টাকা আদায়ে গ্রেফতার দুই ‘আইপিএস’

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বর্ষবরণের রাতে শেক্সপিয়র সরণির একটি নাইট ক্লাবের সামনে থেকে এক যুবককে ধরা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি নীল বাতিওয়ালা গাড়িতে শাসক দলের পতাকা লাগিয়ে ঘুরছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৪
Share:

ধৃত দুই ভুয়ো আইপিএস জুবের আহমেদ এবং তনভির হোসেন।

নতুন বছরের প্রথম ভোরের আলো ফুটতে তখনও কিছু ক্ষণ বাকি। মোটরবাইকে এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। দূর থেকেই তাঁরা দেখতে পেলেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে দু’টি গাড়ি। তার সামনে একটি লরি। তিন যুবক লরিচালকের উপরে হম্বিতম্বি করছেন। কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে ভেবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান দুই পুলিশকর্মী। কিন্তু সামনে পৌঁছতেই তাঁদের ভুল ভাঙে। তাঁরা দেখেন, তিন যুবক লরিটির নথি পরীক্ষা করছে। এবং তা ঠিক নেই দাবি করে চালকের কাছে টাকা চাইছে। সন্দেহ হওয়ায় দুই পুলিশকর্মী যুবকদের পরিচয় জানতে চান। তা শুনেই যুবকেরা তাঁদের উপরে কার্যত চড়াও হয়ে দাবি করে, তারা ‘অল ইন্ডিয়া অ্যান্টি-করাপশন অর্গানাইজেশন’-এর অফিসার। এক জন আবার আইপিএস অফিসার বলেও দাবি করে। এতে পুলিশকর্মীদের সন্দেহ আরও দৃঢ় হওয়ায় তাঁরা থানায় যোগাযোগ করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশকর্মীরা পৌঁছতেই এলাকা ছেড়ে পালায় একটি গাড়ি। তবে বাকি দু’জনকে অন্য গাড়িটি সমেত ধরে ফেলেন তাঁরা।

Advertisement

ঘটনাটি ঘটেছে ইএম বাইপাসের কাদাপাড়া মোড়ের কাছে, সোমবার ভোরে। নিজেদের সরকারি আধিকারিক দাবি করে বাইপাস দিয়ে চলাচলকারী গাড়ি থেকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই দুই যুবককে। ধৃতদের নাম জুবের আহমেদ এবং তনভির হোসেন। জুবেরের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে, তনভির পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা। ধৃতদের মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশি হেফাজত দেন। পলাতক তৃতীয় যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

এমনই স্টিকার লাগানো ছিল তাঁদের গাড়িতে। নিজস্ব চিত্র।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বর্ষবরণের রাতে শেক্সপিয়র সরণির একটি নাইট ক্লাবের সামনে থেকে এক যুবককে ধরা হয়েছিল। অভিযোগ, তিনি নীল বাতিওয়ালা গাড়িতে শাসক দলের পতাকা লাগিয়ে ঘুরছিলেন।
গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে সাঁটা ছিল ‘মাইনরিটি মোর্চা, ওয়েস্ট বেঙ্গল, ভাইস প্রেসিডেন্ট’। ওই ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ইএম বাইপাসের ঘটনাটি ঘটে। টহলরত দুই পুলিশকর্মীর সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা প্রথমে ওই তিন যুবককে চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তাঁদের সঙ্গে বচসা জুড়ে দেয় তারা। পরে ওই পুলিশকর্মীদের বাধাও দেয়। এর মধ্যেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বাহিনী নিয়ে পৌঁছে যান ফুলবাগান থানার অতিরিক্ত ওসি সুমন নস্কর।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের থেকে বাজেয়াপ্ত হয়েছে লাল রঙের একটি গাড়ি। সেটির উইন্ডস্ক্রিনে লেখা ছিল ‘অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর, ক্রাইম’। সেই সঙ্গে ধৃতেরা প্রথমে দিল্লির আইপিএস অফিসার বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু পুলিশ চেপে ধরতে লালবাজারের অফিসার বলে দাবি করতে থাকে। অথচ তার স্বপক্ষে অভিযুক্তেরা প্রমাণ দিতে না পারায় তাদের ফুলবাগান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে লাগাতার জেরায় দুষ্কর্ম কবুল করে তারা।

তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্ত তিন যুবক বাইপাস দিয়ে চলাচল করা বিভিন্ন গাড়ি থামিয়ে প্রথমে নথি দেখতে চাইত। পরে নানা অজুহাত দেখিয়ে, গাড়ি বাজেয়াপ্ত করার হুমকি দিয়ে চালকদের থেকে টাকা আদায় করত। কেউ টাকা দিতে না চাইলে তাঁকে মারধরও করত ধৃতেরা। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘ধৃতেরা মূলত কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় ভুয়ো পরিচয় দিয়ে দুষ্কর্ম চালাত। শহরের বুকে তা চেষ্টা করা মাত্রই টহলদার পুলিশের নজরে পড়ে গিয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন