথায়, প্রথম বার কাউন্সিলর। পুর-পরিষেবা নিয়ে অনেক কিছু জানার ছিল। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, কোনও অসুবিধা হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে। মন্ত্রী ও মেয়রের কথায় উৎসাহিত তাঁরা। বললেন, ‘‘কাউন্সিলরদের কী কাজ, জনগণের জন্য কী করতে হবে এমন নানা বিষয় নিয়েও বৈঠকে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল বিধায়কদের হাত শক্ত করতে কাউন্সিলরদের সজাগ হওয়ার বার্তা দিয়ে বর্ষীয়ান নেতারা জানান, জনপ্রতিনিধি হয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। এলাকায় কাজ করতে হবে। দলের অফিসে নিয়মিত বসতে হবে।