বিয়ের সাত মাসের মাথায় মৃত্যু তরুণীর

মেয়ে সুন্দরী এবং বিদূষী হওয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকেই বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। শিক্ষিত ও অবস্থাপন্ন হওয়ায় ওই পরিবারে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি বাবা-মা। কিন্তু, বিয়ের মাত্র সাত মাসের মাথায় সেই মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর এল শ্বশুরবাড়ির পাড়া থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৬
Share:

রিঙ্কু ও সৌম্যদেব কুন্ডুচৌধুরী

মেয়ে সুন্দরী এবং বিদূষী হওয়ায় শ্বশুরবাড়ি থেকেই বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল। শিক্ষিত ও অবস্থাপন্ন হওয়ায় ওই পরিবারে একমাত্র মেয়ের বিয়ে দিতে দ্বিধা করেননি বাবা-মা। কিন্তু, বিয়ের মাত্র সাত মাসের মাথায় সেই মেয়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর এল শ্বশুরবাড়ির পাড়া থেকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে আন্দুলের মহিয়াড়ি রায়বাড়ি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রিঙ্কু কুন্ডুচৌধুরী (২১)। তিনি হাওড়ার দীনবন্ধু কলেজে বিকম তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত ২১ মে রিঙ্কুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মহিয়াড়ির বাসিন্দা সৌম্যদেব কুন্ডুচৌধুরীর। এ দিন সকালে স্থানীয় লোকজন জানতে পারেন, ওই তরুণী গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। অভিযোগ, এর পরেই তাঁরা

রিঙ্কুর শ্বশুরবাড়িতে চড়াও হয়ে শাশুড়ি ও ননদকে মারধর করেন। ভাঙচুর করা হয় ঘরের আসবাব। পরে পুলিশ গিয়ে রিঙ্কুর শাশুড়ি সুমনা কুন্ডুচৌধুরী ও ননদ দিশারী কুন্ডুচৌধুরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। রাতে গ্রেফতার করা হয় সৌম্যদেব ও দিশারীকে।

Advertisement

বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিত্যদিন ওই তরুণীর উপরে অত্যাচার চালাতেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বুধবার রাতেও তাঁকে মারধর করা হয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, রিঙ্কুকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। খুনের পরে তাঁর স্বামী ও শ্বশুর এ দিন সকালে নিশ্চিন্তে কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন রিঙ্কুর এক আত্মীয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, বড়বাজারে ওষুধের পাইকারি ব্যবসা রয়েছে কুন্ডুচৌধুরী পরিবারের। ছেলে সৌম্যদেবের জন্য পাত্রীর খোঁজ করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রিঙ্কুর পরিবারের। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বাদল মালিকের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে ধুমধাম করে বিয়ে হয় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দেবদাস কুন্ডুর ছেলে সৌম্যদেবের। বাদলবাবুদের অভিযোগ, বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই শুরু হয় অশান্তি। এ দিন সকালে এলাকার এক বাসিন্দা ফোন করে রিঙ্কুর পরিবারকে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না দেখতে বলেন। দিন দশেক আগে রিঙ্কুর দুই মামা ও তাঁদের পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছেন বাদলবাবু ও তাঁর স্ত্রী। তাই

ঘটনার খবর পেয়ে এ দিন মহিয়াড়িতে ছুটে আসেন রিঙ্কুর এক আত্মীয় বিটু পাল ও তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা। সুপর্ণা বলেন, ‘‘রিঙ্কুর ঘরে গিয়ে দেখি, দেওয়ালে হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় রয়েছে দেহটি। গলায় ফাঁসের চিহ্ন নেই। এমনকি দড়ির ফাঁস লাগালে অনেক সময়ে জিভ বেরিয়ে আসে। তেমন কিছুও চোখে পড়েনি। আমরা নিশ্চিত, এটা খুন।’’

রিঙ্কুর আর এক আত্মীয় রাজকুমার পাল জানান, বাড়ির একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের খুবই আদরের ছিলেন রিঙ্কু। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার অভিযোগ, সৌম্যদীপের বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরও জানান, চাপা স্বভাবের হওয়ায় বিয়ের পরবর্তী জীবনের অনেক ঘটনাই রিঙ্কু মা-বাবাকে জানাতেন না। পুলিশ জানিয়েছে, মেয়ের মৃত্যু সংবাদ বাদলবাবুদের জানানো না হলেও তাঁদের দ্রুত ফিরতে বলা হয়েছে। তরুণীর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন