অভিযোগ, এ ভাবেই মারা হয়েছে ছাত্রকে। —নিজস্ব চিত্র।
এক ছাত্রের র্যাগিংয়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে দফায় দফায় জবাবদিহি তলব করল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ই-মেল মারফত মোট তিন দফায় তদন্তের খুঁটিনাটি জানতে চেয়েছে ইউজিসি। এমনকী, অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটিতে কত জন সদস্য রয়েছে ও শাস্তি কী হবে, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, ওই ছাত্র আগেই জানিয়েছিলেন, এমন কিছু হয়নি।
নিউ ল’কলেজ হস্টেলের আবাসিক, আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ওই পড়ুয়ার অভিযোগ, গত ৭ ডিসেম্বর হস্টেলের সিনিয়র ক্লাসের পড়ুয়ারা তাঁর উপরে অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছেন। এমনকী, যৌন নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, গোটা ঘটনাটিকে মোবাইলে রেকর্ড করার সময়ে সিনিয়রেরা বুঝতে পেরে যান। তার পরেই মেরে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় এবং একটি ঘরে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ।
এর পরে রাত দুটো নাগাদ ফোনে দাদাকে বিষয়টি জানানোর পরে তিনি ১০০ ডায়ালে ফোন করেন। ভোরে স্থানীয় থানা তাঁকে উদ্ধার করে বলে জানান ওই পড়ুয়া। এর পরে ইউজিসি-র নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান তিনি। তার পরেই তড়িঘড়ি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ করতে বলে ইউজিসি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এর পরেই সক্রিয় হয়ে উঠে ইউজিসি জানতে চায়, র্যাগিং-বিরোধী কমিটিতে কত জন সদস্য রয়েছেন এবং তাঁরা কে? তদন্ত কতটা এগিয়েছে এবং অভিযুক্তদের কী শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা-ও জানতে চেয়েছে ইউজিসি। সাম্প্রতিক কালে কোনও ঘটনায় ইউজিসি এতটা সক্রিয় হয়নি।
মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই র্যাগিং-বিরোধী কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে দেখা যায়, গত ৮ তারিখ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ওই ছাত্র জানিয়েছেন, কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই। ফলে আপাতত বিষয়টিকে লঘু ভাবেই দেখা হচ্ছে বলেই জানান এক কর্তা। ইউজিসি-কে সেটা জানিয়েও দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। তবে ওই ছাত্রের বক্তব্য, সেটা নিতান্তই ভুল করে হয়েছিল। ১১ তারিখ ফের অভিযোগ করা হয়েছে। ইউজিসিকে অভিযোগ করা হয়েছে গত শনিবার।
গত মাসেও একই হস্টেলে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনায় অভিযুক্তেরাই কয়েক জন এই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এ সব অভিযোগ উঠছে বলে দাবি এক পক্ষের। গোলমালকে র্যাগিং বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
তবে সমস্ত কিছুই অস্বীকার করছেন কর্তৃপক্ষ। এক কর্তা বলেন, ‘‘গত সোমবারই একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগের কোনও সত্যতা মেলেনি। ইউজিসি-কে সবই জানানো হবে।’’ উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘৮ ডিসেম্বর থানায় ওই ছাত্র জানিয়েছিলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এখন আবার কেন এ সব উঠছে?’’