vehicle

Pollution: দূষণহীন যান চলাচল শুধুই সীমাবদ্ধ থাকবে ঘোষণায়?

কেন্দ্রেরই তথ্য বলছে, দেশে নথিভুক্ত প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি যানবাহনের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানের সংখ্যা মাত্র সাড়ে আট লক্ষ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুধুই ‘কথার কথা’? অথবা ‘সুদূর’ পরিকল্পনা?—যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই!

Advertisement

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের এ বারের বাজেট বক্তৃতায় দূষণমুক্ত জ্বালানি-নীতি (জ়িরো ফসিল ফুয়েল পলিসি) এবং ইলেক্ট্রিক ভেহিকল (ইভি) বা বৈদ্যুতিক গাড়ির উল্লেখকে এ ভাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তথ্য এবং পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা জানাচ্ছেন, ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা এই দুই নীতির বাস্তবায়নের থেকে কতটা দূরে বাস্তব পরিস্থিতি। কারণ কেন্দ্রেরই তথ্য বলছে, দেশে নথিভুক্ত প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি যানবাহনের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানের সংখ্যা মাত্র সাড়ে আট লক্ষ। ফলে এই পরিস্থিতির নিরিখে সামগ্রিক যান চলাচল ব্যবস্থায় দূষণমুক্ত জ্বালানি নীতির প্রণয়ন এবং বৈদ্যুতিক যানের ‘স্বপ্ন’র বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন থাকছে।

যে প্রশ্নের বৃত্তে চলে এসেছে কলকাতা, হাওড়া-সহ পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও। কেন্দ্রের তথ্য জানাচ্ছে, রাজ্যে নথিভুক্ত ১ কোটি ৩৬ লক্ষ যানবাহনের মধ্যে বৈদ্যুতিক যানের সংখ্যা মাত্র ৪৩,৪৩২। শতকরা হার ০.৩১! এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যতই ডিজ়েলচালিত গাড়ির ধোঁয়া নিঃসরণকে ‘ক্লাস ওয়ান কার্সিনোজেন্স’ বা ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করুক না কেন, রাজ্য পরিবহণ দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কলকাতা ও হাওড়ায় ডিজ়েলচালিত গাড়ির সংখ্যা ২,৮২,৯৮৬। যার মধ্যে ১৫ বছর বা তারও বেশি পুরনো ডিজ়েলচালিত যানের সংখ্যা ৫৪,৩৭৩।

Advertisement

১০-১৫ বছরের পুরনো ডিজ়েলচালিত যানের সংখ্যা ৫৮,৮৭৭। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড এবং ভাসমান ধূলিকণা থেকে যে পরিমাণ মোট বায়ুদূষণ ছড়ায়, তার নেপথ্যে রয়েছে যথাক্রমে ৪৫ শতাংশ এবং ৩২ শতাংশ ডিজ়েলচালিত বাস এবং অন্য গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া।’’

আবার এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের অতীতের সমীক্ষা দেখিয়েছে, কী ভাবে কলকাতার বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) ৫০ শতাংশের কারণই হল যানদূষণ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সমীক্ষা জানাচ্ছে, যান-দূষণের কারণে কলকাতার বাতাসে প্রতিদিন মিশছে ৪.৬ মেট্রিক টন ভাসমান কণা (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) এবং ৪৪.৩ মেট্রিক টন নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড।

রাজ্য পরিবেশ দফতরের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ মেয়াদে যে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ করা হয়েছে, সেখানে দু’চাকা, তিন চাকা এবং বাসের মতো যানকে ব্যাটারিচালিত করার কথা বলা হয়েছে। গণপরিবহণকেও বৈদ্যুতিক যানের সঙ্গে যোগ করার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, জনবহুল এলাকায় যেখানে বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করে, সেই এলাকাগুলি আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে ধোঁয়া নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘ধোঁয়া-দূষণের লক্ষ্যমাত্রা শূন্য করা হয়েছে। তার জন্য ব্যাটারিচালিত এবং বৈদ্যুতিক যানের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’

প্রশাসনিক সূত্র বলছে, বছর তিনেক আগে জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিয়েই ওই ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছিল। সেই মতো প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ধোঁয়া-দূষণের বিরাম নেই, বলছেন অনেকে। প্রতিদিন শহরের বাতাস হয়ে উঠছে আরও দূষিত। আর এই পরিস্থিতিতেই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বিকল্প পরিবেশবান্ধব জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক যানে উত্তরণের প্রসঙ্গটি।

কিন্তু রাজ্য পরিবহণ দফতরের পরিসংখ্যানই জানাচ্ছে, কলকাতা ও হাওড়ায় বিকল্প জ্বালানিচালিত (ইলেকট্রিক ভেহিকল, সিএনজি, এলপিজি-সহ অন্যান্য) যানের সংখ্যা মাত্র ২১,৮৩৫, যা নথিভুক্ত মোট যানবাহনের মাত্র ০.৯%! যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘ঘোষণায় অনেক কিছু সম্ভব হলেও বাস্তবে যে নয়, তা স্পষ্ট দূষণমুক্ত ও বৈদ্যুতিক যানের পরিসংখ্যানেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন