বিজ্ঞান সাধনার কেন্দ্রেই নজির চরম অসচেতনতার

যেখানে এত ধরনের গবেষণা হয়, প্রস্তুত হন ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা, সেখানেই মশার চাষ! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাস কিংবা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ— দু’জায়গাতেই একই হাল। যা দেখে তাজ্জব খোদ পুরকর্তারাই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৩
Share:

বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ

যেখানে এত ধরনের গবেষণা হয়, প্রস্তুত হন ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীরা, সেখানেই মশার চাষ! কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ ক্যাম্পাস কিংবা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ— দু’জায়গাতেই একই হাল। যা দেখে তাজ্জব খোদ পুরকর্তারাই!

Advertisement

সোমবার কলকাতা পুরসভার মশা-দমনকারী দল উত্তর কলকাতায় রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে যায়। পুরকর্মীরা দেখেন, ক্যাম্পাসের অনেক জায়গাতেই জল জমে রয়েছে। তাতে বাসা বেঁধেছে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা। এবং পরিস্থিতি এমনই যে, সেখানে উপস্থিত পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেই ফেলেন, ‘‘যেখানে এত বিজ্ঞানী তৈরি হয়, সেখানেই যদি এই হাল হয়, তা হলে বলার কিছু নেই।’’

অতীনবাবু জানান, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টা যে আগেই ভাবা উচিত ছিল, তা মেনে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষও। উপাচার্য আশুতোষ ঘোষ বলেন, ‘‘পুরসভার চিঠি পেয়েছি। সমস্ত ক্যাম্পাসের সচিবদের নির্দেশ দিয়েছি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে। জল জমতে পারে এ রকম কোনও কিছুই যেন ক্যাম্পাসে না থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে বলেছি।’’

Advertisement

গত কয়েক দিনে কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ৭ অগস্ট পর্যন্ত কলকাতা পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ২২৫। পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই মশা মারার কাজ চালাচ্ছে পুরসভার র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স। একইসঙ্গে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের পতঙ্গবিদদের একটি বিশেষ দল শহরের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্কুল এবং কলেজে অভিযান চালাচ্ছেন। এ দিন সকালে ওই বিশেষ দলটি রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে যায়। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, কলেজ চত্বরে যত্রতত্র চায়ের কাপ, বোতল-সহ নানা ধরনের পাত্র পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে জমা জলে মশার লার্ভা। অতীনবাবু জানান, গত ৪ অগস্ট কলকাতা পুর-আইনের ৪৯৬ ধারায় এই কলেজ কতৃর্পক্ষকে নোটিস দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় ফের উপাচার্যকে চিঠি পাঠানো হলো। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘পুর-আইনের এই ধারায় বলা আছে, ব্যবস্থা না নিলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে পুরসভা। আমরা সাত দিন দেখব, তার পরে প্রয়োজনে মামলার পথে হাঁটব।’’

এক দিকে যখন রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশার লার্ভা মিলছে, অন্য ক্যাম্পাসগুলির হাল কেমন? এ দিন রাজাবাজারে পুর-অভিযানের পরে বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের পিছন দিকে যত্রতত্র অজস্র জঞ্জাল ও ভাঙাচোরা আসবাব। সেখানেই পড়ে রয়েছে থার্মোকলের বাক্স, পরিত্যক্ত কমোড, ভাঙা যন্ত্রাংশ, রসায়নবিদ্যার অব্যবহৃত সামগ্রী। তাতে জমে জল। কলকাতা পুরসভা যখন সর্বত্র ডেঙ্গি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এত উদাসীন কেন?

সরকারি সূত্রের খবর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস পরিষ্কার রাখতে ঘটা করে তৈরি হয়েছে ‘ক্লিন ক্যাম্পাস পলিসি’ কমিটি। তাদের কাজ কলেজ চত্বর পরিষ্কার রাখা। কিন্তু ওই কমিটি আদৌ কোনও সুপারিশ করেছে কি না বা তা মানা হয়েছে কি না— তা কেউ জানাতে পারেননি। তবে কাজের কাজ যে কিছু হয়নি, সোমবার পুরসভার অভিযানের পরেই তার প্রমাণ মিলল। এমনকী কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসেও একাধিক জায়গায় পুরনো আসবাবপত্র ডাঁই হয়ে পড়ে। সেখানেও জমা জল। হুঁশ নেই কারও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, প্রাক্তন উপাচার্য সুগত মারজিত ক্যাম্পাসগুলি পরিষ্কার রাখার জন্যে ‘ক্লিন ক্যাম্পাস পলিসি’ কমিটি গড়ে দেন। কমিটির কাজ ছিল মূলত সব ক’টি ক্যাম্পাসের হালহকিকত তুলে ধরে উপাচার্যকে কিছু সুপারিশ দেওয়া। কমিটির এক কর্তা বলেন, ‘‘বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের ব্যাপারে উপাচার্যের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়াই ছিল।’’ নিয়ম অনুযায়ী, এর পরে সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসের সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাস সাফাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি বলেই অভিযোগ।

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় মোটের উপরে পরিষ্কার থাকলেও একাধিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন পাত্রে জল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। অতীনবাবু জানান, স্কুল-কলেজে জল জমে রয়েছে কি না, তা দেখার দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কতৃর্পক্ষের। পুরসভার নয়। এ ক্ষেত্রে পুরসভার টিম স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ওই সব প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন