‘যত বার পিছনে তাকিয়েছি, উনি পেছন থেকে হাত নেড়ে আশ্বাস দিয়েছেন’

পরনে পুলিশের উর্দি, সঙ্গে পুলিশ লেখা বুলেট মোটরসাইকেল। ট্যাক্সিচালক দাঁড়িয়ে যান। তার পর ওই দম্পতিকে ডেকে তাঁদের ওই ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে চালককে পরিষ্কার বলে দেন যে, মিটারে যে ভাড়া উঠবে, তার থেকে এক পয়সাও যেন অতিরিক্ত না চাওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:১৫
Share:

মানবিক মুখ দেখালেন কলকাতা পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। প্রতীকী চিত্র

লালবাজারের পুলিশ সদর দফতর থেকে বেরতে রাত ১০টা বেজে গিয়েছিল তরুণ মাইতির। শীতের রাত, তার উপর ঝিরঝিরে বৃষ্টি। গিরিশ পার্ক মোড় পেরিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে একটু এগোতেই তাঁর চোখে পড়ে, এক তরুণ দম্পতি ট্যাক্সি ডাকছেন। অথচ ট্যাক্সিটি সওয়ারি না নিয়ে চলে যায়। তরুণবাবুর বুঝতে ভুল হয়নি। কলকাতার রাস্তায় বৃষ্টির রাতে ট্যাক্সি চালকদের মনমতো সওয়ারি না পেলে ‘যাওয়ার’ অভ্যাস যে কতটা মারাত্মক তা তিনি জানেন। তাই মোটর সাইকেলের গতি একটু বাড়িয়ে সামনের ট্যাক্সির পথ আটকে বাইক নিয়ে দাঁড়ান।

Advertisement

পরনে পুলিশের উর্দি, সঙ্গে পুলিশ লেখা বুলেট মোটরসাইকেল। ট্যাক্সিচালক দাঁড়িয়ে যান। তার পর ওই দম্পতিকে ডেকে তাঁদের ওই ট্যাক্সিতে তুলে দিয়ে চালককে পরিষ্কার বলে দেন যে, মিটারে যে ভাড়া উঠবে, তার থেকে এক পয়সাও যেন অতিরিক্ত না চাওয়া হয়।

সম্পূর্ণ অযাচিত ভাবে পথচলতি এক জন পুলিশ আধিকারিক এগিয়ে এসে তাঁদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে, তারই বর্ণনা দিয়ে কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে ধন্যবাদ জানান বরাহনগরের বাসিন্দা সঞ্চয়িতা ঘোষ মণ্ডল। তবে তিনি তাঁর পোস্টে এটাও লেখেন, সব কিছু খুব দ্রুত ঘটে যাওয়ায়, ওই পুলিশ আধিকারিকের নাম জানার সুযোগ হয়নি। তবে সঞ্চয়িতা ওই পুলিশ আধিকারিকের মোটর সাইকেলের নম্বরটি মনে রেখেছিলেন। পোস্টেও উল্লেখ করেছিলেন নম্বরটি।

Advertisement

বাইকের ওই নম্বরের সূত্র ধরেই জানা যায়, মোটর সাইকেলটি কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট তরুণ মাইতির। পুলিশ সদর দফতরেই হেড কোয়ার্টার্স ফোর্সের মুভমেন্ট বিভাগে কর্মরত। শুক্রবার খোঁজ করতেই তরুণবাবুর এক সহকর্মী বললেন, ‘‘তরুণ ওই রকমই। ওকে তো অনেক দিন দেখছি।”

আরও পড়ুন:‘দেশে ফেরত’ পাঠানোর হুঁশিয়ারি মুসলিম তরুণকে, বিতর্কে বাবুল সুপ্রিয়

বিকেলে লালবাজারেই পাওয়া গেল তরুণবাবুকে। ঘটনার কথা শুনেই পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘‘জানলেন কী করে?” তাঁকে নিয়ে যে কলকাতা পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া পাতায় এত বড় লেখা বেরিয়েছে তা-ও তিনি জানতেন না তখনও। ফেসবুকের প্রসঙ্গ তুলতেই বলেন, ‘‘ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একটা আছে বটে। তবে আমি খুব একটা খুলি না।” বৃহস্পতিবার রাতের ওই দম্পতির প্রসঙ্গ তুলতেই হাত নেড়়ে বলে ওঠেন, ‘‘আরে! এটা কি খুব বড় কোনও কাজ হল! যাচ্ছিলাম। দেখলাম ট্যাক্সিওয়ালারা অসভ্যতা করছেন। তাই তাঁকে পাকড়াও করে ট্যাক্সিতে তুলে দিলাম।”

দেখুন কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পোস্ট:

সঞ্চয়িতা এবং তাঁর স্বামী অভিষেক যদিও তাঁদের পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ওই পুলিশ আধিকারিক শুধু ট্যাক্সিতে তুলেই দেননি, বনহুগলি পর্যন্ত ট্যাক্সির সঙ্গে সঙ্গে এসেছেন। মোটরসাইকেল থেকেই বার বার অভয় দিয়েছেন।” তরুণবাবু সে কথা শুনে হেসে ওঠেন। তিনি জানান, তাঁর বাড়ি সোদপুরে। ওই রাস্তা দিয়েই ফিরেছেন। ঘটনাচক্রে ওই ট্যাক্সির পিছনেই ছিল তাঁর বাইক।

ট্রাফিক সার্জেন্ট তরুণ মাইতি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই কলকাতা পুলিশের কমিশনার অনুজ শর্মা টুইট করে জানান, বৃষ্টিভেজা শীতের রাতে শহরের রাস্তায় যদি কেউ কোনও অসুবিধায় পড়েন তবে তাঁরা যেন কলকাতা পুলিশের ১০০ নম্বরে ডায়াল করে জানান। তাঁর বাহিনীর এক সদস্য সেই টুইট না দেখেও বা কোনও ফোন না পেয়েও, বাড়ি যাওয়ার পথে কমিশনারের সেই অভয়বার্তাকেই বাস্তবে রূপ দেন। তরুণবাবু যখন বিষয়টি খুব সামান্য বলে উড়়িয়ে দিতে চান, তখন এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘যখন বাহিনীর কোনও সদস্য অপরাধ করে গ্রেফতার হয় তখন সেই খবর বাহিনীর নাম খারাপ করে। তেমনই তরুণের মতো অফিসাররা বাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” কর্তাদের নির্দেশ ছাড়া কথা বলতে না চাওয়া অকৃতদার তরুণবাবু শেষে বলেন, ‘‘এটা ভাল লাগছে যে, মানুষ আমাদের এই ছোট ছোট চেষ্টাগুলোর স্বীকৃতি দিচ্ছে।”

অনুজ শর্মার টুইট:

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন