যোদ্ধা: মোপেডে পোস্টার লাগিয়ে এ ভাবেই ঘোরেন শিবুবাবু। নিজস্ব চিত্র
বেপরোয়া গাড়ি ফুটপাতে উঠে পিষে দিয়েছিল পথচারীকে। প্রায় চার দশক আগে চোখের সামনে ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিল বছর বারোর এক কিশোর। সেই ঘটনাই বদলে দিয়েছিল শিবু দাস নামে ওই কিশোরের জীবন। এখন পঞ্চাশ পেরিয়েও শিবুবাবুর নেশা কলকাতা শহরে ‘পথ নিরাপত্তা’-র প্রচার করে বেড়ানো। মোপেডআরোহী এই নাগরিক কলকাতার রাস্তায় কর্মরত পুলিশদের কাছেও চেনা মুখ।
শনিবার টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে দাঁড়িয়ে শিবুবাবু জানালেন, তাঁর পেশা তবলা বাজানো। কিন্তু নেশা শহরে ঘুরে ঘুরে পথ নিরাপত্তা নিয়ে মানুষকে সচেতন করে বে়ড়ানো। মোপেডের চারপাশে লাগানো নানা পোস্টার। শুধু তা-ই নয়, সুযোগ পেলে বিভিন্ন মো়ড়ে পথ নিরাপত্তার পোস্টারও সেঁটে দেন তিনি। শিবুবাবুর কথায়, ‘‘সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ওই দুর্ঘটনা দেখে বুঝেছিলাম, সচেতনতা বাড়ানো দরকার। কিন্তু যুবক বয়সে পকেটের জোর ছিল না। তবলা বাজানোর পাশাপাশি তবলা শেখাই। অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে বছর দশেক আগে প্রচারে নামি।’’
প্রথম দিকে সাইকেলে চেপে প্রচার চালাতেন লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা শিবুবাবু। কয়েক বছর আগে মোপে়ড কেনেন। নানা রকমের চলতি স্লোগানের পাশাপাশি সচেতনতার প্রচারে নিজেও ‘যত গতি/ তত ক্ষতি’, ‘হেলমেট মাথায় যাঁর/ ভগবান সঙ্গে তাঁর’-এর মতো স্লোগান লিখেছেন তিনি। বলছেন, ছোটবেলায় তাঁর দিদিমা মুখে মুখে ছড়া বলতেন। রেডিওয় ‘সব পেয়েছির আসর’-এর ছড়াও অনুপ্রেরণা তাঁর। ‘‘তাই চেষ্টা করে নিজেই এ সব লিখেছি’’— লাজুক মুখে বলছেন শিবুবাবু।
কলকাতার রাস্তায় কর্তব্যরত একাধিক পুলিশ অফিসারও এই প্রচেষ্টার তারিফ করছেন। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প শুরু হওয়ার পরে দুর্ঘটনা কমেছে। তার সঙ্গে এমন নাগরিক উদ্যোগ পথ নিরাপত্তার প্রচার আরও জোরদার করবে।’’ ইতিমধ্যে রিজেন্ট পার্ক-সহ একাধিক ট্র্যাফিক গার্ডের কাছ থেকে শংসাপত্র পেয়েছেন শিবুবাবু।
তবে তিনি এ সবের থেকেও ব়়ড় প্রাপ্তি মনে করেন মানুষের সচেতনতাকে। এক দিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। তখন সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি। এক মহিলা নেমে জানান, তাঁর স্বামী শিবুবাবুর প্রচারে অনুপ্রাণিত হয়ে উদ্দাম গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করেছেন। ‘‘এর চেয়ে বড় পুরস্কার কি কিছু হতে পারে?’’— প্রশ্ন শিবুবাবুর।
তার পরেই ফের মোপেডে স্টার্ট দেন তিনি। টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো এলাকা থেকে সচেতনতার মোপেড ছোটে অন্য কোনও মোড়ে।