প্রেমিকদের মান রাখতে সঙ্গী হবে সরকারি গোলাপ

ভুবন জুড়ে পাতা প্রেমের ফাঁদে পা দিতে এ বার আহ্বান জানাচ্ছে সরকারও! ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মরসুমে প্রেমিকার হাতে অন্তত একটা লাল গোলাপ ধরানো ইতিমধ্যেই প্রায় রীতি।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:১১
Share:

ভুবন জুড়ে পাতা প্রেমের ফাঁদে পা দিতে এ বার আহ্বান জানাচ্ছে সরকারও!

Advertisement

‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মরসুমে প্রেমিকার হাতে অন্তত একটা লাল গোলাপ ধরানো ইতিমধ্যেই প্রায় রীতি। এমন দিনে প্রেমিকদের মান রাখতে সঙ্গী হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও। সরকারি উদ্যোগেই প্রেম দিবসে শহর জুড়ে বিভিন্ন কলেজ, বিনোদন পার্ক, শপিং মলের সামনে গোলাপের ডালি সাজিয়ে হাজির হবে গাড়ি। বাজার চলতি মূল্যের চেয়ে কিছুটা কমেই মিলবে সেই সরকারি গোলাপ।

শহরের পথে পথে গোলাপ বিক্রির এই প্রকল্পের জন্য সরকারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন উন্নয়ন নিগম হাত মিলিয়েছে কলকাতার বহু পুরনো গ্লোব নার্সারির সঙ্গে। যে সব জায়গায় তরুণ-তরুণীদের জমায়েত বেশি হয়, ফুলের সম্ভার নিয়ে তেমন এলাকায় পৌঁছে যাবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিগম ও গ্লোব নার্সারির যৌথ প্রকল্পের গাড়ি। মঙ্গলবার সল্টলেকের সিটি সেন্টার, নিক্কো পার্ক, নিউ টাউনের ইকো পার্ক, কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, নন্দন চত্বরের মতো এলাকায় মিনিপল, ডাচ গোলাপ, লিলি, অর্কিড, হ্যালিকোনিয়ার মতো বিভিন্ন ফুলের সম্ভার মিলবে।

Advertisement

তবে কি সময়ের সঙ্গে স্রোতে ভেসে প্রেম-ব্যবসায় নাম লেখাল সরকারও?

প্রেম দিবস উদ্‌যাপনের কথা অবশ্য ফুলের গাড়িগুলিতে লেখা থাকবে না। শুধুই যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে ফুল বিক্রির বিষয়টি উল্লেখ করা থাকবে গাড়ির গায়ে। নিগমের আধিকারিকেরা জানান, সরকার প্রেম দিবস কিংবা ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মতো কিছু পালনে সরাসরি যুক্ত হতে পারে না। তবে রাজ্যকে যখন বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়, তখন ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মতো একটি দিনে ফুলচাষিদের ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে একটা বার্তা দেওয়া চেষ্টা তো করাই যায়।

আরও পড়ুন।

মদের ঝগড়ায় বন্ধুকে খুন ২ কিশোরের

চাষিদের কথা মাথায় রেখেই তবে প্রেম-বাণিজ্যে নামছে সরকার?

রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যান পালন উন্নয়ন নিগমের মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেন, ‘‘ওই দিনটিতে গোলাপ ফুলের ব্যাপক চাহিদা থাকে। ফড়েদের মাধ্যমে কম দামে কেনা ফুল বাজারে এসে চড়া দামে বিক্রি হয়। কিন্তু চাষিরা লাভের মুখ দেখেন না।’’ নিগমের নির্দেশ মেনে চাষিদের থেকে সরাসরি ওই দিন ফুল কিনবে গ্লোব নার্সারি। মন্ত্রীর দাবি, চাষিকে উপযুক্ত দাম দেওয়াই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য। আর চাষিদের থেকে সরাসরি ফুল পেলে তা এমনিই বাজারের থেকে কিছুটা কম দামে দেওয়া সম্ভব হবে। যেমন এক-একটি ডাচ গোলাপের দাম যদি সে দিন বাজারে ২৫ টাকা হয়, তবে সরকারি গাড়িতে তা অন্তত ২০ টাকায় মিলবে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। গ্লোব নার্সারির কর্তা অনাথবন্ধু কর্মকার জানান, সব ফুলই বাজারের চেয়ে ১০-২০% কম দামে পাওয়া যাবে।

তবে নিগমের আধিকারিকেরা জানান, ওই দিন প্রায় পাঁচ লক্ষ গোলাপের চাহিদা থাকে। অতটা চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা সরকারের নেই। প্রথম বছরের এই উদ্যোগ সফল হলে পরবর্তী কালে ফুলের জোগান বাড়ানোর চেষ্টা করবে সরকার।

অর্থাৎ, প্রেমের দিনে ভালবাসা বিকিকিনির মুনাফায় ভাগ বসানোর বাণিজ্যে ধীরে ধীরে হাত পাকাবে সরকার। তাতে অবশ্য একেবারেই কোনও ভুল দেখেন না কবি শ্রীজাত। বরং তিনি বলেন, ‘‘মারামারি তো করছে না, গোলাপ বিক্রির মাধ্যমে ভালবাসার দিনটাকেই তো তুলে ধরছে সরকার। এতে ক্ষতি কী?’’ বিপণন বিশেষজ্ঞ রাম রায় আবার এতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিশেষ দেখতে পাচ্ছেন না। তবে উদ্যোগটাকে ভাল বলেই মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুনাফা তেমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। এ ক্ষেত্রে সরকারের সামাজিক ভাবনাটাই প্রশংসার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন