Education

থামলে হবে না, পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সঙ্কল্প কৃতী ছাত্রীর

পাম্মির বাবা বিধু ঘোষালও মেয়েকে বলে দিয়েছেন, সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে পর্যন্ত তিনি রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাবেন। বিশ্রামের কোনও অবকাশ নেই তাঁরও। 

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০১:৫৮
Share:

মা-বাবার সঙ্গে পাম্মি ঘোষাল। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

পয়সা জমিয়ে বাবা কিনে দিয়েছেন পড়ার টেবিল। সেই টেবিলে রাখা স্তূপাকার বই। অগোছালো টেবিলের সামনে দেওয়ালে সাঁটা কাগজ। তাতে লেখা, ‘ক্লান্ত হয়ে গেলে থামা চলবে না, কাজ শেষ হওয়ার পরেই বিশ্রাম’।

Advertisement

তেঘরিয়ার অর্জুনপুর এলাকার চড়কতলার বছর পনেরোর কিশোরী পাম্মি ঘোষাল মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে মা-বাবাকে জানিয়ে দিয়েছে, এখন তার বিশ্রামের সময় নয়। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যখন বাবাকে রিকশা চালানো থেকে বিশ্রাম দিতে পারবে, তখনই সে থামবে। তার আগে নয়।

পাম্মির বাবা বিধু ঘোষালও মেয়েকে বলে দিয়েছেন, সে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আগে পর্যন্ত তিনি রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাবেন। বিশ্রামের কোনও অবকাশ নেই তাঁরও।

Advertisement

চড়কতলায় পাম্মিদের একতলা পাকা বাড়ি। সেখানে যৌথ পরিবার তাদের। পাম্মির দাদু লক্ষ্মীকান্ত ঘোষাল পুরোহিত ছিলেন। এক সময়ে উপার্জনও ভালই হত তাঁর। তা থেকেই টাকা জমিয়ে বাড়িটি করেছিলেন। এখন বৃদ্ধ লক্ষ্মীকান্ত কানে ভাল শুনতে পান না। উপার্জন প্রায় শূন্য। অবস্থা পড়ে গিয়েছে অনেকটাই। দুই ছেলের এক জন গাড়ি চালান, অন্য ছেলে বিধু রিকশা। বিধু বললেন, ‘‘সারা দিন রিকশা চালিয়ে ২০০ টাকাও উপার্জন হয় না। সংসার চালিয়ে মেয়েকে কী ভাবে পড়াব, তা নিয়েই সব সময়ে চিন্তা হয়। বাবার জন্যই এই পাকা বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতে পারছি। কিন্তু সংসার তো চলছে না। লকডাউনে রিকশা চালিয়ে উপার্জন আরও কমে গিয়েছে।’’

চোখে মোটা কাচের চশমা বিধুর। দুই চোখেরই পাওয়ার মাইনাস সতেরোর আশপাশে। তিনি জানান, ছেলেবেলায় কালীপুজোর দিন চোখের সামনে তুবড়ি ফেটে গিয়ে দুই চোখ জখম হয়। তার পর থেকেই ওই রকম চশমা। বিধু বললেন, ‘‘মেয়ের বই পড়ার খুব শখ। উচ্চ মাধ্যমিকে তো অনেক বই লাগে। স্কুল পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশীরাও আর্থিক সাহায্য করেছেন। একটি রাজনৈতিক দলও সাহায্য করেছে। কিন্তু আমারও তো মেয়েকে কিছু দেওয়ার আছে। রিকশায় কয়েকটা ট্রিপ বেশি খেটে ওকে কিছু বই কিনে দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই চোখে কম দেখতে পেলেও রাতে এখন কিছু ক্ষণ বেশি চালাচ্ছি।’’ মাঝে মাঝে সুযোগ পেলে পুজোর কাজও করেন বিধু।

পাম্মি বাগুইআটির অন্নদাসুন্দরী হিন্দু বালিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রী। মা কল্যাণী ঘোষাল গৃহবধূ। তিনি বলেন, ‘‘ওর দিদিমণিরা প্রত্যেকে ওকে খুব সাহায্য করেছেন। যখন যা দরকার, দেখিয়ে দিয়েছেন। ওঁদের অবদানও ভোলার নয়।’’

মাধ্যমিকে পাম্মি দারুণ নম্বর পাওয়ায় খুব খুশি ঠাকুরদা লক্ষ্মীকান্ত। পরিবারের আর্থিক অবস্থা আবার ফিরিয়ে আনতে নাতনিই তাঁর একমাত্র ভরসা। সে কথা বলেওছেন পাম্মিকে।

ঠাকুরদার কথা ভেবে, বাবার রিকশার অতিরিক্ত ট্রিপের কথা ভেবে আরও ভাল ফল করার জেদ চেপে গিয়েছে পাম্মির। বড় হয়ে সে সাংবাদিক হতে চায়। কেন? পাম্মির স্পষ্ট জবাব, ‘‘সাংবাদিক হলে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে পারব। অনেক মানুষের কথা জানতে পারব, জানাতে পারব। মানুষের নানা অভাব, অভিযোগ, অসুবিধার কথা তুলে ধরব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন