Dengue

ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যু ঘিরে উত্তাল মহেশতলা

পাহাড়পুর রোডের পাশে দীনু মিস্ত্রি বাগান এলাকার বাসিন্দা রবি পাল (৫২) দিন সাতেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোমিনপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:১০
Share:

রবি পাল। নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে ফুঁসছিলই শহর। এ বার আগুনও জ্বলল।

Advertisement

এক বাসিন্দার মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শনিবার চাঞ্চল্য ছড়ায় মহেশতলা পুর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে। দু’-তিন দফায় কমবেশি আড়াই ঘণ্টা ধরে পথ অবরোধ চলে স্থানীয় পাহাড়পুর রোডের ফতেপুরে। এলাকায় জমে থাকা জল সরানো, নিকাশি নালাগুলির নিয়মিত সাফাইয়ের দাবি তুলে রাস্তায় দাঁড়ানো পুরসভার একটি আবর্জনা বোঝাই কন্টেনারে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে লাঠিচার্জও করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, পাহাড়পুর রোডের পাশে দীনু মিস্ত্রি বাগান এলাকার বাসিন্দা রবি পাল (৫২) দিন সাতেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোমিনপুরের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। এ দিন ভোর তিনটে নাগাদ সেখানে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবাবুর মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পাড়ার লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, মহেশতলা পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দীনু মিস্ত্রি বাগানের বহু বাসিন্দাই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। একাধিক বার এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার দাবি জানানো সত্ত্বেও কাউন্সিলর বা পুর কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেননি। রবিবাবুর মৃত্যুকে সামনে রেখে এলাকার বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ পাহাড়পুর রোডে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। রাস্তায় বেসরকারি বাস, গাড়ি, ট্যাক্সি থামিয়ে দেন তাঁরা। সঙ্গে চলে পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অশ্রাব্য গালিগালাজ। টানা অতক্ষণ গোলমাল চলায় যানচলাচল ব্যাহত হয় ওই অঞ্চলে। অবরোধ তুলতে পাঠানো হয় গার্ডেনরিচ থানার পুলিশকে। তাদের সাহায্য করতে যায় লাগোয়া রবীন্দ্রনগর থানার বাহিনীও। তবে তাতেও অশান্তি থামেনি। পুলিশ জানায়, কলকাতা ও মহেশতলা পুরসভার অফিসারদের কাছ থেকে দাবি মেটানোর আশ্বাস পেলে অবশেষে ওঠে অবরোধ।

Advertisement

বেহাল নিকাশি: বৃষ্টি নেই। তবু এলাকায় এমন ভাবেই জমে রয়েছে জল।

এ দিন সকালে দীনু মিস্ত্রি বাগানে রবিবাবুদের পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, রবীন্দ্রনগর থানার অফিসার ও কর্মীদের সঙ্গে পাড়ার লোকজনের বচসা চলছে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তাঁদের পাড়াতেই ২৫ জনের বেশি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। মৃত রবিবাবুর বহু পড়শিই এখনও ডেঙ্গির সঙ্গে লড়াই করছেন জোকা, মোমিনপুর এবং তারাতলার বিভিন্ন নার্সিংহোমে। অনেক টাকা দেনা করে তাঁদের পরিবারের লোকজন তাঁদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আতঙ্ক তবু পিছু ছাড়ছে না।

রবিবাবুর মেয়ে দীপ্তি বলেন, ‘‘বাবা সাত দিন নার্সিংহোমে ছিলেন। ভোরবেলা খবর এল বাবা আর নেই।’’ দীপ্তির অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির পিছনেই খোলা, দুর্গন্ধময় নর্দমা রয়েছে। একাধিক বার পাড়ার লোকজন ওই নর্দমা সাফ করার জন্য স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুরসভার চেয়ারম্যানকে জানিয়েছিলেন। তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি।

স্থানীয়েরা আরও জানান, দীনু মিস্ত্রি বাগান এলাকায় যে কচুরিপানা ভর্তি বড় জলাশয়টি রয়েছে, সেটি পরিষ্কার করার জন্যও পুর কর্তৃপক্ষকে বহু বার বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। তাঁদের এলাকা নিচু। ওই পুকুর সাফ না হওয়ায় সামান্য বর্ষায় তাঁদের এলাকায় জল জমে যায়। ফলে বর্ষার অনেক পরেও তাঁদের এলাকার বহু জায়গায় জল জমে থাকে। পুরসভার সাফাই কর্মীরা নিয়মিত আবর্জনা সরান না বলেও তাঁদের অভিযোগ।

রবি পালের মৃত্যুর খবর ছড়াতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় পুরসভার জঞ্জাল ভর্তি কন্টেনারে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

এ দিন বিক্ষোভ, অবরোধ শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেক পরে ওই পাড়ায় মশা তাড়ানোর ধোঁয়া-কামান নিয়ে যান পুরকর্মীরা। মহেশতলা পুরসভার অন্য কিছু কর্মী ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে শুরু করেন। তাঁদের কয়েক জন দাবি করেন, ডেঙ্গি বা অজানা জ্বরের প্রকোপ বাড়তেই ব্লিচিং ও মশা তাড়ানোর ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এখনও পর্যন্ত মহেশতলা পুরসভা এলাকায় ১৫০ জন ডেঙ্গি বা ভাইরাল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাঁরা জানান।

মহেশতলা পুরসভার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ নিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতেই মৃত্যু হয়েছে এমন কথা ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা রয়েছে বলে এখনও শুনিনি। তবে কী কী কারণে পুরসভা ও জেলায় জ্বর হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভাগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন