বিমান সংস্থার কর্মীদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বিমান ছাড়ল আড়াই ঘণ্টা দেরিতে। শুধু তা-ই নয়, সেই বিমান ঘিরে নাটক জমে উঠল সোমবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে।
গল্পের প্রধান চরিত্র একটি পরিত্যক্ত ছোট লাল-কালো ব্যাগ। এমন পরিত্যক্ত ব্যাগ হামেশাই বিমানবন্দরের টার্মিনালের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেই ব্যাগ ঘিরে তৈরি হয় বোমাতঙ্ক। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায় না। এ বার পরিত্যক্ত সেই ব্যাগ পাওয়া গেল বিমানের ভিতরে। এবং এমন একটা সময়ে, যখন যাত্রীদের নিয়ে কলকাতা ছেড়ে রওনা হয়ে গিয়েছে সেই বিমান। ককপিটে বসে পরিত্যক্ত ব্যাগের খবর জানতে পেরে ইন্ডিগোর পাইলট ঝুঁকি নিতে চাননি। বিমানের মুখ ঘুরিয়ে ফিরে আসেন তিনি। টার্মিনালে পড়ে থাকা ব্যাগ থেকেও এ যাবৎ বোমা বা বিস্ফোরক যেমন পাওয়া যায়নি, এ দিনও একই ঘটনা ঘটেছে। সেই ব্যাগ তল্লাশি করে মিলেছে একটি নতুন শার্ট ও একটি মোবাইল। কিন্তু, তার জন্য নাটক হয়েছে বিস্তর। টার্মিনাল থেকে বহু দূরে দাঁড় করানো হয়েছে বিমানকে। সন্তর্পণে যাত্রীদের নামিয়ে আনা হয়েছে। নাটক শেষে, নির্ধারিত সময়ের প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ বিমানটি উড়ে গিয়েছে। ততক্ষণ কলকাতায় আটকে ছিলেন ১৫২ জন যাত্রী।
ঘটনাটি সোমবার বিকেলের। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ইন্ডিগোর ওই বিমানটি এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ রাঁচি থেকে কলকাতায় আসে। রাঁচি থেকে আসা ১২০ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৬ জন কলকাতায় নেমে যান। বিমানটির বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল। ৮৪ জন যাত্রী বেঙ্গালুরু যাবেন বলে বিমানেই বসে থাকেন। আরও ৬৮ জন যাত্রী কলকাতা থেকে ওঠেন। বিকেল সওয়া তিনটে নাগাদ ১৫২ জন যাত্রীকে নিয়ে বিমানটি রওনা হয় বেঙ্গালুরুর দিকে। কিন্তু, বিমান গড়িয়ে রানওয়ে যাওয়ার আগেই বিমানসেবিকারা দেখতে পান, ককপিটের পিছন দিকে যেখানে জল ও খাবার রাখা থাকে, সেখানে একটি ছোট ব্যাগ পড়ে রয়েছে। কাঁধে ঝোলানো যায় এমন কাপড়ের মহিলা-ব্যাগ। তাঁরা সেটি দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে জানতে চান, এটি কোনও যাত্রী ভুল করে ফেলে গিয়েছেন কি না। কিন্তু কেউই সে কথায় সাড়া দেননি।
ততক্ষণে রানওয়ের উপরে চলে গিয়েছে বিমান। মধ্যমগ্রামের দিক থেকে সল্টলেকের দিকে মুখ করে বিমানটির উড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, রানওয়েতে দৌড় শুরু করার আগেই বিষয়টি পাইলটকে জানানো হয়। পাইলট যোগাযোগ করেন কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর সঙ্গে। জানান, তাঁর বিমানে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পড়ে রয়েছে। আরও জানান, তিনি ফিরে আসতে চান। সাধারণত বিমান ফিরে এসে যেখানে দাঁড়ায়, সেখানে এই বিমানকে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দূরে পরিত্যক্ত একটি বে-তে। ছিনতাই হওয়া বিমান বা যে বিমানে বোমা থাকতে পারে বলে সন্দেহ দেখা দেয়, নিরাপত্তার কারণে সে সব বিমানকে এ ভাবে টার্মিনাল থেকে দূরে রাখা হয়। সোমবারেও ইন্ডিগোর ওই বিমানের সঙ্গে সঙ্গেই পরিত্যক্ত বে-তে পৌঁছে যান দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স এবং নিরাপত্তাকর্মীরা।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সামনের গেট দিয়ে বিমান থেকে সন্তর্পণে যাত্রীদের নামিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় টার্মিনালে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর নিয়ে বিমানে ওঠেন বিস্ফোরক বিশারদেরা। কুকুর শুঁকে যাওয়ার পরে দড়ি দিয়ে বেঁধে ব্যাগটি সাবধানে নামিয়ে আনেন সিআইএসএফ জওয়ানেরা। শুরু হয় তল্লাশি। সেই ব্যাগ থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্য সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, কোনও এক ব্যক্তি বিমানসেবিকাকে বলেছিলেন ওই ব্যাগটি রাঁচি থেকে বেঙ্গালুরু পৌঁছে দিতে। রাঁচি থেকে যে বিমানসেবিকারা উঠেছিলেন, তাঁরা ব্যাগটি বিমানে রেখেই নেমে যান কলকাতায়। কিন্তু, কলকাতা থেকে যে বিমানসেবিকারা বেঙ্গালুরু যান, তাঁদের সে কথা জানাতে ভুলে গিয়েছিলেন তাঁরা। তার ফলে কলকাতা থেকে ওঠা বিমানসেবিকারা ওই ব্যাগ দেখে ঘাবড়ে যান।
নাটকের সেই শুরু।