বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে আহত দুই

শহরে পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। শনিবার বৌবাজার ও পোস্তার পরে ফের সোমবার বড়বাজারে। একের পর এক বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ায় দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চললেও বাড়ি সংস্কারে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে উভয়েই দায় এড়িয়েই চলেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫৬
Share:

ভেঙে পড়েছে তিনতলার বারান্দা। বড়বাজারে। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শহরে পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। শনিবার বৌবাজার ও পোস্তার পরে ফের সোমবার বড়বাজারে। একের পর এক বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে পড়ায় দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়ে চললেও বাড়ি সংস্কারে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটে উভয়েই দায় এড়িয়েই চলেছেন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ ৩৪এ ব্রেবোর্ন রোডে একটি বাড়ির তিন তলার বারান্দা ভেঙে পড়ে। ওই বাড়িটির দোতলার বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন প্রৌঢ় সুখলাল যাদব ও তাঁর কিশোর পুত্র গণেশ যাদব। বারান্দা ভেঙে সুখলাল ও তাঁর ছেলের উপর পড়ে। দোতলা থেকে পুত্রকে নিয়ে সুখলাল একেবারে একতলায় আছড়ে পড়েন। সুখলাল ও তাঁর ছেলের চিৎকারে ফুটপাথে থাকা বাসিন্দারা ছুটে আসেন। তাঁরাই দু’জনকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। গণেশকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও সুখলাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত শনিবার বৌবাজারের হরিণবাড়ি লেনের একটি দোতলা বাড়ি ও পোস্তার কটন স্ট্রিটে তিনতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়েছিল। ওই দু’টি বাড়ির বাসিন্দারা অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান। দু’টি বাড়িকেই পুরসভার তরফে আগেই বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরা ভেঙে পড়া বাড়ির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলছেন। কলকাতা পুরসভার ডিজি (বিল্ডিং-২) দেবশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাড়িটি একশো বছরেরও বেশি পুরনো। পুরসভার তরফে আগেই বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছে।’’ এ দিন ওই বাড়িটিতে অবশ্য পুরসভার তরফে সাঁটানো কোনও বিপজ্জনক নোটিস চোখে পড়েনি। বাড়িটিতে পুরসভার তরফে কখনও বিপজ্জনক নোটিস টাঙানো হয়নি বলে দাবিও করেন ওই বাড়ির বাসিন্দারা। ডিজি (বিল্ডিং) অবশ্য বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক বা়ড়ির নোটিস দেওয়া হলেও বাসিন্দারা তা সরিয়ে দেন। এ ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।’’

Advertisement

ব্রেবোর্ন রোডের যে বাড়িটির একাংশ ভেঙে পড়েছে তার লাগোয়া কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের সদর দফতরের অফিস। এতটাই ঘিঞ্জি যে দু’টি বিল্ডিংয়ের মধ্যে বিন্দুমাত্র ফাঁকফোকড় নেই। এ দিন ভেঙে পড়া বাড়ি লাগোয়া ৩২ নম্বর ব্রেবোর্ন রোডের ঠিকানায় আর একটি বহুতল বাড়িতে ঢুকে দেখা গেল দোতলা থেকে কার্নিশ বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ‘‘যে ভাবে ওই কার্নিশ ঝুলছে তাতে যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাড়ির মালিক সংস্কারে কর্ণপাতই করছেন না।’’ ওই বাড়িটির পাঁচ জনের নামে মালিকানা রয়েছে। তাঁদেরই এক শরিক কাঞ্চন দত্ত বলেন, ‘‘এখানকার ভাড়াটেরা পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। বাড়ি সংস্কারের কথা বলতে গেলে ওঁরা সব দায় মালিকের উপর চাপিয়ে দেন। অথচ মাসে ভাড়া হিসাবে দেন মাত্র কয়েকশো টাকা। এ ভাবে তো চলতে পারে না?’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন বাড়ি ভাঙার ঘটনায় আহত সুখলাল ব্রেবোর্ন রোডের ফুটপাথে জুতো সেলাইয়ের কাজ করেন। আদতে বিহারের বাসিন্দা সুখলাল দীর্ঘ দিন ধরে রাতে ওই বাড়ির দোতলায় ঘুমোন। তাঁর ছেলে গণেশ দিন কয়েক আগে বিহার থেকে এসেছে। তাঁদের বা়ড়িটি যে অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তা মেনে নিয়ে কাঞ্চনবাবু বলেন, ‘‘ভাড়াটেদের চরম অসহযোগিতার জন্য আমরা কিছু করতে পারছি না।’’ ভাড়াটেদের পাল্টা দাবি, বা়ড়ি সংস্কারের বিষয়ে বাড়ির মালিক কখনও তাঁদের সঙ্গে কথা বলেননি।

কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শহরে পুরনো জীর্ণ বাড়ি ভেঙে নতুন করে বাড়ি তৈরির বিষয়ে পুর আইনে নিয়মকানুন শিথিল করা হলেও বেশির ভাগ বাসিন্দা আগ্রহী নন। মানুষ সচেতন না হলে আইন করেও কাজের কাজ কিছু হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন