Shubhanshu Shukla

অজ গাঁয়ে মহাকাশ জয়ের খিদে উস্কেই ধন্য শুভাংশু

অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের অন্যতম নভশ্চর হিসেবে গত জুনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে দিন ২০ কাটানোর পরে এই প্রথম পূর্ব ভারত তথা কলকাতায় এলেন বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু। আইসিএসপি-তে শুভাংশু শুক্ল প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন হল এ দিন।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৩
Share:

প্রেরণা: শহরে মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্ল। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

গুটিগুটি পায়ে এগোনো, সপ্রতিভ ক্লাস থ্রি-কন্যের প্রশ্নটা শুনে হেসে ফেললেন শুভাংশু শুক্ল। তাঁর সঙ্গে হাসল গোটা প্রেক্ষাগৃহ। খুদে মেয়ে সমৃদ্ধি হালদারের প্রশ্ন, আমি নভশ্চর হতে চাই, কিন্তু মা-বাবাকে রাজি করাব কী করে?

বুধবার বিকেলে ই এম বাইপাসের ধারে, ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজ়িক্সে (আইসিএসপি) এই জবাব দিতে ছোট্ট মেয়ের অভিভাবকদের খুঁজলেন মহাকাশজয়ী ভারতসন্তান। সমৃদ্ধির মা আসানসোলের বি বি কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষিকা অম্বালিকা বিশ্বাস। বললেন, মনকে যে বোঝাতে পারি না! আপনার অভিযানের সময়েও ভাবতাম, আপনার মা কী করে সহ্য করছেন!’’ শুনে শুভাংশু সকৌতুকে অম্বালিকার মেয়েকে বললেন, ‘‘তোমার মাকে আমি আমার মায়ের ফোন নম্বরটা দিচ্ছি। মা-ই ওঁকে বোঝাবে!’’ এর পরেই হলঘর ঠাসা নানা বয়সের ছোটরা, তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবকদের উদ্দেশে আকাশজয়ী বীরের আশ্বাস, ‘‘সব ছোটরা স্বপ্ন দেখে। আমি আমার মাকে ছোটবেলায় বলিনি, মহাকাশে যেতে চাই। কিন্তু ছোটদের স্বপ্নগুলো সফল করতে ছোট, বড় সবার তালিম দরকার।’’

অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশনের অন্যতম নভশ্চর হিসেবে গত জুনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে দিন ২০ কাটানোর পরে এই প্রথম পূর্ব ভারত তথা কলকাতায় এলেন বিমানবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু। আইসিএসপি-তে শুভাংশু শুক্ল প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন হল এ দিন।

মহাকাশে তাঁর কাঁধে আটকানো ছিল তেরঙা পতাকা। প্রতি মুহূর্তে দেশবাসীর ভালবাসা তাঁকে ছুঁয়ে থাকার কথা বলেছেন ইসরোর প্রতিনিধি। কিন্তু এ দিন কলকাতাকে শুভাংশু বলেছেন, আর এক অভূতপূর্ব অনুভবের কথা। ‘‘পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে সারা ক্ষণ আমাদের গ্রহটার অনেকটা একসঙ্গে দেখতে পারছিলাম! দিনে ১৬ বার সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত দেখেছি। কিন্তু একঘেয়ে লাগেনি’’। তাঁর কথায়, ‘‘এই প্রথম মনে হল, আলাদা করে কোনও শহর বা দেশ নয়, আস্ত পৃথিবীটাই আমার পরিচয়। মহাকাশে গেলেই এটা বোঝা যাবে।’’ মহাকাশচারীরা এ হেন সমগ্রতার অনুভবকেই ‘ওভারভিউ ইফেক্ট’ বলেছেন।

দেশের নানা শহরে ঘুরে মহাকাশে মাইক্রোগ্র্যাভিটির পরিসরে মানিয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন শুভাংশু। এ দিনও মহাকাশে তাঁদের পাখির পালকের মতো ভেসে থাকা বা ক্ষণকালের জন্য লম্বা হওয়ার গল্প শুনে, ভিডিয়ো দেখে অতিথিরা হেসে কুটিপাটি। কিন্তু দেশের জন্য শুভাংশুর এই মহাকাশযাপনের গভীরতর তাৎপর্যও চাপা থাকেনি। আইসিএসপি-র ডিরেক্টর সন্দীপকুমার চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘রাকেশ শর্মার মহাকাশ জয়ের ৪১ বছর বাদে এ বিষয়ে ভারতের ধারণা ও প্রস্তুতি অনেকটাই পোক্ত।’’

শুভাংশুও বললেন, ‘‘২০৪৭-এর বিকশিত ভারতের লক্ষ্যে মহাকাশজয়ও রয়েছে। হয়তো ১৫-২০ বছরেই আরও এগোব।’’ পাঁচ দশক আগে তাঁর ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবিতে মানুষের চন্দ্রাভিযান না ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিরোধ— কোনটা বড়, সেই প্রশ্ন তুলে খানিক বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। এ দিন মহাকাশযাত্রার তাগিদ বোঝাতে জাতীয় গরিমা, মহাকাশ অর্থনীতি ইত্যাদির কথা বলেন নাসার আধিকারিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। চন্দ্রযান প্রকল্পে যুক্ত ইসরোর প্রাক্তন প্রকল্প-অধিকর্তা সুভাষচন্দ্র চক্রবর্তীও মহাকাশে জ্ঞান উৎকর্ষ চর্চার গুরুত্ব নিয়ে বলছিলেন। সন্দীপ বললেন, ‘‘পৃথিবীর যত্নের পরোয়া না-করে মহাকাশ নিয়ে নিছক বাণিজ্য মেনে নেওয়া যায় না।’’

এ সব কচকচিতে ঢোকেননি সদ্য মহাকাশের ধুলো মেখে ফিরে আসা শুভাংশু। তাঁর মনে পড়ল, মহাকাশ থেকে ভারতে কথা বলার সময়ে উত্তর-পুবের অজগাঁয়ের একটি ছোট ছেলে প্রশ্ন করেছিল, সে কী ভাবে নভশ্চর হবে! শুভাংশুর মতে, ‘‘জনে জনে এই খিদে উস্কে দিতে পারাটাই মহাকাশচর্চার সার্থকতা। তুমি পারো, আমিও পারি। এই বোধটাই আসল।’’

মেয়েরা কি মহাকাশে উড়ানে পিছিয়ে? এমন একটি প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেন, ‘‘স্পেসসুট গায়ে চাপালে কে মেয়ে, কে পুরুষ প্রশ্নটাই অবান্তর।’’ শুভাংশুদের অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ৭০০ দিন মহাকাশে কাটিয়ে ফেলা পেগি হুইটসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন