ক্লাবের কোনও রেজিস্ট্রেশন নেই। অথচ তারাই পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে স্পষ্ট ভাবে বিধায়ক ও কাউন্সিলরের নামও লেখা রয়েছে। অভিযোগ, ওই পুস্তিকা দেখিয়েই ক্লাবের সদস্যেরা বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা আদায় করতেন। দাবি মতো সেই চাঁদা দিতে অস্বীকার করাতেই কলেজ স্ট্রিটের একটি কাপড়ের দোকানে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন ওই দোকানটির মালিক। রবিবার দুপুরের ওই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। ধৃতের নাম বুবুন। পুলিশ জানায়, আরও দুই অভিযুক্ত এখনও অধরা। তবে কাউকেই রেয়াত করা হবে না।
পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার দুপুরে কলেজ স্ট্রিটের ওই দোকানে আসেন নবীন কুণ্ডু লেনের নব সম্মিলনী স্পোর্টিং ক্লাবের কয়েক জন সদস্য। তার মধ্যে সামনের সারিতে ছিলেন রাজেন সিংহ এবং কানু সাউ নামে দুই যুবক। দোকান-মালিক নিমাই সাহা পুলিশকে অভিযোগে জানিয়েছেন, ৩ এবং ৪ জুন অর্থাৎ শনি ও রবিবার ওই ক্লাবের ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ছিল। তার জন্য গত ২১ মে ক্লাবের সদস্যেরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। নিমাইবাবু তা দিতে অস্বীকার করায় রবিবার ওই যুবকেরা দোকানে চড়াও হন। দোকানের বাইরে থাকা বোর্ড ফেলে দেওয়া হয়।
ভাঙচুর না হলেও এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে কলেজ স্ট্রিটের অন্য দোকানদারদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, যে পুস্তিকা দেখিয়ে ওই ক্লাবের সদস্যেরা টাকা চাইতেন বলে অভিযোগ, সেখানে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার মুখ্য অতিথি হিসেবে স্থানীয় বিধায়ক স্মিতা বক্সী এবং মুখ্য উপদেষ্টা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপ্না দাসের নাম লেখা ছিল।
আরও পড়ুন: এগিয়ে আসেনি কেউ, তিন ঘণ্টা পথে পড়ে মৃত্যু বৃদ্ধের
দোকান মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই অঞ্চলে এমন নামে রেজিস্ট্রিকৃত কোনও ক্লাবই নেই। এমনকী, বিধায়ক এবং কাউন্সিলরকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখেই তাঁদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতার অলিতে-গলিতে এমন বহু ক্লাব রয়েছে যাদের কোনও রেজিস্ট্রেশনই নেই। এই ঘটনায় তা প্রকাশ্যে এল।’’ কিন্তু ভুয়ো ক্লাব এবং জনপ্রতিনিধিদের না জানিয়ে পুস্তিকায় তাঁদের নাম লেখা হলে তো পদক্ষেপ করতে পারে পুলিশ? ওই কর্তা জানান, তাঁদের কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ না আসায় তাঁরা কোনও পদক্ষেপও করতে পারেন না।
সোমবার নবীন কুণ্ডু লেনে গিয়ে দেখা গেল, ক্লাবের নাম করে পোস্টার লাগানো থাকলেও সেখানে ক্লাবই নেই। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই নামে এখানে কোনও ক্লাব নেই। তবে কয়েক জন মিলে এই ক্লাবের নাম করে খেলা চালায়। চাঁদাও তোলে।’’ ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ কাউন্সিলর স্বপ্নাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আমার নাম যে লেখা হয়েছে, সেটাই তো জানি না! এ ধরনের অন্যায় কাজ আমি বরদাস্ত করি না। দোষীদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া প্রয়োজন।’’ বিধায়ক স্মিতা বক্সী বলেন, ‘‘আমি এ রকম কোনও ক্লাবের নাম জানি না। আমার নাম কোথায় রাখা হয়েছে, তা-ও জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ ওই পুস্তিকায় ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি হিসেবে লেখা রয়েছে রোহিত দাস নামে এক জনের নাম। ফোন করা হলে রোহিতবাবু বলেন, ‘‘আমার নাম কে রেখেছে, কেনই বা রেখেছে, জানি না। ওই ক্লাবের নামই শুনিনি।’’