বইমেলা। ফাইল চিত্র।
শনিবার বিকেল পাঁচটায় বইমেলায় পৌঁছতেই হত তাঁকে!
খোদ কলম্বিয়ার রাষ্ট্রদূত আসছেন শহরে। কিন্তু অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক, ইন্দো হিসপ্যানিক ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাকাডেমির কর্তা দিব্যজ্যোতি মুখোপাধ্যায়ই সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলা পর্যন্ত কী করে যাবেন, বুঝতে পারছিলেন না। দুপুর দেড়টায় কালিকাপুর থেকে বেরিয়ে কসবা কানেক্টরের কাছে এসেই যানজটের ফাঁদে পড়েন তিনি। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁর বইমেলা পৌঁছে পৌঁছতে অনুষ্ঠান শুরুর সময় প্রায় হয়ে গিয়েছে।
চিংড়িঘাটার দুর্ঘটনা ও তার জেরে গোলমালের ধাক্কা এ ভাবেই ছুটির দিনের বইমেলায় ছাপ রেখে গেল। দুপুর-বিকেল পর্যন্ত ভিড় তত জমে উঠতে না পারলেও, বিকেলের পরে লোকের ঢল নেমেছে। তখনই যানজটের জেরে বইমেলা পৌঁছতে নাকাল হওয়া জনতার জন্য মাইকে সুখবর ঘোষণা করলেন উদ্যোক্তারা। বলা হল, যানজটের জন্যই মেলা শেষের মেয়াদ এক ঘণ্টা বাড়িয়ে রাত আটটার জায়গায় রাত ন’টা করা হচ্ছে। বইমেলার উদ্যোক্তাদের দাবি, এ দিন তিন লক্ষ মানুষ এসেছিলেন।
বিকেলে দিব্যজ্যোতিবাবু বলছিলেন, ‘‘কলম্বিয়ার নতুন রাষ্ট্রদূত ক্লেমেনসিয়া ফোরেরো ইউক্রোজ দায়িত্ব নেওয়ার পরে কলকাতাতেই তাঁর প্রথম সফর। তা ছাড়া সেখানকার লেখক লাউরা রেস্ত্রোপো কাসাবিয়াঙ্কাও এসেছিলেন। উদ্যোক্তা হিসেবে পৌঁছতে না পারলে খুব বেইজ্জত হতাম।’’ কসবা থেকে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত পৌঁছতেই ঘণ্টা তিনেক লেগে যায় দিব্যজ্যোতিবাবুর। এর পরে বাইপাস ছেড়ে শহরের ভিতর দিয়ে ঘুরপথে সল্টলেক পৌঁছতে হয় তাঁকে। একেবারে শেষ মুহূর্তে তিনি পৌঁছন। এ দিন দুপুরেই রাশিয়ার লেখক, প্রকাশকদের সঙ্গে এখানকার বেশ কয়েক জন প্রকাশক, লেখকের বৈঠকও একটু হলেই ভেস্তে যাচ্ছিল। দু’টোর জায়গায় বিকেল সওয়া তিনটেয় আলোচনা শুরু হয়। রুশ লেখকদের উড়ান ধরার তাড়া থাকলেও আলোচনা কাজের হয়েছে বলে দাবি বইমেলার উদ্যোক্তাদের। এ দেশের পাঠকদের জন্য রুশ সাহিত্য অনুবাদ নিয়ে কিছু সদর্থক কথা হয় দু’দেশের লেখক-প্রকাশকদের মধ্যে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আনিসুজ্জামান নুরও দুপুর থেকে মেলায় বই প্রকাশে ব্যস্ত। সন্ধ্যায় আবার বইমেলার বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা। ইমদাদুল হক মিলন, মুনতাসির মামুনরা ঠিক সময়েই পৌঁছেছিলেন। বইমেলার উদ্যোক্তা ‘পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ড’-এর সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘এই দুর্যোগের মধ্যেও যে এত অনুষ্ঠান বানচাল হয়নি, সেটা ভাল লাগছে।’’