হেলমেটহীন মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের দিনের বেলায় জরিমানা করার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রাত যত বাড়ে, ততই কমতে থাকে সেই পুলিশি নজরদারি। রাতের শহর চিরে ছুটে যায় বেপরোয়া মোটরবাইক-স্কুটার। হেলমেট ঝুলে থাকে হ্যান্ডেলেই।
সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ এই আইন-ভাঙা উদ্দামতাই ফের কেড়ে নিল দু’টি প্রাণ। পুলিশ জানায়, লক্ষ্মণ অগ্রবাল (২৭) ও জিতেন শইকিয়া (১৮) নামে ওই দুই স্কুটার-আরোহীর মাথায় হেলমেট থাকলে হয়তো বেঁচেও যেতে পারতেন তাঁরা। বাগুইআটি থানার কেষ্টপুরে রবীন্দ্র পল্লিতে দুই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। পাশেই ভেঙেচুরে টুকরো হয়ে পড়ে ছিল তাঁদের স্কুটারটি। পুলিশের দাবি, স্কুটারের স্পিডোমিটারের কাঁটা ১২০-তে আটকে ছিল।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বেপরোয়া গতিতে ভিআইপি রোড থেকে রবীন্দ্র পল্লির ভিতরে ঢুকে এসে স্কুটারটি রাস্তার ধারের একটি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারে। চালকের আসনে ছিলেন লক্ষ্মণ। তিনি ছিটকে গিয়ে ওই লাইট পোস্টে আছড়ে পড়লে মাথা প্রায় দু’ভাগ হয়ে যায় তাঁর। পিছনের আসন থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন জিতেনও। যে বাতিস্তম্ভের গায়ে ছিটকে পড়েন লক্ষ্মণ, তার কয়েক হাতের মধ্যেই থাকা আর একটি স্তম্ভে ধাক্কা খান জিতেন। তাঁরও মাথায় চোট লাগে। দু’জনকেই প্রথমে ভিআইপি রোডের ধারে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই লক্ষ্মণকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আর জি কর হাসপাতালে মারা যান জিতেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গতিতে চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটান ওই দুই আরোহী। দুর্ঘটনাস্থলের ধারেকাছে কোথাও কোনও হেলমেট খুঁজে পায়নি পুলিশ। যার প্রেক্ষিতে তাদের অনুমান, চালক ও আরোহীর মাথায় হেলমেট তো ছিলই না, এমনকী তা ঝোলানো ছিল না স্কুটির হ্যান্ডেলেও।
তদন্তকারীরা জানান, একটি কল সেন্টারে একসঙ্গে কাজের সূত্রে লক্ষ্মণ ও জিতেনের পরিচয়। লক্ষ্মণের বাড়ি ওড়িশার রৌরকেল্লায়। জিতেন অসমের বাসিন্দা। কেষ্টপুরের মাঝের পাড়ায় ভাড়া থাকতেন তাঁরা। ওই রাতেও স্কুটিতে চেপে সেখানেই ফিরছিলেন দু’জনে। ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরেই দুই যুবকের পরিবারের লোকেরা আরজিকর হাসপাতালে পৌঁছন।
এ দিন সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, তখনও পড়ে রয়েছে স্কুটারের ভাঙাচোরা অংশ। স্থানীয় বাসিন্দা এবং দোকানদারদের দাবি, এই রাস্তায় গত কয়েক বছরে কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। অপরিসর রাস্তা ধরে সাবধানেই গাড়ি ও বাইক-স্কুটার যাতায়াত করে। এলাকাবাসীরও অনুমান, পুরো নিয়ন্ত্রণ না হারালে এ ভাবে দুর্ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়।
জখম কনস্টেবলের মৃত্যু। কলেজ স্ট্রিটে বেপরোয়া বাস ফুটপাথে উঠে পড়ার ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে মৃত্যু হল জখম পুলিশকর্মীরও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিউটি সেরে ফিরছিলেন তিনি। পুলিশ জানায়, মুচিপাড়া থানার কনস্টেবল সঞ্জয় পাঠকের (২৬) বাড়ি সল্টলেকে। সোমবার সন্ধ্যায় হাওড়া থেকে আসা বাসটি সূর্য সেন স্ট্রিটে বাঁক নেওয়ার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ক্যানিংয়ের যুবক মনিরুল সর্দারের। জখম হন সঞ্জয়-সহ চার জন। বুক-পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সঞ্জয়। ধৃত বাসচালক পাপ্পু শর্মার বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়েছে।